ছবি: সংগৃহীত
কাজের সূত্রে বেজিংয়ে থাকেন। নববর্ষের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাউকে জানাননি। বেজিংয়ে ফিরতেই দেখলেন বাড়ির দরজায় পুলিশ অপেক্ষা করছে। আগে গায়ে জ্বর আছে কি না দেখা হবে, তার পর তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে।
ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান লোকটি। নোভেল করোনাভাইরাসের উৎসস্থল বলে চিহ্নিত উহান থেকে ৫৩৬ কিলোমিটার দূরে নানজিংয়ে তাঁর বাড়ি। সাড়ে ছ’ঘণ্টার দূরত্ব। ছুটিতে সেখানে যাওয়ার পরে আশপাশে ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে হইচই শুরু হয়। নিজেই বাড়িতে ‘কোয়ারান্টাইন’ হয়ে যান লোকটি। কিন্তু এর কোনও কিছুই তো পুলিশের জানার কথা নয়। পরে জানতে পারেন, গত কয়েক মাসে কারা উহান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় গিয়েছিলেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য ঘেঁটে তাঁকে চিহ্নিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
সরকারি ঘোষণা অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৭২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে চিনে। আক্রান্ত ৩৪, ৫৯৮। রোগ ছড়াচ্ছে হু হু করে। সংক্রমণ ঠেকাতে বাসিন্দাদের কে কোথায় যাচ্ছেন, কী করছেন, ‘ডেটা ট্র্যাকিং’ ও ‘আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স’ (এআই)-এর সাহায্যে সব কিছু নজরে রাখছে প্রশাসন।
কিছু চিনা প্রযুক্তি সংস্থা এক বিশেষ মোবাইল অ্যাপ তৈরি করেছেন। এতে ব্যবহারকারীরা জানতে পারবেন, তাঁরা যে বিমানে উঠেছেন, বা ট্রেনে চেপেছেন, তাতে কোনও ভাইরাস আক্রান্ত রোগী সফর করেছেন কি না। গুয়াংঝৌয়ের একটি বাজার এলাকায় আবার যন্ত্রমানব নিয়োগ করা হয়েছে। কেউ মাস্ক পরে না-হাঁটলেই, বকুনি দিচ্ছে রোবট।
বেজিংয়ের কোনও কোনও হাউসিং কমিটি নিজেরাই ডেটা ট্র্যাকিং শুরু করেছে। এমনই একটি কমিটি জানিয়েছে, তাদের অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্সে ২৪০০ লোক থাকেন। প্রত্যেকের গতিবিধি নজরে রাখা হচ্ছে। চিনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনও বাসিন্দাদের এ ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন।
সব সময় কাছে রাখা যায় এমন থার্মোমিটার বিলি করা হচ্ছে বাসিন্দাদের মধ্যে। বাসস্ট্যান্ডগুলোতে বিশেষ বুথ তৈরি করা হয়েছে। যাত্রী কিংবা পথচলতি লোকেদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে জ্বর-সর্দিকাশি রয়েছে কিনা। কোথাও কোথাও ‘ফিভার ডিটেকশন সিস্টেম’ বসানো হয়েছে। যন্ত্র ও ইনফ্রারেড ক্যামেরার মাধ্যমে পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। কারও গায়ে যদি ৯৯ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রাও থাকে, সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বেজে উঠছে। যন্ত্রটির নির্মাতা সংস্থার দাবি, এক মিনিটে ২০০ জনকে পরীক্ষা করতে পারে তাদের সিস্টেম।
যন্ত্রের সাহায্যে এ সব কর্মকাণ্ড চললেও এর পিছনে রয়েছে বহু লোক। একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা জানিয়েছে, তাদের ১০০ কর্মী দিনরাত এক করে কাজ করছেন। যবে থেকে এই রোগ সংক্রমণ নিয়ে হাহাকার শুরু হয়েছে, সেই থেকে তাঁরা পরিবার থেকে দূরে কর্মস্থলে পড়ে রয়েছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এই প্রথম চিনে কোনও বিদেশির মৃত্যু হল। এক মার্কিন প্রৌঢ়া ও জাপানের এক যুবক মারা গিয়েছেন। ৬ ফেব্রুয়ারি ৬০ বছরের ওই মার্কিন মহিলার মৃত্যু হয়েছে উহানে। চিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক আগেই জানিয়েছে, ১৯ জন বিদেশির শরীরে ওই ভাইরাস মিলেছে। চিনের হুবেই প্রদেশে আটকে পড়া কেরলের ১৫ জন পড়ুয়া আজ দেশে ফিরেছেন। তাঁরা কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন আজ। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরে তাদের স্থানীয় মেডিক্যাল কলেজে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy