বিমানবন্দরে সিরীয় খুদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো। ছবি: রয়টার্স।
বৃহস্পতিবার রাত। অন্টারিও প্রদেশের টরন্টোর মিসিসাগা বিমানবন্দরে তখন ভালই ভিড়। খোদ দেশের প্রধানমন্ত্রী এসেছেন একটি বিশেষ বিমানের কিছু যাত্রীকে অভ্যর্থনা জানাতে। তাঁকে ঘিরে সরকারি আধিকারিকদের ভিড়। রয়েছেন অন্টারিওর আঞ্চলিক প্রধানমন্ত্রীও।
বেইরুট থেকে আসা সেই বিমান যখন কানাডার মাটি ছুঁল, বিমানবন্দর জুড়ে তখন চরম ব্যস্ততা। কোথাও থরেথরে রাখা ‘ওয়েলকাম কিট’। কোথাও আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আসা প্রতিনিধি দল সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি। না, কোনও বিদেশি রাষ্ট্রনেতা নয়, সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। কাল বেইরুট থেকে ১৬৩ জন সিরীয়কে কানাডা নিয়ে এল দেশের সামরিক বিমান। বিমান থেকে নামা প্রথম দু’টি পরিবারের সঙ্গে কথাও বললেন ট্রুডো। নিজের হাতে তুলে দিলেন গরম কোট, স্নো বুট-সহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সামগ্রী। কানাডা সরকার জানিয়েছে, মোট ২৫ হাজার সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে তাদের।
মাত্র দু’মাস হল ক্ষমতায় এসেছেন জাস্টিন পিয়ের জেমস ট্রুডো। লিবারাল পার্টির এই নেতা দেশের প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসার পরপরই বুঝিয়েছিলেন, তাঁর পূর্বসূরিদের থেকে তাঁর চিন্তা-ভাবনা আলাদা। বুঝিয়েছিলেন, অন্য ধনী দেশগুলো আয়লান কুর্দির প্রতিবেশীদের জায়গা করে না দিলেও তিনি তাঁর দেশের দরজা খুলে দেবেন।
এক দিকে যখন ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা আমেরিকায় মুসলিমদের প্রবেশে আংশিক নিষেধাজ্ঞার পক্ষে সওয়াল করছেন, তখন প্রতিবেশী কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের পদক্ষেপ তাৎপর্যপূর্ণ তো বটেই। ট্রাম্পের বক্তব্যের প্রতিবাদে সমালোচনার ঝড় উঠেছে যথারীতি। আজ নিউ ইয়র্কের রাস্তায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মিছিলও বেরিয়েছে। ‘ডাম্প ট্রাম্প’, ‘রিফিউজি ওয়েলকাম’ স্লোগান উঠেছে সেখানে। কিন্তু এর উল্টো ছবিও আছে। অর্থাৎ আমেরিকার একটা অংশ মনে করছে, ট্রাম্পই ঠিক। প্যারিস, ক্যালিফোর্নিয়ায় একের পর এক সন্ত্রাসবাদী হামলা আমেরিকার সেই ভীতি আরও পোক্ত করেছে বলে মনে করছেন অনেকে। সম্প্রতি এক মার্কিন দৈনিকের করা সমীক্ষায় সেই ছবিই প্রতিফলিত হয়েছে। শরণার্থীর বেশে আরও কিছু মুসলিম সন্ত্রাসবাদী দেশে ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আমেরিকাবাসী। তাই নিউ ইয়র্কের সেই মিছিলের পাশেই এমন প্ল্যাকার্ডও দেখা গিয়েছে, যেখানে লেখা, ‘উই ওয়ান্ট ট্রাম্প’, ‘নো মোর সিরিয়ানস’।
শুধু আমেরিকাই নয়। শরণার্থীদের জন্য দরজা খোলাটা নিরাপদ নয় বলে মনে করছে ইউরোপের বেশ কিছু দেশও। সম্প্রতি ফ্রান্সের কিছু স্থানীয় নির্বাচনে ভাল ফল করেছে অতি গোঁড়া দক্ষিণপন্থীদের দল। যারা ‘ফ্রান্স শুধু ফরাসিদের জন্য’ তত্ত্বেই বিশ্বাস করে। প্যারিস হামলা পরবর্তী সময়ে ইরাক বা সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থীদের তাই জাস্টিন ট্রুডোর মতো অভ্যর্থনা জানানোর কথা হয়তো তাই ভাবতে পারছে না ওলাঁদ সরকার।
ট্রুডো কিন্তু আজ সংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘আজ ওঁরা সিরিয়া থেকে এসেছেন বলে আমরা ওঁদের শরণার্থী বলছি। কিন্তু কয়েক দিন পরেই ওঁদের পরিচয় হবে, ওঁরা কানাডাবাসী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy