Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Bangladesh-China

বাংলাদেশে বাজার দখলে তৎপরতা বাড়িয়েছে বেজিং

তিস্তার জলের ভাগ নিয়ে নয়াদিল্লি-ঢাকা ঐকমত্য না হলেও বাংলাদেশে ওই নদীতে ড্রেজিং করে ও কয়েকটি জলাধার গড়ে জলের পরিকল্পিত ব্যবহারের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে ২০১৭-তে ঢাকার কাছে জমা দেয় চিন।

An image of Sheikh Hasina

শেখ হাসিনা। —ফাইল চিত্র।

অনমিত্র চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০৮:৩০
Share: Save:

নির্বাচনের পরে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন হওয়া মাত্র সে দেশের বাজার দখলে তৎপরতা বাড়িয়েছে চিন। একই সঙ্গে বাংলাদেশে বড় মাপের বেশ কিছু প্রকল্প রূপায়ণে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য সরকারের উপরে চাপ দিচ্ছে বেজিং। আপাতত বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য তারা একটি বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করার কথা জানিয়েছে। ডলারের বদলে নিজস্ব মুদ্রার সরাসরি বিনিময়ের মাধ্যমে বাণিজ্যের প্রস্তাব দিয়েছে বেজিং, যা ডলার সঙ্কটের কালে বাংলাদেশ সরকার প্রয়োজনীয় বলে মনে করতে পারে।

তিস্তার জলের ভাগ নিয়ে নয়াদিল্লি-ঢাকা ঐকমত্য না হলেও বাংলাদেশে ওই নদীতে ড্রেজিং করে ও কয়েকটি জলাধার গড়ে জলের পরিকল্পিত ব্যবহারের একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে ২০১৭-তে ঢাকার কাছে জমা দেয় চিন। কিন্তু ভারতের আপত্তি থাকায় বাংলাদেশ সরকার চিনের সেই প্রকল্পে এখনও ছাড়পত্র দেয়নি। সেই ছাড়পত্র পেতে এখন উঠেপড়ে লেগেছে চিন। হাছান মাহমুদ বিদেশমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেওয়ার দু-এক দিনের মধ্যে ঢাকায় চিনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তাঁকে অভিনন্দন জানাতে যান। সেখান থেকে বেরিয়ে ইয়াও সাংবাদিকদের জানান, বিদেশমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি তিনি তিস্তা প্রকল্পটিকে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য তাগাদাও দিয়েছেন। ইয়াও দাবি করেন, “প্রতিবেশী একটি দেশ-এর আপত্তির কারণে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন এই প্রকল্প ঝুলিয়ে রেখেছে। এর ফলে উত্তর বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ অসুবিধা ভোগ করছেন।” বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটি দলকে তিস্তা অববাহিকায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের প্রস্তাবিত কর্মকাণ্ড দেখাবেন বলেও জানিয়েছেন চিনা দূতাবাসের কর্তারা। সরকারের উপরে চাপ সৃষ্টির জন্যই চিন এই কাজ করছে বলে দাবি বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের এক অফিসারের।

বাংলাদেশে ডলারের রিজার্ভ কম থাকায় আমদানিতে রাশ টানছে সরকার। ইতিমধ্যেই ডলারকে এড়িয়ে রুপি ও টাকায় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য শুরু করেছে ভারত। এর ফলে বাংলাদেশের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলির জোগান স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রক। এ বার চিনও এই প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী আবদুস সালামের সঙ্গে দেখা করেন চিনা রাষ্ট্রদূত। ওয়েন জানান, বিশ্বজুড়েই ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। নিজস্ব মুদ্রায় বাণিজ্য করে এই সঙ্কট এড়ানো যায়। বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী জানিয়েছেন, তাঁদের পরবর্তী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় পরিকাঠামো ক্ষেত্রে অর্থ বিনিয়োগ করতে চেয়েছে চিন। চিনের প্রস্তাবে উৎফুল্ল বাংলাদেশের কিছু ব্যবসায়ী মুদ্রা বিনিময় সহজ করতে বাংলাদেশে এক বা একাধিক চিনা ব্যাঙ্ক খোলার আর্জি জানিয়েছেন।

নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের শেখ হাসিনা সরকারকে ‘চিনের অনুগত’ বলে চিহ্নিত করেছিল আমেরিকা। যদিও হাসিনা বার বার বলেছেন, পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য তাঁর বিপুল অর্থের প্রয়োজন। বিশ্বব্যাঙ্ক বা অন্যান্য আন্তর্জাতিক তহবিল থেকে সে টাকা ধার নিতে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয় সরকারকে। চিনের কাছ থেকে সেই অর্থ মিললে তাঁর নিতে বাধা নেই। তবে ঋণের ফাঁদ নিয়েও তাঁরা অবহিত ও সতর্ক। হাসিনা একাধিক বার বলেছেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ভাবে নিবিড়। চিনের সঙ্গে সম্পর্ক একান্তই আর্থিক। দুইয়ের মধ্যে সংঘর্ষ নেই। কিন্তু বাস্তবে দুই সম্পর্কে সংঘাত ঘটছেই। হাসিনা কী ভাবে এই ভারসাম্য রাখেন, সে দিকেই নজর কূটনীতিকদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Sheikh Hasina Bangladesh China
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy