গত মাসেই ব্রিটেনের মন্ত্রিপদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোনঝি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। বিতর্ক তৈরি হয়েছিল তাঁর একটি ফ্ল্যাট নিয়ে। ব্রিটেনের সংবাদপত্র ফিনান্সিয়াল টাইমসে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছিল, এক আবাসন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বিনামূল্যে ফ্ল্যাটটি নিয়েছিলেন টিউলিপ। এ বার বাংলাদেশের গাজীপুরেও তাঁর নাম লেখা একটি বাগানবাড়ি বিতর্কের কেন্দ্রে। সে দেশের দুর্নীতি দমন কমিশনের নজরে রয়েছে আট বিঘা জমির উপর তৈরি সেই বাড়ি।
চারদিকে বাগান, মাঝে দোতলা বাড়ি। বাড়ির পাশে রয়েছে শানবাঁধানো পুকুর। বাংলাদেশের গাজীপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কানাইয়া এলাকায় রয়েছে সেই বাড়ি। সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’ বলছে, সেই বাড়ির বাইরে মার্বল ফলকে নাম লেখা, ‘‘টিউলিপ’স টেরিটরি’’। সূত্রের খবর, শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার কন্যা তথা ব্রিটেনের প্রাক্তন মন্ত্রী টিউলিপের নামেই এই বাড়ির নাম। খাতায়কলমে বাড়ির মালিক টিউলিপের বাবা রফিক আহম্মেদ সিদ্দিক। ‘‘টিউলিপ’স টেরিটরি’’-সহ চারটি বাগানবাড়ির সন্ধান মিলেছে গাজীপুরে, যেগুলির মালিক হাসিনা বা তাঁর আত্মীয়েরা। স্থানীয়দের দাবি, হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন এই বাড়িগুলিতে প্রায়ই দেখা যেত তাঁকে এবং তাঁর আত্মীয়, ঘনিষ্ঠদের।
ভূমি দফতর বলছে, এই চারটি বাগানবাড়ির দলিল অনুযায়ী ২৫ বিঘা জমি নিয়ে সেগুলি তৈরি হয়েছে। যদিও স্থানীয়দের দাবি, চারটি বাগানবাড়িতে জমির পরিমাণ ২৫ বিঘার অনেক বেশি। সেগুলি কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে রাখা হলেও কাগজেকলমে বলা নেই। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন হাসিনা এবং রেহানার সম্পত্তির খোঁজ করছে। গাজীপুরে এই চার বাগানবাড়ি নিয়ে বিশদে তথ্য চেয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে। গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলাশাসক মহম্মদ কায়সার খসরু ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘‘হাসিনা এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের জমির তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন শাখা। আমরা এর মধ্যেই ভূমি দফতরের আধিকারিকদের কাছে তাঁদের জমির তথ্য চেয়েছি। সেই তথ্য পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে যে, হাসিনা ও তাঁর পরিবারের কাছে কত জমি রয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
গত অগস্টে গণআন্দোলনের জেরে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন। তার পরে তিনি দেশ ছাড়েন। সেই সময় হাসিনার বাসভবন-সহ একাধিক সম্পত্তি ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর ঘনিষ্ঠ এবং আওয়ামী লীগের সদস্যদের সম্পত্তি ভাঙচুরেরও অভিযোগ ওঠে। টিউলিপের নামে এই বাগানবাড়িতেও ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে সেই সময়। ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন বলছে, সেই চিহ্ন এখনও রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ওই ভাঙচুরের পর থেকে সেই বাড়িতে কোনও নিরাপত্তারক্ষী বা বাসিন্দাকে দেখা যায়নি।
গাজীপুরের পুর ভূমি দফতরের নথি বলছে, এই বাগানবাড়িতে আট বিঘা জমি রয়েছে। সেই জমির মিউটেশন রয়েছে টিউলিপের বাবার নামে। স্থানীয়দের দাবি, বাগানবাড়ির সীমানার ভিতরে জমির পরিমাণ আট বিঘার কয়েক গুণ। এই প্রসঙ্গে ভূমি দফতরের আধিকারিক ‘প্রথম আলো’কে বলেন, ‘‘হতে পারে জমি কেনা হয়েছে। কিন্তু এখনও মিউটেশন হয়নি।’’