উৎসব একতার প্রতীক। ফাইল চিত্র।
কাশফুলের দোলা আর শিউলির গন্ধ জানান দেয় আসন্ন শারদোৎসবের। কিন্তু দক্ষিণ গোলার্ধের সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকায় মায়ের আগমন হয় বসন্তের আমেজে, বেগুনি জ্যাকারান্ডার আভায়। এমনটাই দেখে অভ্যস্ত গত ১৮ বছর ধরে। দক্ষিণ আফ্রিকায় সপরিবার বাস। কর্মসূত্রে কয়েকটি শহরে থাকা। এখানে বহু ভারতীয় থাকেন। তাই দুর্গাপুজোর নানা রূপ। কিছু শহরে নবরাত্রি পালন করা হয় বা শেরাওয়ালি রূপে মা দুর্গাকে পুজো করা হয়। ডারবান শহরের রামকৃষ্ণ সেন্টারে বেলুড় মঠ থেকে আনা মায়ের মূর্তির পুজো হয় নবরাত্রির বিধি অনুযায়ী। একই ভাবে স্থানীয় শিল্পীর তৈরি প্রতিমা পুজো করা হয় সারদা আশ্রমেও।
বাঙালিয়ানায় ভরপুর পুজো কেবল দু’টি শহরে—কেপ টাউন আর জোহানেসবার্গ। বেঙ্গলি হিন্দু কমিউনিটি কেপ টাউন (বিএইচসিসিটি) দুর্গাপুজো করছে ২০১৪ থেকে। কুমোরটুলি থেকে মূর্তি আসে। কলকাতা থেকে পুরোহিত মশাই আসেন। এই পুজোর বিশেষত্ব হল একদম নির্ঘণ্ট মেনে পাঁচ দিন ধরে পুজো করা হয় প্রতিবছর, গুরুদ্বার ও গুজরাতি রাধাকৃষ্ণ মন্দির প্রাঙ্গণে। স্বল্প সদস্য হলেও আয়োজনে কোনও ত্রুটি থাকে না। বহু মানুষের জন্য ভোগ বিতরণ করা হয়। হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিএইচসিসিটি নিজেদের তহবিল থেকে একটা বড় অংশ দুঃস্থ ও অনাথ শিশুদের কল্যাণে দান করে।
গত ছ’বছর ধরে জোহানেসবার্গে থাকি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার সূত্রে। এই শহরে বহুদিন ধরে অনেক বাঙালির আনাগোনা। তাই বাঙালির সংখ্যা অনেক বেশি। যেখানেই বাঙালি গিয়েছে, সঙ্গে নিয়ে গিয়েছে তার রীতি, রেওয়াজ ও সংস্কৃতিকে। এখানে গড়ে ওঠা আমাদের বাসা অর্থাৎ বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ আফ্রিকা (বাসা) প্রবাসের মাটি আঁকড়ে নিজেদের বাঙালিয়ানার জায়গাকে ঠিক পাকাপোক্ত করে নিয়েছে। ২০০৫ সালে মাত্র ৭-৮টি পরিবার মিলে দুর্গাপুজো দিয়ে শুরু। আর বর্তমানে ৭২টি পরিবার।
অতিমারির হাত থেকে এই বছর কিছুটা স্বস্তি। তাই জোহানেসবার্গের দুই বাংলার মানুষ নতুন আশা ও উদ্দীপনায় বুক বেঁধেছেন। শারদোৎসবের প্রস্তুতি তুঙ্গে। সদস্যদের যোগদানে হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। খাওয়াদাওয়ার সঙ্গে বাঙালি আড্ডায় মশগুল হতে মহালয়ার দিন একত্রিত হবে ‘বাসা’ পরিবার। এ বছর ‘বাসা’-র ১৮তম পুজো। অনুষ্ঠিত হবে মালবোরো কমিউনিটি সেন্টারে। ডাকের সাজে কুমোরটুলি থেকে এসেছে প্রতিমা। প্রতিবছরের মতো এ বারেও পুরোহিত আসছেন কলকাতা থেকে। দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো ও কালীপুজো সেরে ফিরবেন।
উৎসব আমাদের জিয়ন কাঠি। একতার প্রতীক। সাউথ আফ্রিকান কমিউনিটির বিভিন্ন ধর্ম ও ভাষার মানুষ যোগদান করেন এই পুজোয়। বাড়িয়ে দেন সাহায্যের হাত। পুজো উপলক্ষে এবং বিভিন্ন সময়ে ‘বাসা’র একটি বিশেষ উদ্যোগ হল সমাজসেবামূলক কাজ— সকল সদস্যের সাহচর্যে বঞ্চিত মানুষের পাশে থাকা। এ বারেও কোনও ব্যতিক্রম নেই।
সপ্তাহান্তের ছুটির সুবিধা ধরে জোহানেসবার্গে এই বছর দুর্গাপুজো শুরু ৬ অক্টোবর। সে দিন মায়ের বোধন আর সপ্তমীর পুজো। সন্ধ্যাবেলায় থাকছে আনন্দমেলা—সদস্যদের তৈরি বিভিন্ন ধরনের রান্নার সম্ভার নিয়ে বাঙালির রসনাতৃপ্তির সুযোগ। পরের দিন অষ্টমী ও সন্ধিপুজো। অষ্টমীর দিন ভোগ ও প্রসাদ বিতরণ করা হয় সকল দর্শনার্থীদের। প্রতি বছরের মতো এ বছরেও প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ জনের জন্য ব্যবস্থা থাকবে খিচুড়ি, লাবড়া, নানা রকমের ভাজা, চাটনি, পায়েস আর মিষ্টির। রান্নার আয়োজন থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সবই সদস্যেরা একত্রিত হয়ে করেন। সন্ধেবেলায় অষ্টমীর আনন্দমেলায় অংশগ্রহণ করবে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের অ্যাসোসিয়েশন। থাকবে ভিন্ন রাজ্যের খাওয়াদাওয়ার পসরা। ৮ অক্টোবর নবমীর পুজো ও যজ্ঞ। আর তার পরে মাকে বিদায় জানানোর পালা— দর্পণ বিসর্জন ও সিঁদুর খেলা। প্রতি বছরের মতো এ বারেও বিজয়া সম্মিলনীর ভোজ হবে বিশেষ আকর্ষণীয়। নির্ঘণ্ট মেনে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজো হবে পরের দিন, ৯ অক্টোবর।
প্রকৃত অর্থেই এটি সর্বজনীন পুজো হয়ে উঠেছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় এই উৎসব সর্বধর্ম এবং সর্বজাতির মিলন উৎসব। জগজ্জননীর পুণ্য আগমনের আনন্দ ও কৃপা ছড়িয়ে পড়ুক বিশ্বে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy