Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

তেজস্ক্রিয় বিকিরণ, সমুদ্রে আতঙ্ক সোভিয়েত সাবমেরিন

‘নরউইজিয়ান রেডিয়েশন অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সেফটি অথরিটি’ তদন্ত শেষে জানিয়েছে, ডুবোজাহাজটির ধ্বংসস্তূপের ভেন্টিলেশন ডাক্ট থেকে উচ্চমাত্রায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটছে সাগরের জলে। সর্বোচ্চ প্রায় লিটার প্রতি ৮০০ বিকিউ।

ডুবে যাওয়ার আগে সেন্ট পিটার্সবার্গে তোলা হয়েছিল সোভিয়েত-যুগের সাবমেরিন ‘কমসোমোলেটস’-এর এই ছবি।

ডুবে যাওয়ার আগে সেন্ট পিটার্সবার্গে তোলা হয়েছিল সোভিয়েত-যুগের সাবমেরিন ‘কমসোমোলেটস’-এর এই ছবি।

সংবাদ সংস্থা
মস্কো শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৯ ০২:৩২
Share: Save:

বছর তিরিশ আগের কথা। সোভিয়েত-যুগের সাবমেরিন বা ডুবোজাহাজ ‘কমসোমোলেটস’ ডুবে গিয়েছিল নরউইজিয়ান সাগরের অতলে। সম্প্রতি তার ধ্বংসস্তূপ পরীক্ষা করে চিন্তায় পড়েছেন বিশেষজ্ঞরা। স্বাভাবিকের থেকে ৮ লক্ষ গুণ তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়াচ্ছে ডুবোজাহাজটি।

বিশেষজ্ঞরা সম্প্রতি রিমোট চালিত যন্ত্রের সাহায্যে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫৫০০ ফুট নীচে ‘কমসোমোলেটস’কে পরীক্ষা করে দেখেছেন। ‘নরউইজিয়ান রেডিয়েশন অ্যান্ড নিউক্লিয়ার সেফটি অথরিটি’ তদন্ত শেষে জানিয়েছে, ডুবোজাহাজটির ধ্বংসস্তূপের ভেন্টিলেশন ডাক্ট থেকে উচ্চমাত্রায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটছে সাগরের জলে। সর্বোচ্চ প্রায় লিটার প্রতি ৮০০ বিকিউ। যেখানে স্বাভাবিক মাত্রা ০.০০১ বিকিউ প্রতি লিটার। ‘নরউইজিয়ান ইনস্টিটিউট অব মেরিন রিসার্চ’-এর বিজ্ঞানী ও নরওয়ের তদন্তকারী দলের প্রধান হিল্ড এলিস হেলডাল বলেন, ‘‘বিকিরণ মাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটা বেশি। তবু এখনও পরিস্থিতি মারাত্মক আশঙ্কাজনক নয়।’’

চারশো ফুট দীর্ঘ ধ্বংসস্তূপে দু’টি পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র এবং একটি পরমাণু চুল্লি রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর টানা ‘কমসোমোলেটস’-এর উপরে নজরদারি চালিয়ে গিয়েছে নরওয়ে ও রাশিয়া। মাপা হয়েছে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা। বিশেষ করে সমুদ্রের জলে কী পরিমাণ দূষণ ছড়াচ্ছে ধ্বংসস্তূপ থেকে। ’৯০-এর দশকে কিংবা ২০০৭ সালেও রুশ বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, বিকিরণ মাত্রা খুবই কম। হেলডালের বক্তব্য, তেজস্ক্রিয় বিকিরণ এ ভাবে বেড়ে যাওয়া অবাক করেনি তাঁদের। বলেন, ‘‘নরউইজিয়ান সাগরের গভীরে তেজস্ক্রিয় সিজ়িয়াম সহজে জলে মিশে যায়। বেশ কিছু মাছ ওই এলাকায় থাকে। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নরউইজিয়ান মাছ বা সি-ফুডে খুবই কম প্রভাব ফেলেছে ওই তেজস্ক্রিয়তা।’’ কারণটাও ব্যাখ্যা করেছেন হেলডাল। তাঁর কথায়, ‘‘নরউইজিয়ান সাগরের জলে এমনিতে সিজ়িয়াম মাত্রা খুব কম। ধ্বংসস্তূপটিও অনেক গভীরে পড়ে রয়েছে। কমসোমোলেটস-এর সিজ়িয়াম তাই দ্রুত জলে দ্রবীভূত হয়ে যাচ্ছে।’’

‘কমসোমোলেটস’ শব্দের অর্থ তরুণ কমিউনিস্ট লিগের সদস্য। ১৯৮৩ সালে সেভেরদভিনস্কে তৈরি করা হয়েছিল রুশ পরমাণু শক্তিসম্পন্ন ডুবোজাহাজটিকে। সেই সময়ে এটিই ছিল সর্বোচ্চ শক্তিশালী (ডিপেস্ট ডাইভিং সাবমেরিন) ডুবোজাহাজ। পরমাণু অস্ত্র ছাড়াও যে কোনও ধরনের অস্ত্র উৎক্ষেপণে সক্ষম ছিল এটি। ৬৯ জন নৌ-কর্মী কাজ করতেন ‘কমসোমোলেটস’-এ। ১৯৮৯ সালে ৩৯ দিন ধরে টানা সমুদ্রের গভীরে নজরদারি চালানোর সময়ে আগুন ধরে গিয়েছিল ডুবাজাহাজটিতে। ৭ এপ্রিল আগুনে শেষ হয়ে যায় সেটি। ৪২ জন কর্মী মারা গিয়েছিলেন।

এ মাসেই নরওয়ে ও রাশিয়ার একটি যৌথ বাহিনী ‘কমসোমোলেটস’-কে রিমোটচালিত যন্ত্রের সাহায্যে ভিডিয়ো করে। একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ফিল্ম বানানো হয়েছে। তাতে দেখানো হয়েছে, ধ্বংসস্তূপের গায়ে এখনও লাগানো রয়েছে টর্পেডো।

অন্য বিষয়গুলি:

Submarine Russia Radiation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE