বাংলাদেশ পুলিশের হাতে গ্রেফতার সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। —ফাইল চিত্র।
মঙ্গলবারও জামিন পেলেন না বাংলাদেশের সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। উল্টে আরও একমাস জেলবন্দি থাকতে হবে তাঁকে। চট্টগ্রাম আদালতে এ দিন তাঁর জামিন মামলার শুনানির কথা ছিল। কিন্তু তা পিছিয়ে গিয়েছে। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম সূত্রের দাবি, সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে আদালতে মামলা লড়ার জন্য মঙ্গলবার রাজি ছিলেন না কোনও আইনজীবী। এই পরিস্থিতিতে আগামী ২ জানুয়ারি পর্যন্ত এই মামলার শুনানি স্থগিত রেখেছে চট্টগ্রাম আদালত। ঘটনাচক্রে ইসকনের কলকাতা শাখার মুখপাত্র রাধারমণ দাস সোমবার রাতে অভিযোগ করেছেন, চিন্ময়কৃষ্ণের আইনজীবীর উপর হামলা হয়েছে এবং তিনি হাসপাতালে ভর্তি।
চট্টগ্রামের এক স্থানীয় বিএনপি নেতার অভিযোগের ভিত্তিতে গত সোমবার (২৫ নভেম্বর) বাংলাদেশ পুলিশ গ্রেফতার করে চিন্ময়কৃষ্ণকে। রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর চত্বর থেকে প্রথমে তাঁকে আটক করে পুলিশ। পরে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন (২৬ নভেম্বর) চট্টগ্রাম আদালতে পেশ করা হয় সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণকে। কিন্তু জামিনের আর্জি মঞ্জুর হয়নি। তাঁকে জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেয় চট্টগ্রামের আদালত। সে দিন তাঁকে আদালত চত্বর থেকে প্রিজ়ন ভ্যানে তোলার সময় বিক্ষোভ দেখান চিন্ময়কৃষ্ণের অনুগামীরা। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। সেই ঘটনার এক সপ্তাহ পরে মঙ্গলবার ফের চিন্ময়কৃষ্ণের জামিন মামলার শুনানি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা এক মাস পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে।
২৬ নভেম্বরের ঘটনার পর এ দিন চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তার বন্দোবস্ত করে পুলিশ। বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের দাবি, আদালতে প্রচুর সংখ্যক পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়। চট্টগ্রামের আইনজীবীরা সকালে আদালত চত্বরে মিছিলও করেন। তবে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করানো হয়নি সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণকে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচারের একাধিক অভিযোগ উঠে এসেছে। এই আবহে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য একাধিক ধর্মীয় সংগঠন মিলে গঠন করে ‘সনাতনী জাগরণ মঞ্চ’। ওই মিলিত মঞ্চের অন্যতম মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাস। তার ডাকে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সমাবেশ আয়োজিত হয়েছে। প্রচুর সংখ্যালঘু মানুষ তাতে ভিড় করেছেন। সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণ ইস্কনের প্রাক্তন সদস্যও। সংগঠনের সঙ্গে আপাতত কোনও সরাসরি যোগ না থাকলেও, তাঁর গ্রেফতারির পর পাশে দাঁড়িয়েছে ইস্কনও।
সূত্রের খবর, আগের শুনানিতে আদালতে ৫৩ জন আইনজীবী চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে সওয়ালে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সকলকে একটি বিস্ফোরক মামলা-সহ কয়েকটি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। একই সঙ্গে দুই সাংবাদিক এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কয়েক জন বিশিষ্ট জনের নামও যুক্ত করা হয়েছে ওই মামলায়। পাশাপাশি গত রাতে চিন্ময়কৃষ্ণের আইনজীবী রমেন রায়ের বাড়িতে হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে ইস্কন। চিন্ময়কৃষ্ণের আর এক আইনজীবী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার আদালতে তাঁদের উপরে হামলা করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অভিযোগ, তার পরেই আতঙ্কিত আইনজীবীরা চিন্ময়কৃষ্ণের জামিনের সওয়ালে হাজির হতে চাইছেন না।
সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের হয়ে কেন কোনও আইনজীবী আদালতে উপস্থিত নেই, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে আদালতেও। ‘প্রথম আলো’র এক প্রতিবেদন অনুসারে, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিমউদ্দিন চৌধুরী আদালতে জানান, সন্ন্যাসীর হয়ে কোনও আইনজীবী কেন দাঁড়াননি, সে বিষয়ে তাঁদের কাছে কোনও তথ্য নেই। কোনও আইনজীবীকে ভয় দেখানো বা হুমকি দেওয়ার তথ্যও তাঁদের কাছে নেই বলে আদালতে দাবি করেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি।
বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ‘প্রথম আলো’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চট্টগ্রাম নিউ মার্কেট এলাকায় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। পরে ২৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের লালদিঘির মাঠে চিন্ময়কৃষ্ণের ডাকে একটি সমাবেশ আয়োজিত হয়। অভিযোগ, সে দিনেই চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট চত্বরে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপরে ধর্মীয় সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করা হয়। ওই ঘটনার পর ৩০ অক্টোবর চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা রুজু হয়। অভিযুক্তের তালিকায় রাখা হয় সন্ন্যাসীকেও। এর পরে গত সোমবার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে তাঁকে প্রথমে আটক এবং পরে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের পুলিশ। সূত্রের খবর, সে দিন ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাচ্ছিলেন তিনি।
সন্ন্যাসী চিন্ময়কৃষ্ণের গ্রেফতারি এবং বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ্ন প্রকাশ করেছে ভারতও। বিদেশ মন্ত্রক থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে দিল্লি উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু-সহ প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সে দেশের সরকারের, তা-ও জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের পুলিশের হাতে সন্ন্যাসীর গ্রেফতারি প্রসঙ্গে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘‘আশা করব চিন্ময়কৃষ্ণের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ বিচার হবে। তাঁর আইনি অধিকার অক্ষুণ্ণ থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy