—ফাইল চিত্র।
অতিমারির বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে একের পর এক পার্টির আয়োজন এবং তাতে সশরীরে যোগ দেওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের ভাবমূর্তি বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে। তাঁর জায়গায় বিকল্প মুখ আনার ভাবনাও জোরালো হচ্ছে দিনের পর দিন। এর মধ্যেই বিতর্ক বাড়াল আরও একটি পার্টির খবর। একটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, অতিমারির বিধিনিষেধ তুচ্ছ করে ২০২০ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে বরিসের জন্মদিনের পার্টিরও আয়োজন হয়েছিল! উপস্থিত ছিলেন জনা ত্রিশেক ‘অতিথি’। আর ‘বার্থডে বয়’ বরিসও সেখানে ছিলেন।
ঘটনাটি যে সময়ের, তখন ব্রিটেনে সব রকম ঘরোয়া জমায়েতে দু’জনের বেশি মানুষের উপস্থিতির উপরে কড়া নিষেধাজ্ঞা ছিল। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘আইটিভি নিউজ়’-এর বিস্ফোরক দাবি, ১৯ জুন দুপুর ২টো নাগাদ ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে কেক এবং স্যান্ডউইচ সহযোগে বরিসের জন্মদিন উদ্যাপনে শামিল হয়েছিলেন কমপক্ষে ৩০ জন! বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন ডাউনিং স্ট্রিটের একাধিক আধিকারিকও। যদিও তাঁদের দাবি, প্রধানমন্ত্রীকে শুভকামনা জানাতে খুব কম সময়ের জন্যই অতিথিরা সেখানে জড়ো হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নিজেও মিনিট দশেকের বেশি ছিলেন না। বরিসকে জন্মদিনে ‘চমকে দিতেই’ নাকি এই পার্টির আয়োজন করেছিলেন তাঁর স্ত্রী ক্যারি সাইমন্ডস। জানা গিয়েছে, অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনকও নাকি সে দিন প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এসেছিলেন। তবে পার্টিতে আমন্ত্রিত হিসাবে নয়, এক বৈঠকে যোগ দিতে।
ডাউনিং স্ট্রিটের আধিকারিকদের একাংশের সঙ্গে সুর মিলিয়ে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সচিবদের অনেকেই বলছেন, ‘‘নিয়মভঙ্গ হয়েছিল বলার মতো কিছুই হয়নি সে দিন।’’ পরিবেশ সচিব জর্জ ইউস্টাইসের যেমন দাবি, ‘‘জনা দশেকের বেশি মানুষ ছিলেন না ওই অনুষ্ঠানে। বিষয়টি এত গুরুতর কিছু নয়। দিনের শেষে একটি কেক কাটা হয়েছে শুধু।’’ ইউস্টাইসের তালে তাল মিলিয়ে পরিবহণ সচিব গ্রান্ট শাপসও ৩০ জনের উপস্থিত থাকার কথা উড়িয়ে বলেন, যে কয়েক জন ছিলেন, তাঁরা সকলেই সারা দিন একসঙ্গে কাজ করছিলেন। তবে অন্য এক সাক্ষাৎকারে আবার তিনিই বলেছেন, ‘‘পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে কাজটি মোটেও ঠিক হয়নি।’’ সঙ্গে তিনি এ-ও দাবি করেন যে, পার্টিটি বরিসের স্ত্রী আয়োজন করেননি। তা করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর দফতরের তরফে।
ডাউনিং স্ট্রিটের পার্টির আয়োজন নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত করছেন প্রবীণ আমলা সু গ্রে। তাই এই বিতর্ক নিয়ে এখনই চর্চা না করে সু-র তদন্ত রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করার অনুরোধ জানিয়েছেন পরিবহণ সচিব। এই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আর বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না।’’ এই জন্মদিনের পার্টির খবরটি এখন জনসমক্ষে এলেও সু-র কাছে তা আগেই পৌঁছে গিয়েছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি। এ সপ্তাহের শেষের দিকে তিনি চূড়ান্ত তদন্ত রিপোর্ট পেশ করতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।
জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে ফের বরিসের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্ট্রারমের। তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষের মন অস্থির করে তুলছেন এবং তাঁকে সরতেই হবে।’’ বরিসের দল কনজ়ারভেটিভ পার্টির অন্দরেও শোনা গিয়েছে বিরোধী সুর। দলের বরিসকে কটাক্ষ ছুড়ে প্রাক্তন চেয়ারপার্সন ব্যারনেস ওয়ার্সি বলেন, ‘‘দেশের জন্য কোনটা ঠিক, তা নিয়ে দীর্ঘ এবং গভীর ভাবে চিন্তা করুন। রোজ সকালে উঠে তাঁর (বরিস) নিজেকে প্রশ্ন করা উচিত যে, প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে কি আমি আদৌ সে ভাবে নেতৃত্ব দিতে পারছি যাতে দেশের ভাল হচ্ছে, নাকি উল্টোটা?’’ কনজ়ারভেটিভ এমপি অ্যান্ড্রু ব্রিজেন এবং স্কটিশ কনজ়ারভেটিভ নেতা রুথ ডেভিডসনও প্রকাশ্যে বরিসের বিরোধিতা করেছেন। তবে বরিসের পাশেও দাঁড়িয়েছেন দলের সতীর্থদের কেউ কেউ। যেমন, ব্রিটেনের সংস্কৃতি সচিব নাডিন ডোরিসের মন্তব্য, ‘‘সারা দিন এক সঙ্গে কাজের পরে যদি সতীর্থের জন্মদিন পালনের জন্য একটি কেক কিনে এনে গান গেয়ে মিনিট দশেক উদ্যাপন করা হয় এবং তার পরে আবার সবাই কাজে ফিরে যায়, সেটাকে কি আজকাল পার্টি বলে?’’
কিন্তু দলের অন্দরে বরিস যে জমি হারাচ্ছেন, তা চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে দলের কাছে একাধিক এমপি-র তাঁর বিরুদ্ধে রীতিমতো চিঠি দিয়ে অনাস্থা প্রকাশের বিষয়টি। ব্যাকবেঞ্চ কমিটি (১৯২২)-র চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্র্যাডির কাছে যদি দলের মোট ৫৪ জন এমপি বরিসের নামে এই চিঠি দেন, তা হলে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। তবে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেই সেই বাধা কাটিয়ে উঠে ফের এক বছরের জন্য নিজের আসন নিশ্চিত করতে পারবেন বরিস। তবে ২০২৪-এর নির্বাচনের মুখ কে হবেন, তা অবশ্য সময়েই বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy