ছবি এএফপি
দোকানে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কমে এসেছে, অনেক দোকানে কিছুই নেই। রাস্তাঘাটে যে ক’জন লোক ঘুরছে, তাদের মুখে মুখোশ আর হাতে দস্তানা। পৃথিবীর অন্যতম যানজট-প্রবণ শহরের রাস্তা প্রায় ভুতুড়ে গোছের ফাঁকা। পাশের লোকের কাশির শব্দ শুনলেই শিউরে উঠছি। আমেরিকার ক্যালিফর্নিয়া প্রদেশের বিভিন্ন শহরের এখন হাল এ রকমই।
আমেরিকার দ্বিতীয় বৃহত্তম স্কুল ডিস্ট্রিক্ট লস অ্যাঞ্জেলেস গত শুক্রবার সকাল থেকেই সব স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো অনেক আগেই বন্ধ করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে। সে দিন আমরা ডায়মন্ড বার শহরের বাসিন্দারা সারা দিন ধরে খবর দেখছি, আমাদের বাচ্চাদের স্কুলসংগঠনের সাইট দেখছি ঘনঘন, অন্যান্য অভিভাবকের সাথে কথা বলছি, এদের স্কুল এখনও বন্ধ করেছে না কেন? শেষে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় খবর এল, ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত স্কুল বন্ধ। সব ক্লাসওয়ার্ক আর হোমওয়ার্ক নেট-এর মাধ্যমে করানো হবে। না হলে ৫ সপ্তাহ ছুটির পরিপূরণ হবেই বা কী ভাবে? এই মার্চ মাসেই অধিকাংশ কলেজ ভর্তির সিদ্ধান্ত জানায়, যার জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকে, এবং যার জন্য তারা পুরো স্কুল জীবনটা পরিশ্রম করে এসেছে। ঠিক এই সময়ে কলেজগুলিতে কর্মী সংখ্যা এবং কাজের সময় কমে যাওয়ার ফলে পুরো শিক্ষাবর্ষটাই পিছিয়ে যেতে পারে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বিখ্যাত ডিজ়নিল্যান্ড বন্ধ, ইউনিভার্সাল স্টুডিয়ো বন্ধ, বন্ধ গেটি মিউজিয়াম এবং লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি মিউসিয়াম অব আর্ট। তা ছাড়া বন্ধ এই প্রদেশের ৮৬টি গ্রন্থাগার, যদিও সব বই ফেরত দেওয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এবং জরিমানাও মকুব করে দেওয়া হবে। বেশির ভাগ জায়গাতেই বাড়ি থেকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে। আমাদের অফিসে প্রথমে ভাবা হয়েছিল, বাড়ি থেকে কাজ করলে ভার্চুয়াল নেটওয়ার্কই ভেঙ্গে পড়তে পারে। আর সব কাজই কি ঘরে বসে করা যায়? সামনাসামনি বসে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে রকম সমধানে আসা যায়, দূরভাষ আর নেট মিটিংয়ে তার কার্যকারিতা অনেক কমে যায়। তবে ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নরের নির্দেশে এখন জরুরি পরিষেবা ছাড়া এখন সবাইকেই বাড়িতে কাজ করতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের কাজ যে বিশেষ প্রজেক্ট নির্ভর, তার খরচ ও সময়সীমা বেড়ে গেলে তার সংস্থান কী করে হবে, সে-ও এক প্রশ্ন। আর একটি সমস্যাও হতে পারে। কোনও সংস্থার যদি সরকারের সাথে কাজের চুক্তি থাকে এবং সরকার যদি কাজ বন্ধ করে দেয় কিছু দিনের জন্য, তা হলে সেই ব্যাক্তিগত মালিকানার সংস্থা তো সেই কয়েক দিনের জন্য কর্মীদের বেতনই দিতে পারবে না। অনেকের তাই এখন রোগ সংক্রমণের সাথে সাথে চাকরির স্থিরতা নিয়েও চিন্তা শুরু হয়েছে।
লুইজ়িয়ানায় থাকার সময়ে ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে কী করতে হবে জানতাম। তিন বছর আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে এসে ভূমিকম্পের ভীতির সঙ্গে পরিচয় হল। এ বার মহামারি। কী করতে হয় কিছুই জানি না। অদৃশ্য শত্রু। ক্ষণে ক্ষণে সাবান দিয়ে হাত ধুলেই কি শান্তি? হাতে লাগানোর জন্য রোগজীবাণুনাশক তরল পদার্থ দোকান থেকে উধাও। নেট ঘেঁটে বাড়িতেই তা তৈরির উপায় বার করছি।
লেখক মার্কিন আর্মি কোরে কর্মরত
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy