Advertisement
E-Paper

ঢাকাকে চিনা হুমকি, অস্বস্তি সাউথ ব্লকের

কূটনৈতিক শিবিরের মতামত, এটি নেহাতই ফাঁপা আওয়াজ নয়, বরং যথেষ্ট পরিকল্পনা করে নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়েছে শি চিনফিং প্রশাসন

ছবি প্রতীকী

ছবি প্রতীকী

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২১ ০৬:৪৭
Share
Save

ঢাকায় নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের সম্প্রতি বাংলাদেশকে দেওয়া প্রচ্ছন্ন হুমকির পরে অস্বস্তি সাউথ ব্লকে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র ভারত নয়, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক রাজনীতিতেই চিনের গা-জোয়ারি রণনীতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে চিনা দূতের মন্তব্যে। বিষয়টি জাপান বা আমেরিকার মতো দেশেরও নজর কেড়েছে বলে খবর।

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত চিনা রাষ্ট্রদূত একটি বক্তৃতায় কিছুটা আচমকাই মন্তব্য করেছেন যে, ‘কোয়াড’-এ (ভারত, আমেরিকা, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার চতুর্দেশীয় জোট) যোগ দিলে ঢাকাকে তার খেসারত দিতে হবে। ‘মারাত্মক ক্ষতি’ হবে চিন-বাংলাদেশ মধ্যে সম্পর্কেও। এই হুমকিকে অপ্রাসঙ্গিক বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা। তার কারণ, কোয়াড গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা বাড়ানোর কোনও পরিকল্পনাই নেই। ফলে ঢাকার অন্তর্ভুক্তির সামান্য সম্ভাবনাও আপাতত সেখানে নেই।

তা হলে কেন এই আগাম সতর্কতা?

সেই হিসেব কষতে বসে কূটনৈতিক শিবিরের মতামত, এটি নেহাতই ফাঁপা আওয়াজ নয়, বরং যথেষ্ট পরিকল্পনা করে নিজেদের ক্ষমতা দেখিয়েছে শি চিনফিং প্রশাসন। কোয়াড একটি উপলক্ষ মাত্র। সূত্রের মতে, বাংলাদেশকে (তথা গোটা অঞ্চলের বেশ কিছু দেশকেও) আগে থেকে রক্তচক্ষু দেখানো হল, যাতে ভারতের সঙ্গে (এবং আমেরিকার সঙ্গেও) কোনও রকম অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক বা কৌশলগত নতুন অংশীদারির আগে তারা দু’বার ভাবে।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশের প্রশংসনীয় অর্থনৈতিক বৃদ্ধি সম্পর্কে বেজিং যথেষ্ট সচেতন। সেই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে তাদের কৌশলগত অবস্থান সম্পর্কেও সজাগ চিন। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের কৌশলগত এবং বাণিজ্যিক নৈকট্য কখনওই খুব একটা ভাল ভাবে নেয়নি চিনা সরকার। ঢাকার সঙ্গে সম্প্রতি ওয়াশিংটন এবং টোকিয়ো যে পৃথক ভাবে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়াচ্ছে, সে ব্যাপারেও অবহিত বেজিং। সব মিলিয়ে ভারত, আমেরিকা এবং জাপানের সঙ্গে চিনের মহা-যোগাযোগ প্রকল্প ‘ওবর’-এর অংশীদার বাংলাদেশের পরিকাঠামোগত অংশিদারি চিনের অনভিপ্রেত।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, কোয়াড নিয়ে এই হুমকির মোড়কে বাংলাদেশকে স্পষ্ট বার্তা দিতে চেয়েছে শি চিনফিং সরকার। সেই বার্তাটি হল, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের বিরোধী শক্তির সঙ্গে যেন কোনও ভাবেই নতুন কোনও উদ্যোগে না-এগোয় ঢাকা।

ঘটনা হল, এই বিষয়টি নিয়ে এখনও প্রকাশ্যে মুখ খোলেনি সাউথ ব্লক। তার কারণ, এটা মুখ খোলার সময়ও নয়। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে এখন প্রবল চাপের মধ্যে রয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। এমনকি চিনের কাছ থেকেও সাহায্য নিতে হচ্ছে। আপাতত মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রতিবেশীদের সঙ্গে প্রতিষেধক-কূটনীতি। ঢাকা, মলদ্বীপ, নেপালের মতো দেশগুলি এতদিন ভারতের মুখাপেক্ষী ছিল প্রতিষেধকের দ্বিতীয় ডোজ়ের জন্য। কিন্তু দেশের ভাঁড়ারেই টান। সরকার চিনা প্রতিষেধক আমদানির কথাও ভাবছে।

তবে বিদেশ মন্ত্রক মনে করছে, গোটা দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কাছে এটা স্পষ্ট যে, বেজিং গোটা অঞ্চলে এমন কোনও জোট হতে দিতে চায় না, যা চিনের বাণিজ্য এবং কৌশলগত স্বার্থের বিরোধী। তা আটকানোর জন্য অদূর ভবিষ্যতে যেন তেন প্রকারেণ চেষ্টা করে যাবে এই অমিত শক্তিশালী দেশ। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ কাটার পরে আঞ্চলিক কূটনীতিতে এটি মোদী সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।

China Bangladesh

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}