Advertisement
E-Paper

ইরানের রাস্তায় পোশাক খুলে প্রতিবাদী তরুণীর খবর নেই! শঙ্কা জাগাচ্ছে ‘কুখ্যাত’ মনোস্বাস্থ্যকেন্দ্র

ইরানের কড়া পোশাকবিধির প্রতিবাদে প্রকাশ্যে পোশাক খুলেছিলেন তরুণী। তার পর তাঁকে গ্রেফতার করে মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইরানে এই ধরনের হাসপাতালের ইতিহাস খুব একটা ‘মধুর’ নয়।

তেহরানে ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অন্তর্বাস পরে তরুণী। ছবি: এক্স।

তেহরানে ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে অন্তর্বাস পরে তরুণী। ছবি: এক্স।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৬
Share
Save

পোশাকবিধির বিরোধিতায় পোশাক খুলে শুধুমাত্র অন্তর্বাস পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের মধ্যে হেঁটেছিলেন তরুণী। এক সপ্তাহ অতিক্রান্ত হওয়ার পরেও তাঁর কোনও খবর নেই। ওই তরুণীকে ইরানের একটি মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছিল। তার পর থেকে আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। আশঙ্কা, হাসপাতালের মধ্যে অত্যাচার করা হচ্ছে তাঁর উপর। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন তরুণীকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষত, ইরানের মানসিক হাসপাতালগুলির ইতিহাস সেই উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

ইরানের রাজধানী তেহরানের ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ওই তরুণী। পোশাকবিধির বিরোধিতা করতে গিয়ে সকলের সামনেই পোশাক খুলে ফেলেছিলেন তিনি। গত শনিবার সেই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। ভাইরাল ভিডিয়ো ফুটেজে দেখা যায়, আশপাশে মহিলারা সকলে যখন নিজেদের হিজাবে আদ্যোপান্ত ঢেকে রেখেছেন, তখন সেই হিজাব তো বটেই, বাকি পোশাকও তরুণী গায়ে রাখেননি। শুধু অন্তর্বাস পরে হেঁটে চলেছেন সকলের চোখের সামনে দিয়ে (ভাইরাল ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন।) আনুষ্ঠানিক ভাবে তরুণীর নাম-পরিচয় প্রকাশ্যে আসেনি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রাথমিক ভাবে জানিয়েছিলেন, তরুণীর কিছু মানসিক সমস্যা রয়েছে। পরে জানা যায়, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নিয়ে যাওয়া হয়েছে শহরের এক ‘কুখ্যাত’ মানসিক হাসপাতালে।

আন্তর্জাতিক অসরকারি সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, ইরানের মানসিক হাসপাতালগুলিতে বন্দিদের উপর অত্যাচারের ইতিহাস অনেক পুরনো। অনেক প্রতিবাদী এবং রাজনৈতিক বন্দিকে ‘মানসিক রোগী’র তকমা দিয়ে ওই সমস্ত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার পর সেখানে অকথ্য অত্যাচার চলে বলে অভিযোগ। বিদ্যুতের শক দেওয়া, হাত-পা বেঁধে মারধর এমনকি বিষাক্ত রাসায়নিক প্রয়োগ করার মতো দৃষ্টান্তও রয়েছে বলে দাবি অ্যামনেস্টির। তারা জানিয়েছে, সেই সংক্রান্ত প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। ফলে পোশাক খুলে প্রতিবাদী তরুণীকে নিয়ে আশঙ্কা আরও জোরালো হয়েছে।

ইরানের কোন মানসিক হাসপাতালে তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। ইচ্ছাকৃত ভাবেই তা গোপন রাখা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেন্টার ফর হিউম্যান রাইট্‌‌স ইন ইরান (সিএইচআরআই) একে ‘অপহরণ’ বলে উল্লেখ করেছে। তাদের মতে, সরকারবিরোধী কথা বললেই প্রতিবাদীদের ধরে ধরে জোর করে মানসিক হাসপাতালে পাঠানো আসলে কণ্ঠরোধের নামান্তর। সিএইচআরআই-এর এগ্‌জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর হাদি ঘায়েমির কথায়, ‘‘প্রতিবাদীদের মানসিক ভারসাম্যহীন বলে দেগে দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো ইরানি কর্তৃপক্ষের কণ্ঠরোধের অস্ত্র। তাঁদের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করার জন্য মানসিক রোগের অজুহাত দেওয়া হয়। এটা বেআইনি। এটা অপহরণের নামান্তর। এমনটা করা যায় না।’’

মহিলাদের জীবন, স্বার্থ, স্বাধীনতার দাবিতে প্রতিবাদ ইরানে নতুন নয়। তার জেরে আটক প্রতিবাদীদের মনোস্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার ইতিহাসও পুরনো। ২০২২ সালে মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর গোটা ইরানে যখন প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল, সেই সময়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল প্রতিবাদী এক কুর্দিশ র‌্যাপারকে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় তেহরানের আমিনাবাদ মনোস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গত মাসে সেখান থেকে ছাড়া পেয়েছেন তিনি। অভিযোগ, স্বীকারোক্তি আদায়ের দাবিতে মানসিক হাসপাতালের ভিতরে অকথ্য অত্যাচার করা হয় ওই র‌্যাপারের উপর। তাঁর এক ঘনিষ্ঠ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানকে বলেছেন, ‘‘ক্রুশবিদ্ধ যিশুর ভঙ্গিমায় বিছানার উপর হাত-পা বেঁধে রাখা হয়েছিল তাঁর। কড়া ডোজ়ের ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয় তাঁকে। অচেতন অবস্থাতেও তাঁর বাঁধন খোলা হয়নি।’’

২০২৩ সালে এক প্রতিবাদী তরুণীকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল রাজ়ি মনোস্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে তাঁর হাত এবং পা মোটা লোহার চেন দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।

ইরানের এক মানবাধিকার কর্মী জানিয়েছেন, হিজাব খুলে প্রতিবাদ করায় তাঁকে দিয়ে জোর করে একটি বিবৃতিতে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ, যেখানে স্বীকারোক্তি ছিল, তিনি মানসিক রোগী। পোশাক খুলে প্রতিবাদ করা সেই তরুণীকে নিয়ে মানবাধিকার কর্মীর উদ্বেগ, ‘‘উনি নিশ্চয়ই এখন মারাত্মক অত্যাচারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা অবিলম্বে ওঁর মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’’

ইরানের সরকার কী বলছে?

সরকারি মুখপাত্র ফতেমে মোহাজেরানি দিন চারেক আগে জানিয়েছেন, ওই তরুণী সমগ্র দেশের কোনও নিরাপত্তাজনিত সমস্যার প্রতিনিধি নন, উনি আসলে এক বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিবিশেষ, যিনি মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। একে সামাজিক সমস্যা হিসাবে দেখছে ইরান সরকার। তরুণীর চিকিৎসা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘কবে তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরবেন, এখনই তা বলা সম্ভব নয়। এখন ওঁর চিকিৎসা প্রয়োজন। তা সম্পূর্ণ হওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’ গ্রেফতারির পর থানা থেকে মনোস্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছে তরুণীকে, তা স্বীকার করেছে ইরান সরকারও। তবে সেই হাসপাতালের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

Iran Dress Code stripped Stripping Tehran Hijab Iran Hijab Row Hijab Row Hijab Controversy Anti Hijab protest

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।