আইটিবিপি ক্যাম্প থেকে ‘ভাইরাসমুক্ত’ শংসাপত্র নেওয়ার লাইনে উহান-ফেরত ভারতীয়রা। সোমবার দিল্লির ছাওলাতে। পিটিআই
আগেই জানিয়েছিল দিল্লি। আজ বেজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হল, একটি বিশেষ বিমানে করে চিকিৎসার সরঞ্জাম চিনের উহানে পাঠাবে ভারত। ফেরার সময়ে ওই বিমানে উহানে আটকে থাকা বাকি ভারতীয় ও প্রতিবেশী দেশের যে সব নাগরিক চিন ছাড়তে ইচ্ছুক, তাঁদের উদ্ধার করে আনা হবে।
চিনের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিক্রম মিসরি বলেন, ‘‘বিমানে কতটা জায়গা থাকবে, তার উপরে নির্ভর করছে। তবে ভারত চায় নিজেদের দেশের নাগরিকদের পাশাপাশি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের আটকে থাকা বাসিন্দাদেরও উদ্ধার করতে।’’ আগ্রহী বিদেশিদের বেজিংয়ের ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।
গত ১ ও ২ ফেব্রুয়ারি ৬৪৭ জন ভারতীয়কে চিন থেকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে এয়ার ইন্ডিয়ার দু’টি বিমান। মলদ্বীপের সাত বাসিন্দাকেও উদ্ধার করা হয়েছিল। এত দিন আইটিবিপি-র ক্যাম্পে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল উদ্ধার হওয়া ভারতীয়দের। গত কাল ৪০৬ জনের চূড়ান্ত শারীরিক পরীক্ষায় ভাইরাস মেলেনি। এদের মধ্যে ২০০ জনকে আজ ক্যাম্প থেকে ছাড়া হয়েছে।
কিন্তু এ সবের পরে এখনও উহানে আটকে রয়েছেন বেশ কিছু ভারতীয়। গত দু’সপ্তাহ ধরে তাঁরা বারবার করে উদ্ধারের জন্য আবেদন জানিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি একটি ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসে। দেখা যায়, উহানের টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আশিস যাদব বলছেন, ‘‘আমি ও আমার স্ত্রী নেহা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানাচ্ছি, যত দ্রুত সম্ভব আমাদের রক্ষা করে নিয়ে যাওয়া হোক। দিন দিন আবহাওয়া খারাপ হচ্ছে। মুষলধারে বৃষ্টি, আবার তুষারপাতও হচ্ছে। গত কাল জল ছিল না। খবর পৌঁছলে সামান্য জল ও খাবার পাঠানো হচ্ছে। গোটা শহর ভূতের মতো হয়ে গিয়েছে।’’ পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে দূতাবাসের পক্ষ থেকেও। জানানো হয়েছে, আটকে থাকা বাকি ভারতীয়রা যাতে এ বারের বিমানে ফিরতে পারেন, সে জন্য হটলাইন খোলা হয়েছে। +৮৬১৮৬১০৯৫২৯০৩ এবং +৮৬১৮৬১২০৮৩৬২৯। তাঁরা ইমেলও করতে পারেন— helpdesk.beijing@mea.gov.in, তবে ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধে সাতটার মধ্যে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে। ভারতীয় দূতাবাসের হিসেব অনুযায়ী, এখনও ৮০ থেকে ১০০ জন ভারতীয় উহানে আটকে রয়েছেন। এর মধ্যে সেই ১০ ভারতীয়ও রয়েছেন, যাঁদের গায়ে জ্বর থাকায় আগের বার বিমানে উঠতে পারেননি। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও বাংলাদেশ তাঁদের দেশের বাসিন্দাদের এয়ারলিফ্ট করে নিয়ে গিয়েছে। কিন্তু পাকিস্তানের ৮০০ থেকে ১০০০ জন হুবেইয়ে আটকে রয়েছেন।
গত বার এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দু’টিতে উদ্ধারকাজে গিয়েছিলেন সংস্থার ৬৮ জন কর্মী। সাহসিকতার জন্য তাঁদের হাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সই করা প্রশংসাসূচক শংসাপত্র তুলে দেওয়া হল। আজ দিল্লিতে একটি অনুষ্ঠানে ওই ৬৮ জনের হাতে শংসাপত্রটি তুলে দেন বিমানমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী। বলেন, ‘‘বাণিজ্যিক সংস্থায় কাজ করেও যে দেশের প্রতি নিবেদিত থাকা যায়, দেখিয়ে দিল ওঁরা।’’
নয়া করোনাভাইরাস বা ‘সিওভিআইডি-১৯’ সংক্রমণের মাত্রা কমেছে বলেছে চিন দাবি করলেও মৃত্যু বাড়ছেই। মৃতের সংখ্যা ১৭৭০ ছুঁয়েছে। আরও ১০৫ জন মারা গিয়েছেন গত কাল। মৃতদের বেশির ভাগই (১০০ জন) হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা। বাকি তিন জন হেনান ও দু’জন গুয়াংডংয়ের লোক। গোটা দেশে সংক্রমিতের সংখ্যা ৭০,৫০০। চিনের বাইরে ৩০টি দেশে অন্তত ৭৮০ জনের সংক্রমণের খবর মিলেছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের আরও বেশি করে আক্রান্ত হওয়ার খবর মিলছে। ও দিকে, সরকার যা-ই বলুক না কেন, চিনের বেশ কিছু শহরে প্রয়োজনীয় সামগ্রীর আকাল দেখা দিয়েছে। হংকংয়ে আজ একটি দোকান থেকে টয়লেট রোল ডাকাতি করেছে সশস্ত্র দুষ্কৃতীরা। টয়লেট রোল ছাড়াও ঘরদোর সাফ করার জিনিস, হ্যান্ড স্যানিটাইজ়ার মিলছে না। বাড়ন্ত চাল, পাস্তার মতো খাদ্যসামগ্রীও।
এই পরিস্থিতিতে বার্ষিক পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেছে চিন সরকার। ৫ মার্চ থেকে অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা ছিল। এ সময়ে দু’টি বিশেষ অধিবেশন হয়, ন্যাশনাল পিপল’স কংগ্রেসের বিশেষ সম্মেলন ও ‘চাইনিজ় পিপল’স পলিটিক্যাল কনসালটেটিভ কনফারেন্স’। সব মিলিয়ে ৫০০০ প্রতিনিধি জড়ো হন। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনও ধরনের জমায়েতের বিপক্ষে চিন সরকার। একই কারণে জেমস বন্ডের আসন্ন ছবি ‘নো টাইম টু ডাই’-এর বেজিং প্রিমিয়ার ও চিনের অন্য শহরে শো বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy