সংখ্যালঘু নিপীড়নের প্রসঙ্গ টেনে চিনের অস্বস্তি বাড়াল আমেরিকা।
অতিমারি পরিস্থিতির জন্য সরাসরি চিনকে কাঠগড়ায় তুলেছিল আমেরিকা। তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা খানিকটা হলেও থিতিয়ে এসেছিল। কিন্তু সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগকে হাতিয়ার করে ফের আগুনে ঘি ঢালল আমেরিকা। তাদের দাবি, দেশের সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রতি চিন যে আচরণ করছে, তা গণহত্যারই সমান।
শুক্রবার আন্তর্জাতিক একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যোগ দেন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন। চিনের একাধিক পদক্ষেপের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি সংখ্যালঘু নিপীড়নের অভিযোগও তোলেন। রবার্ট বলেন, ‘‘গণহত্যা যদি না-ও বা হয়, শিনজিয়াংয়ে যা চলছে, তা গণহত্যারই সমান।’’
দেশের উত্তর-পশ্চিমের স্বশাসিত শিনজিয়াং প্রদেশে চিন সংখ্যালঘু উইঘুর এবং অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নৃশংস অত্যাচার চালাচ্ছে বলে বেশ কয়েক বছর ধরেই অভিযোগ সামনে আসছে। গত জুন মাসে মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেয়ো অভিযোগ করেন, সরকারের নির্দেশে সেখানে জোর করে মুসলিমদের নির্বীজকরণ, গর্ভপাত এবং পরিবার সঙ্কোচনে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি মুসলিম মহিলাদের মাথা মুড়িয়ে, তা দিয়ে কেশসজ্জার নানা পণ্য তৈরি করে চিন তা বিদেশ বিভুঁইয়ে পাঠাচ্ছে বলেও অভিযোগ সামনে আসে। জুন মাসেই মার্কিন শুল্ক ও সীমান্ত নিরাপত্তা দফতর শিনজিয়াং প্রদেশ থেকে আসা তেমন বহু পণ্য আটক করে। সেগুলি মানুষের চুল দিয়ে তৈরি বলে নিশ্চিত করে তারা।
আরও পড়ুন: ‘আপনিই আমার সরকার ফেলেছেন’, নওয়াজের নিশানায় পাক সেনাপ্রধান
ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে সেই প্রসঙ্গও টেনে আনেন রবার্ট। তিনি বলেন, ‘‘চিনে সরকারি নির্দেশে জোর করে উইঘুর মহিলাদের মাথা মুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তা দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে কেশসজ্জার নানা পণ্য, যা আমেরিকাতেও পাঠানো হয়েছে।’’ তবে মার্কিন সরকারের তরফে চিনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এই প্রথম। এতে চিন আরও বিপাকে পড়তে পারে বলে মত কূটনীতিবিদদের। রবার্টের মন্তব্য নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি চিন।
শিনজিয়াংয়ে উইঘুর এবং অন্য মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপর অত্যাচার চালানোর অভিযোগে ইতিমধ্যেই চিনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে একাধিক সংগঠন। তাদের অভিযোগ, সেখানে ১০ লক্ষের বেশি মুসলিমকে বন্দি করে রেখেছে চিন। প্রতি নিয়ত সেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং গণহত্যার মতো ঘটনা ঘটছে।
সেপ্টেম্বরে অস্ট্রেলিয়া সরকারের অনুমোদনপ্রাপ্ত একটি থিঙ্কট্যাঙ্ক সংস্থা শিনজিয়াং নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, সাম্প্রতিক কালে শিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় ১৬ হাজার মসজিদ ধ্বংস করেছে চিন সরকার। এর মধ্যে গত তিন বছরেই অধিকাংশ মসজিদ ভাঙা হয়েছে। সব মিলিয়ে উইঘুর এবং তুর্কিক ভাষায় কথা বলা ১০ লক্ষের বেশি ইসলাম ধর্মালম্বীকে সেখানে ডিটেনশন শিবিরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বলপূর্বক তাঁদের ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: নভেম্বরে আমেরিকায়, মার্চে ভারতে করোনা টিকা মেলার ইঙ্গিত
চিন যদিও শুরু থেকেই যাবতীয় অভিযোগই অস্বীকার করে আসছে। তাদের দাবি, শিনজিয়াংয়ের মুসলিমরা পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করেন। তাদের বদনাম করতে খামোকা মিথ্যে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। ডিটেনশন শিবিরে মুসলিমদের বন্দি করে রাখার অভিযোগও উড়িয়ে দেয় চিন। তাদের দাবি, উগ্রবাদী চিন্তাভাবনা দূর করতে এবং দারিদ্র কাটিয়ে উঠতে ওই শিবিরগুলিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মাত্র।
যাবতীয় বিতর্ক ও বিরোধিতা কাটিয়ে চলতি সপ্তাহে রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার পরিষদেও পুনর্নির্বাচিত হয়েছে চিন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy