১০ ডাউনিং স্ট্রিটের সামনে বরিস জনসন। বুধবার। রয়টার্স
দেশ জুড়ে তখন কড়া লকডাউন। গত বছর সে সময়ে ‘গ্রীষ্মের মনোরম আবহাওয়া’ উপভোগ করতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে আয়োজন হয় মদের আসরের। আর ওই অনুষ্ঠানে সশরীরে উপস্থিত থাকায় জোর বিতর্কে জড়ান দেশের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। এতদিন মুখে কুলুপ আঁটলেও, এ দিন পার্লামেন্টে বিষয়টির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিলেন বরিস। যদিও বরিসের কথায় আমল দিতে নারাজ বিরোধীরা। তাদের দাবি, কোভিডের সময় শতাধিক মানুষকে নিয়ে এই পার্টির আয়োজনের দায় মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করুন বরিস।
এ দিন বরিসের ওই পার্টিতে যাওয়া প্রসঙ্গে জোর তর্ক শুরু হয় পার্লামেন্টে। সে সময়ে সুর নরম করে ক্ষমা চেয়ে বরিস জানান, বাগানটি তাঁর বাসভবন এবং কাজের জায়গার অঙ্গ। তাই তিনি ভেবেছিলেন কোনও ‘কাজের অনুষ্ঠান’ হচ্ছে হয়তো। বরিস আরও জানান, সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওই অনুষ্ঠানটিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। ছিলেন মাত্র মিনিট পঁচিশ। তার পর আধিকারিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন সেখান থেকে। এই প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এখন ফিরে তাকালে মনে হচ্ছে, সকলকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা বলাই উচিত ছিল আমার।’’ যে ভাবে অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করা হয়েছে তার জন্য তিনি দুঃখিত বলেও জানান বরিস।
তবে বরিসের বক্তব্য শেষ হতে না হতেই তাঁর বিরুদ্ধে তোপ দাগেন বিরোধী নেতা কিয়ের স্টারমার। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘উনি (বরিস) বার বার এটা কেন মনে করে বসেন যে তাঁর ক্ষেত্রে কোনও নিয়মই খাটে না?’’ এই সূত্রেই বরিসের পদত্যাগ দাবি করেন স্টারমার। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে একাধিক পার্টির আয়োজনের খবর নিয়ে আগেও বিস্তর জলঘোলা হয়েছে। সেই সব প্রসঙ্গ টেনে বিরোধীদের তরফে এ দিন ফের নিশানা করা হয় বরিসকে। আর প্রত্যেক বারই ক্ষমা চেয়ে নিতে দেখা যায় তাঁকে। যদিও মাঝে মাঝে তাঁকে বলতে শোনা যায় যে, ঘটনাগুলির তদন্ত হবে। তার পরেই যেন এ ভাবে কাঠগড়ায় তোলা হয় তাঁকে। প্রসঙ্গত, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে আয়োজিত পার্টিগুলির বিষয়ে তদন্তভার দেওয়া হয়েছে প্রবীণ আমলা সু গ্রে-কে।
যদিও তাতে বিরোধীদের কটাক্ষে লাগাম পরানো যায়নি। স্টারমারের মন্তব্য, ‘‘পার্টি শেষ হয়ে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী! এ বার কি তা হলে জনতা তাঁকে বার করবে, দল বার করবে, না কি তিনি নিজেই পদত্যাগ করবেন?’’ যার উত্তরেও তদন্ত রিপোর্টের অপেক্ষা করার কথাই বলতে শোনা যায় বরিসকে। এর পর স্টারমারের কটাক্ষ, ‘‘দেশের মানুষ তাঁকে মিথ্যেবাদী হিসাবে দেখছে!’’ যা শুনে বেজায় চটে যান বরিস। পাল্টা বলেন, ‘‘তাঁর নিজের চলা ফেরার দিকে নজর দেওয়া উচিত স্টারমারের!’’ এই কথা শুনে হাসিতে ফেটে পড়ে গোটা হাউস। কারণ, স্টারমারের বিরুদ্ধে কখনও কোভিড বিধিভঙ্গের অভিযোগ ওঠেনি।
তবে হাল ছাড়েননি বরিসও। তিনি বলেন, গোটা ইউরোপের মধ্যে ব্রিটেনে পরীক্ষার বহর সবচেয়ে বেশি। এমনকি প্রতিষেধক কর্মসূচির গতিতেও ব্রিটেনকে টেক্কা দেওয়া কঠিন। তা ছাড়া, অর্থনীতির দিক থেকেও দেশটি ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যদিও এত কিছু সত্ত্বেও জনতার চোখে বরিসের জনপ্রিয়তা জোর ধাক্কা খেয়েছে বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। সম্প্রতি এমনটা উঠে এসেছে এক সমীক্ষাতেও। কারণ, কোভিডকালে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে পার্টির আয়োজন হয়েছিল, তা সামনে আসার পর দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ মনে করছেন, বরিসের এ বার পদত্যাগ করাই উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy