California's largest lake Salton sea now become toxic for animals dgtl
California
মানুষের হাতে জন্ম, মানুষের হাতেই মৃত্যু, ভয় ধরায় এই নদীর গল্প
কলোরাডো নদী থেকে খাল কেটে স্যালটন সিঙ্কে জল ঢুকিয়ে তৈরি হয়েছিল স্যালটন হ্রদ।
নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১১:৩৬
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১১৮
এক সময়ে ক্যালিফোর্নিয়ার কলোরাডো মরুভূমির প্রাণ হয়ে উঠেছিল স্যালটন নদী। কাছের কলোরাডো নদী থেকে খাল কেটে স্যালটন সিঙ্কে জল ঢুকিয়ে তৈরি হয়েছিল স্যালটন হ্রদ। পরে কলোরাডো নদী প্লাবিত হয়ে সেই হ্রদকেই পরিণত করেছিল নদীতে।
০২১৮
অথচ আজ ওই নদী বিলুপ্তির মুখে দাঁড়িয়ে। এক সময়ে প্রাণ হয়ে ওঠা নদী আজ মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের কাছে আতঙ্কের আর এক নাম। কেন এমন পরিণতি হল নদীর?
০৩১৮
১৯০০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি পাশের কলোরাডো নদী থেকে খালের মাধ্যমে স্যালটন সিঙ্কের জল নিয়ে আসার কাজ শুরু করেন।
০৪১৮
১৯০৫ সাল নাগাদ এই খাল কাটার কাজ সম্পূর্ণ হয়। কলোরাডো নদী থেকে জলের স্রোত বইতে শুরু করে শুষ্ক স্যালটন সিঙ্কে। শুষ্ক ডোবা ভরে ওঠে নদীর জলে। তখন থেকেই এটি প্রাণবন্ত হ্রদে পরিণত হয়।
০৫১৮
এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করা লোকজনেরা সেই জল কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ শুরু করে দেন। কিন্তু ২ বছরের মধ্যেই নদী আর হ্রদের সংযোগকারী খালে পলি জমে তার নাব্যতা কমে আসে।
০৬১৮
বন্যা দেখা দেয় এবং কলোরাডো নদীতে বান আসে। নদীর জল স্যালটন হ্রদ ছাড়াও আশেপাশের উপত্যকা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সেই জল জমেই তৈরি হয় স্যালটন নদী।
০৭১৮
বছরের অন্যান্য সময় জল শুকিয়ে গেলেও প্রতি বছর বর্ষায় জলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে নদী। যাকে কেন্দ্র করে চাষাবাদ, পর্যটনের প্রসার ঘটতে শুরু করে। নদীকে কেন্দ্র করে প্রচুর বন্যপ্রাণীরও দেখা মিলতে শুরু করে।
০৮১৮
এই নদীর জল এক সময় মাছ চাষের কাজেও লাগানো হত। নদীর জলে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের দেখা মিলতে শুরু করে। আবার ওই মাছের খোঁজে বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পরিযায়ী পাখিরাও উড়ে আসত।
০৯১৮
সারা দিন পাখির ডাক আর জলের শব্দে প্রাণোজ্জ্বল হয়ে থাকত স্যালটন নদী। আজ সেই জল এতটাই বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে যে তাতে না খেলা করে মাছেরা, না উড়ে এসে সাঁতার কাটে কোনও পাখি।
১০১৮
এমনকি শুকিয়ে যাওয়া নদীর বিষাক্ত ধুলো উড়ে গিয়ে দূরদুরান্তের বাতাসও দূষিত করে তুলছে। কেন এমন পরিণতি হল স্যালটন নদীর?
১১১৮
বর্ষার জলে পুষ্ট এই নদীতে প্রতি বছর কলোরাডো নদী উপচে জল ঢুকত। সারা বছর সেই জলই থাকত নদীর বুকে। কিন্তু প্রতি বছর বন্যা রুখতে কলোরাডো নদীতে বাঁধ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয় ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসন।
১২১৮
১৯৩৮ সালে কলোরাডো নদীর উপর বাঁধ তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়। বাঁধটির নাম দেওয়া হয় ইম্পিরিয়াল বাঁধ। বাঁধ দিয়ে বন্যা রুখে দেয় প্রশাসন। ফলে ওই এলাকায় স্কুল, ক্লাব, হোটেল গজিয়ে উঠতে শুরু করে।
১৩১৮
কিন্তু তার ফল হয়েছিল মারাত্মক। স্যালটন নদীতে বর্ষার জল ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। জমে থাকা জল বাষ্প হয়ে শুকোতে শুরু করে। কিন্তু যে পরিমাণ জল বাষ্প হয়ে উড়ে যাচ্ছিল তার সম পরিমাণ জল নদীতে ঢুকছিল না।
১৪১৮
ফলে জলের পরিমাণ ক্রমে কমে আসতে থাকে। ১৯৭০ সালে পরিবেশবিদেরা নদীর প্রকৃতি বদল ঘটতে চলেছে বলে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তাতে কান দেয়নি ক্যালিফোর্নিয়া প্রশাসন।
১৫১৮
সাতের দশকের শেষের দিকেই নদীর মাছ মারা যেতে শুরু করে। নদীর বুকে ভেসে থাকা পাখির সংখ্যাও কমতে থাকে।
১৬১৮
নদীর জল শুকিয়ে গিয়ে অত্যন্ত লবণাক্ত হয়ে ওঠে। প্রাণী মারা যেতে শুরু করেছিল সে কারণেই। ওই জলে আর চাষাবাদও হত না।
১৭১৮
জলে প্রাণী মরে পচন ধরে যেতে শুরু করে। সব মিলিয়ে এক দিকে যেমন নদীর জল সম্পূর্ণ শুকিয়ে আসে অন্য দিকে তেমনই প্রাণীর দেহ পচে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি হয়।
১৮১৮
ক্রমে নদীকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বসতিও অন্যত্র সরে যেতে শুরু করে। হাওয়ায় নদীর সেই বিষাক্ত গ্যাস লস অ্যাঞ্জেলস পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে বায়ু দূষণেরও অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।