গৃহযুদ্ধে বিপর্যস্ত মায়ানমারের কালয় শহর। ছবি: রয়টার্স।
পোশাকি নাম ‘ব্রাদারহুড অ্যালায়্যান্স’। আসলে মায়ানমারের তিনটি বড় বিদ্রোহী গোষ্ঠী— ‘তাঙ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি’ (টিএনএলএ), ‘আরাকান আর্মি’ (এএ) এবং ‘মায়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি’ (এমএনডিএএ)-র নয়া জোট। যাদের যৌথ অভিযানে ইতিমধ্যেই টালমাটাল সে দেশের আড়াই বছরের সামরিক জুন্টা সরকার।
দিন দশেক আগে মায়ানমারের উত্তরাঞ্চলের শান প্রদেশে হামলা চালিয়ে অধিকাংশ সেনাঘাঁটি এবং পুলিশ দফতর দখল করেছিল বিদ্রোহীদের যৌথবাহিনী। শনিবার স্থানীয় সূত্র উদ্ধৃত করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছেন উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের কোণঠাসা হয়ে পড়েছে মায়ানমার সেনা। ইতিমধ্যেই সেখানে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। বিমানহানা চালিয়েও বিদ্রোহীদের অগ্রগতি ঠেকাতে কার্যত ব্যর্থ মায়ানমার ফৌজ।
অন্য দিকে, শান প্রদেশের প্রধান শহর ল্যাসিওর বিমানবন্দরটি শনিবার বন্ধ করে দেওয়ার কথা সরকারি তরফে জানানো হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, বিদ্রোহী বাহিনী সেটি কব্জা করেছে। গত সপ্তাহের গোড়া থেকে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে ইতিমধ্যেই চিন সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা মায়ানমারের সেনার হাতছাড়া হয়েছে। মায়ানমার-চিন সংযোগরক্ষাকারী সড়কও এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে বলে তিন জঙ্গিগোষ্ঠীর জোটের দাবি। এমনকি, পশ্চিম মায়ানপারের সাগিয়াং প্রদেশের কালয় শহরেও দু’তরফের মুখোমুখি লড়াই শুরু হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার সংস্থার তরফে শুক্রবার জানানো হয়েছিল, সেনা-বিদ্রোহী সংঘর্ষের জেরে আতঙ্কে অন্তত ৯০ হাজার মানুষ ঘর ছেড়েছেন। সেই সংখ্যা ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ ছাড়িয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। চিন-মায়ানমার বাণিজ্যের ‘কেন্দ্র’ বলে পরিচিত সীমান্তবর্তী চিনশয়েহাউ শহর আগেই দখল করেছিল তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট। সেখানে কয়েকটি চিনা বাণিজ্যিক সংস্থার দফতরেও তারা হামলা চালিয়েছে। পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন বেজিং বৃহস্পতিবার বিদ্রোহী বাহিনীর কাছে যুদ্ধবিরতির আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু তাতে সাড়া মেলেনি। মায়ানমারের গণতন্ত্রপন্থী শক্তির স্বঘোষিত সরকার ‘ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট’ বিদ্রোহীদের পাশে দাঁড়িয়েছে ইতিমধ্যেই।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মায়ানমারের গণতন্ত্রকামী নেত্রী আউং সান সু চির দল ‘ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে উৎখাত করে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেছিল মায়ানমার সেনা। আড়াই বছরের সেনা সরকার এই প্রথম এত বড় সঙ্কটের মুখোমুখি হল বলে মনে করা হচ্ছে। মায়ানমারের ‘স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কাউন্সিল’ (এসএসি)-এর প্রেসিডেন্ট মিয়ন্ত শোয়ে পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘দ্রুত, কার্যকরী পদক্ষেপ না-করলে আমাদের দেশ টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy