লকডাউনে সুনসান ওয়াটারলু স্টেশন। ছবি রয়টার্স।
নতুন স্ট্রেনের আতঙ্কে থরহরি ব্রিটেন। মঙ্গলবার এক দিনে রেকর্ড সংখ্যক সংক্রমণ, ৬০ হাজারের বেশি। ব্রিটেনের জনস্বাস্থ্য দফতরের আশঙ্কা, যে ভাবে সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে, তাতে ভয় হচ্ছে, শীতে আরও খারাপ হবে পরিস্থিতি। তবে চিকিৎসক-নার্সদের একাংশের মতে, সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত শৈশব।
কয়েক মাসে আগে, যখন পরিস্থিতি একটু শুধরেছিল, সুরক্ষাবিধি মেনে স্কুলগুলো খুলে দেওয়া হয়েছিল। গত শুক্রবার থেকে ফের বন্ধ করা হয়েছে স্কুল। প্রশাসনের আশঙ্কা, শীঘ্রই রোগীর ভিড়ে হাসপাতালগুলো উপচে যাবে। রয়্যাল লন্ডন হসপিটাল ই-মেল মারফত তাদের কর্মীদের জানিয়েছেন, ‘ডিসাস্টার মেডিসিন মোড’। আর এর মধ্যে সব চেয়ে ভয় খুদে করোনা-রোগীদের নিয়ে। লন্ডনের কিংস কলেজ হসপিটালের মেট্রন লরা ডাফেল জানান, নতুন স্ট্রেনে বড়দের তুলনায় বাচ্চারা ও যুবক-যুবতীরা বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। এদের কারও অন্য কোনও জটিল অসুখ নেই। কিন্তু যে হারে কমবয়সিদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছে, তা ভয়ের। লরা বলেন, ‘‘আমাদের হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ড কোভিড-আক্রান্তেই ভর্তি।’’
লরার কথায়, ‘‘বর্তমান পরিস্থিতি খুবই অন্য রকম। সে জন্যই আমরা যাঁরা প্রথম সারিতে থেকে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়ছি, ...ডাক্তার, নার্স সকলে খুব ভয় পেয়ে আছি।’’ আরও বলেন, ‘‘প্রথম সংক্রমণ ঢেউয়ে বাচ্চারা খুবই কম আক্রান্ত হয়েছিল। এখন একটা গোটা ওয়ার্ডে শুধু করোনায় আক্রান্ত শিশু।’’ অন্য কিছু হাসপাতালেও এক পরিস্থিতি বলে জানিয়েছেন লরা।
ব্রিটেনের স্বাস্থ্য পরিষেবার একাংশ অবশ্য এতটাও খারাপ পরিস্থিতি মানতে রাজি নয়। ‘রয়্যাল কলেজ অব পেডিয়াট্রিকস অ্যান্ড চাইল্ড হেল্থ’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘‘এখনও পর্যন্ত এত ভয়ানক চাপের কথা জানাননি কেউ। তবে হ্যাঁ, বাচ্চাদের করোনা-আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। এদের বেশির ভাগের শরীরেই তেমন কোনও উপসর্গ নেই। থাকলেও সামান্য।’’
ব্রিটেন স্ট্রেন ছড়িয়েছে ইউরোপের একাধিক দেশে। আমেরিকায় তিন জনের শরীরে এই স্ট্রেন ধরা পড়েছে। কিন্তু তা বাদ দিয়েও এই দেশটির হাল সব চেয়ে খারাপ। ২ কোটির উপরে সংক্রমণ। ৩ লক্ষ ৬৫ হাজার মৃত্যু। গোটা বিশ্বে করোনা-আক্রান্ত ৮ কোটি ৬৯ লক্ষ। মারা গিয়েছেন ১৮ লক্ষ ৭৯ হাজার। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরেই চিনের কাছে আর্জি জানিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)— সংক্রমণের উৎসস্থল উহানে গিয়ে তদন্ত চালানোর অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে টালবাহানা চালাচ্ছিল বেজিং প্রশাসন। শেষমেশ জানুয়ারির গোড়ায় একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো চূড়ান্ত হয়। কিন্তু কাল হু প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস জানিয়েছেন, সেটা বাতিল করতে হয়েছে। চূড়ান্ত অনুমতি দেয়নি চিন। হু-প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস কাল বলেন, ‘‘খুবই হতাশ লাগছে।’’
‘চিনপন্থী’, ‘চিনের হয়ে কথা বলেন’— গত এক বছরে এমন একাধিক অভিযোগের মুখে পড়েছেন গেব্রিয়েসাস। এই অভিযোগে আমেরিকার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হু-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুমকিও দেন। কাল সেই ‘চিনপন্থী’ গেব্রিয়েসাস জানান, বহু বার সফর বাতিল হওয়ার পরে জানুয়ারির গোড়ায় ১০ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দলের চিনে যাওয়া স্থির হয়েছিল। সেটাও শেষমেশ হল না। তিনি বলেন, ‘‘আজ জানতে পেরেছি, চিন এখনও চূড়ান্ত অনুমতি দেয়নি। হতাশ লাগছে। তদন্তকারী দলের দু’জন চিনের উদ্দেশে রওনা হয়ে গিয়েছিলেন। বাকিদের সফর শেষ মুহূর্তে আটকে দেওয়া হয়। চিনের আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।’’ তবে সফর বাতিল হলেও চিনের উপর চাপ বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গেব্রিয়েসাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy