প্রতীকী ছবি।
করোনা অতিমারিই এখন আশার আলো হয়ে দেখা দিয়েছে সৌদি আরবে আটকে পড়া বহু শ্রমিকের কাছে। শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে সৌদির ‘কাফালা’ পদ্ধতির ফাঁসে আটকে পড়েছেন ভিন দেশের বহু শ্রমিক। অনেকে আটকে পড়েছেন ঋণের জালে। তাঁরা আশা করছেন, করোনা পরিস্থিতির জেরেই ‘কয়েদ’ থেকে নিজের বাড়ি ফিরতে পারবেন তাঁরা।
করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার পর থেকেই সৌদি আরব ছেড়ে নিজের দেশে পাড়ি দেন বিদেশি শ্রমিকরা। কিন্তু এখনও সেখানে আটকে বহু অনেকে। সৌদির নিয়ম কানুন অনুযায়ী, তাঁরা সেখানে ‘বেআইনি ভাবে’ রয়েছেন। তার কারণ ওই সব শ্রমিকদের অনেকেরই বসবাসের অনুমতির মেয়াদ ফুরিয়েছে। তা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকে দেনার দায়ে ডুবে গিয়েছেন। ফলে সৌদি আরবে করোনা সংক্রমণ যত বাড়ছে ততই ঝুঁকি বাড়ছে এই সব শ্রমিকদের।
সমস্যার শিকড় লুকিয়ে সৌদির ‘কাফালা’ পদ্ধতির মধ্যে। কোনও ব্যক্তির অধীনে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ করার বিষয়টিকেই ‘কাফালা’ পদ্ধতি বলা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে কোনও বিদেশি কর্মীকে স্পনসর করা হলে তিনি সৌদি আরবে যেতে পারেন। কিন্তু সেখানে পা রাখার পর ওই নিয়োগকর্তার অধীনেই তাঁকে কাজ করতে হয়। অন্য কোথাও তিনি কাজ করতে পারেন না। ওই শ্রমিকের চাকরি বদলানো, শ্রমিকের ঘরে ফেরা, এমন যে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের জন্য নির্ভর করতে হয় নিয়োগকর্তার উপরেই। সৌদি আরব-সহ মধ্য এশিয়ার একাধিক দেশে বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে এই রেওয়াজ চলে আসছে। ওই সব শ্রমিকদের উপর ভয়াবহ শোষণ চলে বলেও অভিযোগ উঠেছে বার বার। অনেকেই বলেন, ‘কাফালা’ পদ্ধতি আসলে দাসপ্রথারই নামান্তর। তবুও বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতি বছর ঋণ করেও কাজের খোঁজে সৌদি আরব পাড়ি দেন অনেকে। অনেকে ‘কাফালা’র মাধ্যমে কাজ জুটিয়ে নেন। কিন্তু বছর ফুরোলেই সৌদি আরবে বসবাসের অনুমতি জোগাড় করতে টাকা গুনতে হয় স্পনসরারকে। না হলে তাঁর কাছ থেকেই ধার করতে হয়। ফলে দেনার দায় থেকে কখনই মুক্তি মেলে না। তাই বাধ্য হয়ে ‘নরকবাস’ করতে হয় তাঁদের। গত ফেব্রুয়ারিতেই অবশ্য ‘কাফালা’ প্রথা বাতিলের পরিকল্পনা করেছে সৌদি।
আরও পড়ুন: সেনামুক্ত হটস্প্রিং, গালওয়ানে কাল শেষ হবে সেনা অপসারণ
অনেক শ্রমিক অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ‘কয়েদ’ থেকে পালিয়েও যান। তাঁদের তখন ‘ফেরার’ (হারুব) হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ২০১৬ থেকে রিয়াধে আটকে রয়েছেন সুদানের বাসিন্দা হাতেম। পেশায় তিনি ইলেকট্রিশিয়ান। সরকারি খাতায় তিনি এখন ‘ফেরার’। হাতেম বলছেন, ‘‘সুদানে আমার ৬ সন্তান, বয়স্ক মা এবং বোন খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছে। কিন্তু আমি আরও খারাপ অবস্থায় আছি।’’ তাঁর মতে, ‘‘এই স্পনসরশিপ সিস্টেমটাই খুব খারাপ।’’ সম্প্রতি একাধিক ভিনদেশি শ্রমিককে দেশ ছেড়ে চলে যেতে নির্দেশ দেয় সৌদি আরব। কিন্তু তাতে হাতেমদের মতো শ্রমিকদের ভাগ্যের চাকা ঘোরেনি। কারণ তাঁরা ঋণের ফাঁদে আটকে পড়েছেন। সৌদি ছাড়ার আগে স্পনসরারদের পাই পয়সা মিটিয়ে দিতে হবে।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ক্রমশ ঝুঁকি বাড়ছে হাতেমদের। গত মার্চে ওই সব ‘বেআইনি’ শ্রমিকদের জন্য বিনা পয়সায় করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা করে সৌদি আরব। কিন্তু গ্রেফতার হওয়ার ভয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যেতে নারাজ অনেকেই। মিশয়ীর এক শ্রমিকের কথায়, কোনও নিশ্চয়তা নেই যে আমাকে গ্রেফতার করা হবে না।’’
আরও পড়ুন: বিদেশি পড়ুয়াদেরও তাড়াতে এ বার ট্রাম্প-ফতোয়া!
সৌদি আরবে এমন বসবাসের অনুমতির ফুরিয়ে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা নেহাত কম নয়। পরিযায়ী শ্রমিকদের অধিকারের দাবি তুলছেন অনেকেই। তাঁদের এক জন অ্যানাস শাকের বলছেন, ‘‘এই সব শ্রমিকদের আশ্রয় দেওয়া উচিত সৌদি সরকারের। এই পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করা উচিত যাতে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেন।’’ অন্যান্য দেশের মতো সৌদিতেও করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে মোট আক্রান্ত দু’লক্ষের বেশি। মৃত্যু হয়েছে দু’হাজার জনের। এই পরিস্থিতিতে অনেকে অবশ্য আশার আলোও দেখছেন। কারণ, অনেক ‘ফেরার’ শ্রমিকই যোগাযোগ করেছেন স্বদেশের দূতাবাসের সঙ্গে। অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁদের দেশে ফেরানোর। সেখান থেকে সবুজ সঙ্কেত কবে মেলে, সে দিকেই এখন তাকিয়ে তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy