অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার সঙ্গে যুক্ত এক বাঙালি ইতিহাসবিদকে দেশ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিল ব্রিটেন সরকার। ৩৭ বছর বয়সি মণিকর্ণিকা দত্তের ‘অপরাধ’ হিসেবে জানানো হয়েছে, গবেষণার জন্য দীর্ঘদিন ব্রিটেনের বাইরে বাস। আকস্মিক এমন নির্দেশে স্তম্ভিত ওই মহিলা। ২০১২ সাল থেকে তিনি ব্রিটেনে রয়েছেন। এমন কোনও ‘ফতোয়ার’ মুখে যে তাঁকে পড়তে হবে, কল্পনাও করেননি।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণা সূত্রে প্রায় দু’বছরের কাছাকাছি ভারতে ছিলেন মণিকর্ণিকা। তাঁর কাজ ছিল ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে সংগ্রহশালাগুলি ঘুরে রিপোর্ট তৈরি। একাধিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও যোগ দিয়েছেন তিনি। ব্রিটেনের নিয়ম হল: দশ বছর বা তার বেশি এ দেশে বাস করলে, দীর্ঘ ছুটি পাওয়া যায়। একে বলে ‘ইনডেফিনিট লিভ টু রিমেন’ (আইএলআর)। কিন্তু এই ছুটির সর্বোচ্চ মেয়াদ ৫৪৮ দিন। মণিকর্ণিকা ৬৯১ দিন ব্রিটেনের বাইরে ছিলেন।
মণিকর্ণিকার আগে আরও অনেক বিদেশি শিক্ষাবিদই এই সমস্যায় পড়েছেন। সরকারি নির্দেশ শুনেই সঙ্গে সঙ্গে স্বরাষ্ট্র দফতরের দ্বারস্থ হন তিনি। জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজের জন্যই তাঁকে দীর্ঘদিন ভারতে থাকতে হয়েছিল। কিন্তু হোম অফিসের বক্তব্য, শুধু ব্রিটেনের বাইরে থাকাই নয়, মণিকর্ণিকার এ দেশে কোনও সংসার জীবন নেই। অতএব তাঁর ব্রিটেনে থাকা চলবে না। মণিকর্ণিকা কিন্তু বিবাহিত। দশ বছর হয়ে গিয়েছে তিনি বিয়ে করেছেন। সাউথ লন্ডনে নিজের স্বামী শিক্ষাবিদ শৌভিক নাহার সঙ্গে থাকেন। শৌভিক ইউনিভার্সিটি অব গ্লাসগোতে পড়ান। মণিকর্ণিকা বর্তমানে ‘ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন’-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর। এর আগে তিনি অক্সফোর্ড ও ব্রিস্টলের জন্য গবেষণা করছিলেন। সম্প্রতি একটি ইমেল আসে মণিকর্ণিকার কাছে। তিনি বলেন, ‘‘ইমেলটা দেখে আমি চমকে যাই। লেখা, আমাকে ব্রিটেন ছেড়ে চলে যেতে হবে।’’
২০১২ সালে মণিকর্ণিকা স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেনে এসেছিলেন। পরে স্পাউস ভিসায় থাকতে শুরু করেন। তাঁর আইনজীবী নাগা কানদিয়ার বক্তব্য, গবেষণার জন্য যে সফর তাঁর মক্কেলকে করতে হয়েছিল, সেটি বাধ্যতামূলক ছিল। ভারতে গিয়ে কাজ না করলে মণিকর্ণিকার রিপোর্ট সম্পূর্ণ হত না। মণিকর্ণিকা স্বরাষ্ট্র দফতরকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু পুনর্বিবেচনা করেও তারা জানায়— ‘‘আপনাকে এখনই চলে যেতে হবে। আপনি যদি নিজে থেকে না যান, সে ক্ষেত্রে এ দেশে প্রবেশের ব্যাপারে আপনার নামে ১০ বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি হবে। আইনি ব্যবস্থাও হতে পারে।’’ মণিকর্ণিকার সহকর্মীরা পাশে রয়েছেন। তাঁর আইনজীবী কানদিয়া স্বরাষ্ট্র দফতরের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কোর্টের দ্বারস্থ হন। স্বরাষ্ট্র দফতর জানায়, তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এখন আশঙ্কায় কাটানো ছাড়া পথ নেই মণিকর্ণিকার।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)