চিনের ফুজিয়ান প্রদেশে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধারকাজ চলছে। এএফপি
তিন মাসে মৃতের সংখ্যা তিন হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়ে গিয়েছে চিনে। হাসপাতাল উপচে যাচ্ছে রোগীতে। পরিস্থিতি সামলাতে ‘আপৎকালীন হাসপাতাল’ তৈরি করা হয়েছে। যেমন ফুজিয়ান প্রদেশে একটি হোটেলকে ‘কোয়ারেন্টাইন সেন্টার’ করা হয়েছিল। ৮০ ঘরের পাঁচতলা সেই হোটেলটি ভেঙে পড়ল শনিবার। ২৩ জনকে উদ্ধার করা গিয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এখনও ৭০ জন আটকে রয়েছেন ধ্বংসস্তূপে। বেশির ভাগই ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন সন্দেহে নজরবন্দি ছিলেন।
গত ডিসেম্বরে প্রথম ধরা পড়ে রোগটি। সেই থেকে চিনে স্বাভাবিক জীবন থমকে। মানুষজন হয় বন্দি, নয়তো হাসপাতালে। দিনরাত এক করে সেখানে পড়ে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো ছড়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায়। একটি শিশু হাসপাতালে তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছে। তিনি নার্স। ভাইরাস থেকে বাঁচতে বিশেষ পোশাক পরা মহিলার চোখ দু’টোই শুধু ভাল করে দেখা যাচ্ছে। মাকে অনেক দিন বাদে দেখে কেঁদেই চলেছে বাচ্চাটি। কিন্তু কাছে যাওয়া বারণ। জড়িয়ে ধরা বারণ। দূর থেকে হাত নেড়ে মা বলছেন, তিনি এখন ‘যুদ্ধক্ষেত্রে’। পরিস্থিতি ঠিক হলেই বাড়ি ফিরবেন। অবুঝ শিশু মন তা মানতে নারাজ।
তিন মাস টানা লড়াইয়ে ক্লান্ত চিকিৎসকেরা। রোগীর সেবা করতে গিয়ে ভাইরাস-আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক জন স্বাস্থ্যকর্মী। প্রথম যে চিকিৎসক বিপজ্জনক ভাইরাসটির খবর দিয়েছিলেন, মারা গিয়েছেন তিনিও। এরই মধ্যে নারী দিবসে চিনের মহিলা স্বাস্থ্যকর্মীরা সরব হয়েছেন। যুদ্ধক্ষেত্রে তাঁরা প্রথম সারিতে থেকে লড়ছেন, অথচ তাঁদের কথা ভাবছে না সরকার। মহিলা নার্স, চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, দিনের পর দিন তাঁরা হাসপাতালে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশ মেনে চুল ছোট করে কেটে ফেলতে হয়েছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেতে হচ্ছে। ওষুধ খেয়ে বন্ধ রাখতে হয়েছে ঋতুস্রাব। আইসোলেশন স্যুট পরা অবস্থায় এমনিতেই কিছু খাওয়া যায় না। জল তেষ্টা পেলেও ধরাচুড়ো ছেড়ে জল খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় বারবার শৌচাগারে যাওয়া এক প্রকার অসম্ভব। কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আশার আলো এই যে, চিনে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা কিছুটা হলেও কমেছে। শুক্রবার মারা গিয়েছেন ২৮ জন। কয়েক সপ্তাহ আগেও দিনে ১৫০-২০০ জন করে মারা যাচ্ছিলেন।
চিন ছাড়িয়ে মারণ ভাইরাস ছড়িয়েছে ৯৭টি দেশে। বিশ্ব জুড়ে আক্রান্ত এক লাখেরও বেশি। ইটালিতে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। আজ ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২৩৩। আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৬০০০। চিনের পরে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ইটালিতেই। এবং সংক্রমণের সংখ্যায় দেশটি চিন ও দক্ষিণ কোরিয়ার পরেই।
ইরানে ২১ জনের মৃত্যু খবর মিলেছে এ দিন। এতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৪৫। সংক্রমিত মোট ৫৮২৩ জন। আজ ফতেমা রাহবার নামে এক এমপি-ও ভাইরাস সংক্রমিত হয়ে মারা গিয়েছেন। এই নিয়ে ইরানের ৭ জন নেতানেত্রী ও উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক করোনাভাইরাসে মারা গেলেন। ফতেমা ছাড়াও ইরানের আর এক এমপি মারা গিয়েছেন সংক্রমণে।
মৃত্যুর খবর আসছে আমেরিকা থেকেও। ফ্লরিডা থেকে আজ দু’জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। দু’জনেই সত্তরোর্ধ। বিদেশে বেড়াতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটেছিল। ক্যালিফর্নিয়া উপকূলে আটকে থাকা প্রমোদতরী ‘গ্র্যান্ড প্রিন্সেস’-এ ১৯ জন কর্মী-সহ ২১ জনের শরীরে ভাইরাস মিলেছে। প্রমোদতরীতে রয়েছেন মোট ৩৫০০ জন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স আজ জানান, যত দ্রুত সম্ভব সবাইকে উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে সকলের। কিন্তু কোন বন্দরে ‘গ্র্যান্ড প্রিন্সেস’কে আনা হবে, তা জানানো হয়নি মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে।
‘আমেরিকান ইজ়রায়েল পাবলিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি’ জানিয়েছে, ওয়াশিংটনে তাদের সম্মেলনে গিয়ে করোনা-আক্রান্ত হয়েছেন দু’জন। উল্লেখ্য, ওই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাইক পেন্স, বিদেশ সচিব মাইক পম্পেয়ো-সহ বেশ কয়েক জন আইনসভার সদস্য। নিউ ইয়র্কে এ দিন জারি করা হয়েছে জরুরি অবস্থা।
কয়েক দিন ধরে জ্বর, সর্দিকাশিতে ভুগছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। ভ্যাটিকানে ভক্তদের সঙ্গে হাত মেলানোর পরেই তাঁর অসুস্থতায় প্রশ্ন উঠেছিল, তবে কি তিনিও...? ভ্যাটিকানের পক্ষ থেকে অবশ্য আশ্বাস দেওয়া হয়, সব ঠিক আছে। তবে ৮৩ বছর বয়সি পোপকে নিয়ে আর কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না তারা। ভ্যাটিকান আজ জানিয়েছে, রবিবারের প্রার্থনাতে কাল উপস্থিত থাকবেন পোপ। কিন্তু ভক্তদের জমায়েত এড়াতে দেখা দেবেন না সেন্ট পিটার্স স্কোয়ারের জানলায়। ‘ভ্যাটিকান নিউজ়’-এ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে তাঁর প্রার্থনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy