পার্লামেন্ট সাসপেন্ড বিরোধিতায় প্রতিবাদ।—ছবি রয়টার্স।
দিন তিনেক আগে ফাঁস হয়ে যাওয়া ই-মেল থেকে জানা গিয়েছিল, ৯ সেপ্টেম্বর থেকে পার্লামেন্ট সাসপেন্ড রাখার জন্য আইনি পরামর্শ নিচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশ্যে আসতেই ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের তরফে জানানো হয়, এই খবর ভিত্তিহীন। প্রধানমন্ত্রীর তেমন পরিকল্পনাই নেই। আজ কিন্তু সেই পথেই হাঁটলেন বরিস। ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করতে ব্রিটেনের রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথের অনুমতি চেয়েছিলেন তিনি। অনুমতি দিয়েছেন রানি।
৩১ অক্টোবর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে আসার কথা ব্রিটেনের। তার আগে পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করে বরিস বিরোধীদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছেন বলে হইচই শুরু হয়েছে ব্রিটেন জুড়ে। যে কোনও মূল্যেই ইইউ ছেড়ে বেরোতে তিনি বদ্ধপরিকর বলে আগেই জানিয়েছিলেন বরিস। ফলে চুক্তিহীন ব্রেক্সিটে যাতে বিরোধী এমপি-রা বাধা দিতে না পারেন, তাই এই সিদ্ধান্ত বলে অভিযোগ করেছে বিরোধী দলগুলি।
গরমের ছুটি কাটাতে রানি এখন স্কটল্যান্ডের ব্যালমোরালে রয়েছেন। হাউস লিডার জ্যাকব রিজ-মগ এবং চিফ হুইপ মার্ক স্পেনসার আজই সেখানে বরিসের বার্তা নিয়ে উড়ে যান। রানি সেই আবেদনে সায়ও দিয়ে দিয়েছেন। বরিস জানিয়েছেন, ১৪ অক্টোবর অর্থাৎ ব্রেক্সিটের ঠিক দু’সপ্তাহ আগে পার্লামেন্টে ভাষণ দেবেন রানি। ব্রেক্সিট নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ‘দারুণ কিছু ঘোষণাও’ থাকবে সেই ভাষণে। অর্থাৎ ব্রেক্সিট নিয়ে বিরোধীরা কার্যত কোনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগই পাবেন না এই সময়ের মধ্যে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এখন অবকাশ চলছে। সেপ্টেম্বরের শুরুতে অধিবেশন শুরুর সময়েই তা সাসপেন্ড করে রাখতে চান বরিস। হাউস অব কমন্সের স্পিকার জন বারকাও সাধারণত রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য না করলেও আজ মুখ খুলেছেন। জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই প্রচেষ্টা আসলে সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। তাঁর কথায়, ‘‘এটা আসলে গণতন্ত্রিক পদ্ধতির বিরুদ্ধে করা এক অপরাধ। পার্লামেন্টে যে জনপ্রতিনিধিরা যান, এক জন প্রধানমন্ত্রী তাঁদের কণ্ঠস্বর এ ভাবে রোধ করতে পারেন না।’’
স্পিকারের সুরেই আজ কথা বলেছেন বিরোধী দলনেতা তথা লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন। তিনি জানান, নো-ডিল ব্রেক্সিট রুখতে তাঁরা যত দূর যাওয়া সম্ভব যাবেন। এ নিয়ে রানিকেও তাঁরা অনুরোধ করবেন বলে জানান করবিন। তাঁর কথায়, ‘‘পার্লামেন্টের সাসপেনশন মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের মুখের উপরে নো ডিল ব্রেক্সিট ছুড়ে মারতে চান প্রধানমন্ত্রী। উনি যেটা চান, তা আটকাতে প্রয়োজনে অনাস্থা ভোট হবে।’’ একাধিক টোরি নেতাও বরিসের এই সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক বলে ব্যাখ্যা করেছেন। স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেতা ইয়ান ব্ল্যাকফোর্ড বরিসকে একনায়কের সঙ্গে তুলনা করেন। শুরু হয়েছে আইনি ভাবে এই সিদ্ধান্তের মোকাবিলার প্রক্রিয়াও।
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী জন মেজর আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
বরিস জনসন অবশ্য নিজে বলছেন, ব্রেক্সিট নিয়ে আলোচনা ও তর্ক-বিতর্কের প্রচুর সুযোগই থাকবে ব্রিটিশ এমপি-দের জন্য। তিনি যে অসাংবিধানিক কাজ করছেন, তা-ও মানতে চাননি তিনি। এর আগেও রানির ভাষণের জন্য ব্রিটিশ পার্লামেন্ট সাসপেন্ড করা হয়েছে ঠিকই। তবে এ বারের সময় নির্ধারণ নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। বরিসের অবশ্য যুক্তি, আমেরিকা ও কানাডার সঙ্গে ভাল ভাল বাণিজ্য চুক্তির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। যদিও ওষুধ থেকে শুরু যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এখনও পর্যন্ত ইইউ থেকেই কেনে ব্রিটেন। তবে অক্টোবরের ৩১ তারিখেই যে ব্রেক্সিট হচ্ছে, তা নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘চুক্তি হোক বা না হোক, এ বারের সময়সীমা আর কোনও ভাবেই পিছোনো যাবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy