ঢাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জ্বলছে আগুন। ছবি: সংগৃহীত।
ঢাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হামলার অভিযোগ উঠল। হামলার পর সেখানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীদের দাবি, ফ্যাসিবাদ-বিরোধী ছাত্র, শ্রমিক এবং জনতার ব্যানার নিয়ে একদল লোক তাঁদের দফতরের সামনে হাজির হন। তার পর দফতরে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। যদিও ওই সংগঠনের পাল্টা দাবি, তাঁদের উপরেই আগে হামলা চালানো হয়েছিল। জাতীয় পার্টির দফতরে এই হামলার পরেই সে দেশের রাজনৈতিক শিবিরগুলিতে প্রশ্ন উঠছে, বাংলাদেশে কি তবে এ বার ‘একদলীয় গণতন্ত্র মডেল’ প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে? প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর বার বার সে দেশে আক্রান্ত হয়েছে তাঁর দল আওয়ামী লীগ। সেই দলের ছাত্র শাখা ‘ছাত্রলীগ’কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সম্প্রতি। এ বার হামলার অভিযোগ উঠল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। তবে কি এ বার বাংলাদেশের রাজনীতিতে থেকে যাবে শুধুই বিএনপি (বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি)? জাতীয় পার্টির মহাসচিব মহম্মদ মুজিবুল হক প্রশ্ন তুলেছেন, এ ভাবে রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলা হলে দেশে গণতন্ত্র কোথায়?
আগামী শনিবার ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের ডাক দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এই কর্মসূচির জন্য পুলিশের অনুমতিও চেয়েছে তারা। কর্মসূচির প্রস্তুতির জন্য বৃহস্পতিবার দলীয় দফতরে উপস্থিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির নেতা-কর্মীরা। মুজিবুল জানিয়েছেন, সেই সময়ই হামলা চালানো হয়েছে দলীয় কার্যালয়ে। হামলাকারীরা শাহবাগ থেকে এসেছিলেন বলেই মুজিবুলের দাবি। তিনি জানিয়েছেন, প্রথমে হামলাকারীরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হলে তাঁদের সরিয়ে দেন জাতীয় পার্টির কর্মীরা। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে তাঁরা আবার এসে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালান। এর পর সেখানে আগুন ধরিয়ে দেন। দমকল বিভাগকে খবর দেওয়া হয়। দমকল কর্মীরা এসে আগুন নেভান। মুজিবুল বলেন, ‘‘এ ভাবে যদি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়, তা হলে দেশে কিসের গণতন্ত্র, কিসের রাজনীতি?’’
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুকে পোস্ট করে জাতীয় পার্টিকে ‘জাতীয় বেইমান’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁদের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছেন জাতীয় পার্টির কর্মীরা। হাসনাত পোস্টে লিখেছেন, ‘‘জাতীয় বেইমান এই জাতীয় পার্টি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজয়নগরে আমাদের ভাইদের পিটিয়েছে, অস্ত্র নিয়ে মহড়া দিয়েছে। এ বার এই জাতীয় বেইমানদের উৎখাত নিশ্চিত।’’
এর কিছু ক্ষণ পর আরও একটি পোস্ট করে হাসনাত মিছিল করে বিজয়নগরে যাওয়ার ডাক দেন। সেখানে লেখেন, ‘জাতীয় বেইমান’দের নিশ্চিহ্ন করতে হবে। প্রসঙ্গত, এই বিজয়নগরেই রয়েছে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর অন্য এক সমন্বয়ক সারজিস আলমও বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একই ধরনের পোস্ট করেন সমাজমাধ্যমে। মিছিল নিয়ে বিজয়নগরে যাওয়ার কথা লেখেন সেখানে। এ সবের প্রেক্ষিতে সে দেশের একাধিক রাজনৈতিক শিবিরের প্রশ্ন, তবে কি জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে আগুন ধরানোর নেপথ্যে রয়েছে এই ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর নেতা-কর্মীরা? ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর দাবি মেনেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনার দল আওয়ামী লীগের ছাত্রশাখা ‘ছাত্রলীগ’কে ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। এ বার কি জাতীয় দলকে ‘উৎখাত’ করতে চাইছে তারা, যেমন দাবি করেছে সমাজমাধ্যমে? সেই প্রশ্নই উঠছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আপাতত হাসিনা এবং তাঁর দল আওয়ামী লিগের কোনও জায়গা নেই বলেই মনে করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। ইউনূসের কথায়, “স্বল্প সময়ের জন্য হলেও, হাসিনা এবং আওয়ামী লিগের বাংলাদেশের রাজনীতিতে কোনও জায়গা নেই।”
গত জুলাই মাস থেকে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। নেপথ্যে ছিল ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’। সেই আন্দোলনের জেরে গত ৫ অগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়। দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন হাসিনা। এর পরেই দেশ জুড়ে ভেঙে ফেলা হয় একের পর এক বঙ্গবন্ধুর মূর্তি। আগুন ধরানো হয় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে। তার পর ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর সমর্থনে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার, যার মাথায় রয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ইউনূস। ‘ছাত্রলীগ’ নিষিদ্ধ করার পর বাংলাদেশের ছ’টি মেডিক্যাল কলেজের নাম বদল করা হয়। প্রাক্তন শাসকদল আওয়ামী লীগের প্রয়াত এবং বর্তমান নেতাদের নামে ছিল সেই কলেজগুলি। এ বার কি তবে কোপ জাতীয় পার্টির উপর? উঠছে প্রশ্ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy