E-Paper

২৪ ঘণ্টায় দেড় বছরের বৃষ্টি, বানভাসি দুবাই

দুবাইয়ের আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, সাধারণত দেড় বছরে এ দেশে যতটা বৃষ্টিপাত হয়, সেই পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত)।

প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন দুবাইয়ের রাস্তা। বুধবার।

প্রবল বৃষ্টিতে জলমগ্ন দুবাইয়ের রাস্তা। বুধবার। ছবি: রয়টার্স।

ঋতুপর্ণা বসু

শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:০১
Share
Save

ঝাঁ চকচকে শপিং মলের দোকানের সিলিং থেকে ঝরঝর করে ঝরে পড়ছে জল। দুবাইয়ের মতো বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সামনে রাখা দামি দামি বিদেশি গাড়িগুলি অর্ধেক জলের তলায়। বিমানবন্দরের ট্যাক্সিংয়ে রাখা বিমানগুলিও যেন জলের তোড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। সমাজমাধ্যমের প্ল্যাটফর্মগুলির দৌলতে বিশ্বের কোণায় কোণায় পৌঁছে গিয়েছে এই সব ছবি আর ভিডিয়োর টুকরো। শুধুমাত্র সংযুক্ত আরব আমিরশাহির গ্ল্যামার আর চাকচিক্যে মোড়া আমাদের এই শহরই নয়, গত ২৪ ঘণ্টার অভূতপূর্ব বৃষ্টিপাতে বিপর্যস্ত ওমান, বাহরাইনের মতো পশ্চিম এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশও।

এর মধ্যে অবশ্য সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি সংযুক্ত আরব আমিরশাহিরই। দুবাইয়ের আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, সাধারণত দেড় বছরে এ দেশে যতটা বৃষ্টিপাত হয়, সেই পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে শুধুমাত্র ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত)। ১৯৪৯ সাল থেকে এমন বিপুল বৃষ্টি দেখেনি এই দেশ। ফলে শুষ্ক মরুঝড়ে অভ্যস্ত দুবাই শহরের চেনা ছবিটা পুরোপুরি পাল্টে গিয়েছে। কার্যত শহরের আনাচকানাচও জলে ভেসে গিয়েছে। গত কাল থেকেই স্কুল-কলেজ-অফিস বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। আজ অনেক ক্ষেত্রেই লোকজনকে বাড়ি থেকে কাজ করতে বলা হয়েছে। কারণ রাস্তায় একবার বেরোলে গন্তব্যে পৌঁছনোর কোনও উপায় নেই। বড় বড় সড়কগুলিতেও কোথাও কোথাও জল এতটা বেড়েছে যে মাঝরাস্তায় বিকল হয়ে গিয়েছে বিলাসবহুল সব গাড়ির ইঞ্জিন। দুবাইবাসী কিন্তু এই বিপর্যয়ে একে অপরের পাশে। হাসিমুখে অন্যের গাড়ি ঠেলে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন অনেকে।

শুরুতে এই ঝোড়ো বৃষ্টি দেখে খুশিই হয়েছিলেন অনেকে। ধুলো ঝেড়ে বার করা হয়েছিল ছাতা। আর ক্যামেরা তো প্রত্যেকের হাতে আবশ্যিক। জলের ফোঁটার ছবি তুলতে এক এক জন শহরবাসী যেন নামী চিত্রপরিচালকের ভূমিকায়। লেন্স চোখে শহরের নতুন রূপ বন্দি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। তবে সময় যত গড়িয়েছে, বিপদ আঁচ করতে অসুবিধে হয়নি। এই আকাশ-ভাঙা বৃষ্টি যেন থামার নামই নিচ্ছিল না।

শুষ্ক মরুশহরের নিকাশি ব্যবস্থা ততটাও জোরদার নয়। আর তার ফলই ভুগতে হয়েছে আমজনতাকে। আজ সকালে অবশ্য রোদের দেখা মিলেছে। তবে বানভাসি রাস্তায় জলস্তর নামেনি পুরোপুরি। ‘মল অব দ্য এমিরেটস’, ‘দেইরা সিটি সেন্টার’-এর মতো বেশ কিছু শপিং মলের দোকানগুলির অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, কয়েক দিনের জন্য সেগুলি বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন মালিকরা। স্থানীয় এক দৈনিকে দেখলাম, কোনও কোনও শপিং মলের চলমান সিঁড়িগুলিও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া তাই মলের পথে পা বাড়াচ্ছেন না দুবাইবাসী। কারণ বেশির ভাগ মলেই ভাঙতে হচ্ছে প্রচুর সিঁড়ি। তবে এই নজিরবিহীন বৃষ্টিতে দুবাই শহরের ভূগর্ভস্থ জলস্তর বেড়ে গিয়েছে অনেকখানি। যা নিঃসন্দেহে সুখবর।

গত ৭৫ বছরে এত বৃষ্টি দুবাইয়ে হয়নি। বরং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টিপাতের চল বা ক্লাউড সিডিং এখানে শুরু হয়েছিল সেই ২০০২ সাল থেকে। তা হলে, ঠিক কোন কারণে এত কম সময়ের মধ্যে এতটা বৃষ্টিতে ভাসল রুক্ষ-শুষ্ক মরুভূমির এই দেশ? বিশ্ব উষ্ণায়নকেই দুষছেন পরিবেশবিদরা।

দ্রুত পাল্টে যাওয়া বিশ্বের আবহাওয়ার নতুন নজির— মরুদেশের বানভাসি রাস্তা!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Heavy Rainfall Dubai

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।