Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

‘৫০ লক্ষের টিম, জিতবই’

প্রাথমিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে মডেল তৈরি করে দেখা গিয়েছিল, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা মতো কাজ না হলে মার্চের মধ্যেই দেশে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা যেতে পারেন। তাই সরকার প্রথম থেকেই ভাইরাস রোখায় তৎপর ছিল। 

ছবি:রয়টার্স

ছবি:রয়টার্স

অরিন্দম বসু
ক্রাইস্টচার্চ শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৬:৫১
Share: Save:

অনেকেই আজ আমাদের ‘ডাকাবুকো’ বলছেন। খুব ভুল কিছু বলছেন না বোধ হয়। কারণ, সম্ভবত নিউজ়িল্যান্ডই প্রথম নিজেদের করোনা-মুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছিল। তা-ও প্রায় তিন মাস আগে। টানা একশো দিন একটাও করোনা-সংক্রমণের খবর আসেনি। তার পরে যে-ই না একটা পরিবারের মধ্যে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঝড়ের হদিশ মিলল, গোটা দেশের নির্বাচনই পিছিয়ে দেওয়া হল পুরো এক মাস!

১৯১৮-র ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে ২০০২-এ নিউজ়িল্যান্ডে ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা প্যানডেমিক প্ল্যান চালু হয়। তাই সংক্রমণ শুরুর প্রথম ধাপেই পদক্ষেপ করা সম্ভব হয়েছিল এ দেশে। প্রাথমিক তথ্যের উপর ভিত্তি করে মডেল তৈরি করে দেখা গিয়েছিল, ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা মতো কাজ না হলে মার্চের মধ্যেই দেশে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ মারা যেতে পারেন। তাই সরকার প্রথম থেকেই ভাইরাস রোখায় তৎপর ছিল।

প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি। তাই কিছুটা সময় পাওয়া গিয়েছিলই। প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডের্ন ও এখানকার স্বাস্থ্য বিভাগের অধিকর্তার নেতৃত্বে গোড়াতেই জনস্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানভিত্তিক একটি পরিকল্পনা নেওয়া হয়, যার দু’টি অংশ: প্রথম দিকে দৈনিক সংক্রমণের হার যতটা সম্ভব কম রাখা যায়, তার কথা ভাবা হয়েছিল এবং দ্বিতীয়ত, মোট সংক্রমণ যতটা বাড়তে পারে, তাকে ততটা বাড়তে না দেওয়া।

রোজ দুপুর ১টায় প্রধানমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য অধিকর্তা সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখা করতেন। দিনের পুঙ্খানুপুঙ্খ সংক্রমণের খোঁজ নিতেন। সাধারণ মানুষও সেখানে সরাসরি প্রশ্ন পাঠাতে পারতেন। মার্চের মাঝামাঝি শুরু হয় ক্লাস্টারের খানাতল্লাশি। যে মুহূর্তে দেখা গেল, দেশে গোষ্ঠী সংক্রমণ ছড়িয়েছে, তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে লেভেল-৪ লকডাউন হল দেশ জুড়ে। কিন্তু কারও অসুবিধা করে নয়। চতুর্থ স্তরের লকডাউন ঘোষণার সময়ে ব্যবসায়ীদের তিন মাসের ভাতা দেবার কথা বলা হয়েছিল। মানুষের যাতে চাকরি না-যায়, দেখা হয়েছিল সে দিকটিও। লকডাউন চলাকালীন সরকার কিন্তু এক বারও করোনার বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করেনি। এ দেশের মানুষ খেলা ভালবাসেন। প্রধানমন্ত্রীও বলতেন, ‘‘আমরা ৫০ লক্ষের টিম, এই খেলায় জিতবই।’’ এ দেশেও বহু মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন কিন্তু সামাজিক বিভেদমূলক আচরণের কোনও খবর পাওয়া যায়নি।

একটু একটু করে স্বাভাবিক হচ্ছিল দেশ। তার পর অগস্টের গোড়ায় অকল্যান্ডের একটি পরিবার ও একটি গির্জায় ছোট ক্লাস্টারে ধরা পড়ল সংক্রমণ! ভোট পিছোল। ফের লকডাউন। এরই মধ্যে চলছে প্রচার— টিভি চ্যানেলে বিতর্ক, আর বাড়ি বাড়ি প্রচারপত্র বিলি। এ বছর ভাল অবস্থানে জেসিন্ডার ‘লেবার পার্টি’। তাই ভোট পিছোনোয় বিরোধী ন্যাশনাল পার্টিও হাতে বাড়তি সময় পেয়ে গেল!

অনেকের কাছেই শাপে বর। আমরা তাকিয়ে ফের ‘করোনা-মুক্তির’ দিকে। তিন মাসেরও বেশি সময়ে দেশে এক জনেরও মৃত্যু হয়নি করোনায়। কাল এক জন মারা গিয়েছেন।

লেখক ক্যান্টারবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি-বিষয়ক ও জনস্বাস্থ্যের অধ্যাপক

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus covid 19 Newzealand
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy