ফাইল চিত্র
রাশিয়া, না চিন! কে আগে করোনার প্রতিষেধক আনবে, গত কাল পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় সব সংবাদমাধ্যমেই প্রশ্নটা ঘোরাফেরা করছিল। টিকা তৈরির সেই দৌড়ে আজ অন্তত একটা ল্যাপ এগিয়ে গেল রাশিয়াই। বাজারে আসছে ‘স্পুটনিক-ভি’। এই ঘোষণা করতে গিয়ে রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রক আজ তাদের তৈরি করোনা-ভ্যাকসিনকে জনসাধারণের উপর প্রয়োগের ছাড়পত্র দিল। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন জানালেন, শীঘ্রই দেশের প্রান্তে-প্রান্তে পৌঁছে যাবে স্পুটনিক-ভি। কয়েক মাসের মধ্যেই বেশির ভাগ শহরবাসী পেয়ে যাবেন করোনা-টিকা। এক বছর ধরে চলবে গণ-টিকাকরণ।
এ দিকে পিছু হটতে নারাজ চিনও। বেজিংয়ের যে বাণিজ্যমেলায় চিনা টিকার ‘ভায়াল প্রদর্শনী’ চলছে, সেখান থেকেই আজ চার ডাক্তারকে স্বর্ণপদকে সম্মানিত করে চিনা প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং দাবি করলেন, একমাত্র তাঁর দেশই করোনা অতিমারির দাপট সাফল্যের সঙ্গে রুখে দিয়েছে। করোনা হানায় বিশ্ব অর্থনীতিতে ভাঙন ধরেছে। অবিশ্বাস্য দ্রুত পদক্ষেপ করে সেই ক্ষতও চিন মেরামত করে ফেলেছে বলে দাবি করলেন চিনফিং। রাশিয়ার পাল্টা চিন একসঙ্গে তিনটি ভ্যাকসিন আনতে পারে বলেও সূত্রের খবর।
মস্কো যদিও তাদের ‘স্পুটনিক মুহূর্তেই’ বাজিমাত করতে চাইছে। গত ১১ অগস্ট রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা করেন, করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেলেছেন তাঁরা। নিজের মেয়েকে পরীক্ষামূলক ভাবে ওই টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে ওই দিন সরকারি ছাড়পত্রও দিয়ে দেন পুতিন। কিন্তু তখনও তো তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালই শুরু হয়নি রুশ টিকার! ‘তাড়াহুড়োর ভ্যাকসিন’-কে নিয়ে বিশ্ব জুড়ে সমালোচনা শুরু হয়।
ঠিক চার দিন আগে স্পুটনিক-ভি-র প্রথম দফার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল নিয়ে ইতিবাচক রিপোর্ট দিয়েছিল ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল। আজ মস্কো জানাল, তাদের তৈরি ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল রিপোর্টও ভাল। টিকার ডোজ়ে কোনও রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই তৈরি হচ্ছে অ্যান্টিবডি ও টি-সেল। কোয়ালিটি টেস্টেও পাশ করে গিয়েছে স্পুটনিক-ভি। তাই টিকাকরণে আর বাধা নেই। রুশ বিজ্ঞানীদের দাবি, গ্যামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট তাদের দীর্ঘদিনের গবেষণালব্ধ অভিজ্ঞতা থেকেই রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সঙ্গে যৌথ ভাবে এই প্রতিষেধক তৈরি করেছে। তাই এই টিকার নিরাপত্তা নিয়ে সন্দেহের কোনও কারণ নেই বলেই দাবি তাঁদের।
নভেম্বরে ভোটের কথা মাথায় রেখে বিরোধী তথা দেশের একাংশের যাবতীয় আপত্তি উড়িয়ে এ দিকে মডার্নার টিকা আনার ব্যাপারে তদ্বির করে চলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। তাঁর ইঙ্গিত, অক্টোবরের মধ্যেই করোনা-টিকায় ছাড়পত্র দিতে চলেছেন তিনি। কাল এক সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘‘এমনিতে দু’-তিন বছর সময় লাগতে পারত। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে খুব অল্প সময়ই বিজ্ঞানীরা এই অসাধ্যসাধন করে দেখিয়েছে।’’ যদিও মার্কিন বিজ্ঞানীদেরই একাংশ এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, ভোটের কথা মাথায় রেখে যে ভাবে তড়িঘড়ি টিকা আনার কথা বলা হচ্ছে, মানুষ তা বুঝতে পারলে, টিকা নিতে অস্বীকারও করতে পারেন। মার্কিন করোনা-টিকার যাবতীয় ট্রায়াল-রিপোর্টের স্বচ্ছতা দাবি করেছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। এমতাবস্থায় আজই টিকা তৈরিতে নিরাপত্তা এবং মানের সঙ্গে আপস না-করার ব্যাপারে শপথ গ্রহণ করেছে আমেরিকা ও ইউরোপের প্রথম সারির ন’টি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী সংস্থা।
বিশ্বে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আজ ২ কোটি ৭৫ লক্ষের গণ্ডি টপকেছে। মৃতের সংখ্যা ন’লক্ষ ছুঁইছুঁই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস কালই বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে বলেন, ‘‘আগামী দিনে এমন কোনও অতিমারি এলে আমাদের আরও বেশি প্রস্তুত থাকতে হবে।’’ জনস্বাস্থ্য খাতে সব দেশেরেই বরাদ্দ আরও বাড়ানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy