সৌজন্যমূলক হলেও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় বৈঠকে। ফাইল চিত্র।
যুদ্ধের দামামা কি বাজাতে চাইছেন চিনা প্রেসিডেন্ট?
দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলেন শি চিনফিং। বললেন, যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য সতর্ক থাকতে। গত শুক্রবার দেশের সেনাবাহিনীর শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে চিনফিং এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর।
প্রেসিডেন্ট চিনফিং চিনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যানও। শুক্রবার দেশের শীর্ষ সেনাকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। নতুন বছরে এটাই ছিল সেনাকর্তাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্টের প্রথম বৈঠক। চিনা সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, মূলত সৌজন্যমূলক হলেও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা হয় সেই বৈঠকে। সেখানেই সেনাবাহিনীর উদ্দেশে ওই বার্তা দেন প্রেসিডেন্ট। দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে প্রেসিডেন্টের বার্তা: ‘সেনারা যেন কোনও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে ভয় না পায়।’
এ দিনের বৈঠকে কোনও দেশের নাম উল্লেখ করেননি চিনফিং। তবে, কূটনৈতিক মহল চিনা প্রেসিডেন্টের এই মন্তব্যকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। কারণ, এই মুহূর্তে তাইওয়ান, আমেরিকা বা ভারত— সবের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিতে দেখা গিয়েছে বেজিংকে। স্বাধীনতার কথা ভুলে যাওয়া উচিত বলে সম্প্রতি তাইওয়ানের উদ্দেশে হুঙ্কার ছেড়েছেন চিনফিং। পাশাপাশি, আমেরিকাকে জবাব দিতে শক্তিশালী ‘মোয়াব’ বোমার সফল উৎক্ষেপণ করেছেন। আবার, ভূমি থেকে আকাশ অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সেরে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধেও রক্তচক্ষু দেখাতে ভোলেনি তারা।
আরও পড়ুন: চিনের সংযুক্তির ডাক ফের উড়িয়ে দিল তাইওয়ান
১৯৭৯ সালে সংযুক্তির যে প্রস্তাব তাইওয়ানকে পাঠিয়েছিল চিন, তার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সম্প্রতি বক্তৃতা দেন চিনফিং। তাতে প্রেসিডেন্ট শান্তির কথা বলেও হুঁশিয়ারি দিয়ে রাখেন, প্রয়োজন পড়লে সামরিক বাহিনীকেও নামানো হতে পারে। স্বশাসিত তাইওয়ান নিজেদের স্বাধীন অঞ্চল বলেই মনে করে। যদিও তারা চিনের মূল ভূখণ্ড থেকে কখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেনি। বেজিং বরং বরাবরই মনে করে, তাইওয়ান চিনের অংশ।
চিনফিং চিনের সেন্ট্রাল মিলিটারি কমিশনের চেয়ারম্যানও। ফাইল চিত্র।
আরও পড়ুন: সন্ত্রাস নথিতে ভুল স্বীকার
গত বুধবার শি তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘‘সংযুক্তির পথে হাঁটাই ইতিহাস। তাইওয়ানের স্বাধীনতা আসলে ইতিহাসের উল্টো স্রোত এবং তার পরে আর কোনও পথ খোলা নেই।’’ চিনা প্রেসিডেন্টের মতে, ‘‘তাইওয়ানের মানুষকে বুঝতে হবে স্বাধীনতা শুধু তাদের দুর্ভোগ বাড়াবে। তাইওয়ানের স্বাধীনতা প্রচার সংক্রান্ত কোনও ধরনের সক্রিয়তা বেজিং সহ্যও করবে না। সংযুক্তির মাধ্যমে চিনের মানুষও উজ্জীবিত হবেন।’’ পাশাপাশি আন্তর্জাতিক স্তরে চিনফিংয়ের বার্তা ছিল, তাইওয়ানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি চিনের ‘ঘরোয়া রাজনীতি’র বিষয়। এ ক্ষেত্রে বিদেশি কোনও পক্ষের হস্তক্ষেপ সহ্য করা হবে না। চিনফিংয়ের বক্তৃতার প্রেক্ষিতে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েন জানিয়েছিলেন, সংযুক্তির কোনও প্রশ্নই নেই। বেজিংয়ের শর্ত মেনে তাইওয়ান কোনও দিনই চিনের সঙ্গে জুড়বে না।
আবার, ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়ে রাশিয়া থেকে কেনা অত্যাধুনিক ভূমি থেকে আকাশ ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সেরে ফেলেছে চিন। প্রতি সেকেন্ডে তিন কিলোমিটার গতিতে ধাবমান একটি ব্যালিস্টিক এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র, যা লক্ষ্যবস্তুকে নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম। চিন ও রাশিয়ার সঙ্গে আমেরিকার সম্পর্ক যখন খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে, ঠিক তখনই বেজিংয়ের এই পরীক্ষাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে কূটনৈতিক মহল। এশিয়া মহাদেশে আমেরিকার বাড়তে থাকা সামরিক প্রভাব সামাল দিতে এই রুশ-চিনা যৌথ সামরিক পরীক্ষাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার চিনা প্রেসিডেন্টের বার্তা নতুন করে যুদ্ধের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিল।
(আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক চুক্তি, আন্তর্জাতিক বিরোধ, আন্তর্জাতিক সংঘর্ষ- সব গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের আন্তর্জাতিক বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy