১৯৬৬-তে বব ডিলান।
নোবেল-অনুষ্ঠানে থাকবেন না, আগেই বলে দিয়েছিলেন। এ বছর সাহিত্যে নোবেল প্রাপক বব ডিলানের হয়ে স্টকহলমে পুরস্কারটি নিলেন সুইডেনের মার্কিন রাষ্ট্রদূত। তার পর নোবেল নৈশভোজে পড়ে শোনানো হলো ‘ব্লোয়িং ইন দ্য উইন্ড’-এর কবির সম্মতি-ভাষণ।
‘‘শুভ সন্ধ্যা। সুইডিশ অ্যাকাডেমি ও আগত অতিথিদের শুভেচ্ছা জানাই।
আমি দুঃখিত, আজ এখানে আসতে পারলাম না। কিন্তু আপনাদের মধ্যেই রয়েছি আমি। মনে মনে। এবং এই পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হয়ে অত্যন্ত গর্বিত বোধ করছি। আমি এমন অনেকের লেখা পড়ে বড় হয়েছি, যাঁদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল— কিপলিং, শ, মান, কামু, হেমিংওয়ে...। এঁরা সকলেই বিশাল মাপের সাহিত্যিক। এঁদের লেখা
স্কুল-কলেজে পড়ানো হয়, লাইব্রেরির তাক ঠাসা থাকে এঁদের বইয়ে। এই তালিকায় এ বার আমার নাম যোগ হওয়ায় আমি সত্যিই বাক্রুদ্ধ।
তাঁরা এই পুরস্কার পেতে পারেন, তা কি কখনও ভেবেছিলেন এই নোবেল প্রাপকেরা! আমায় যদি কেউ কখনও বলত, আমি নোবেল পেতে পারি, আমি উত্তর দিতাম, তার থেকে তো চাঁদে পৌঁছে যাওয়া বেশি সহজ! আমি যে বছর জন্মেছি, তার পরেও কয়েক বছর, এমন কাউকে নাকি পাওয়াই যায়নি, যাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে। ফলে আমি যে সত্যিই কয়েক জন বিরল মানুষের মধ্যে এক জন, তা মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
এই অত্যাশ্চর্য খবরটা যখন পাই, তখন আমি রাস্তায়। খবরটা হজম করতেই বেশ কয়েক মিনিট লেগে গেল। প্রথমেই আমার মনে এল, মহান সাহিত্যিক উইলিয়াম শেক্সপিয়রের কথা। আমার ধারণা, উনি নিজেকে এক জন নাট্যকার ভাবতেন। উনি যে আসলে ‘সাহিত্য’ রচনা করছেন, সেটা ওঁর মাথাতেই ছিল না। শব্দগুলো উনি বেছে নিতেন মঞ্চের কথা ভেবে। সেগুলো ছিল বলার জন্য, পড়ার জন্য নয়। যখন উনি হ্যামলেট লিখছেন, নিশ্চয় অনেকগুলো বিষয় নিয়ে চিন্তা করছিলেন। যেমন— ‘এই চরিত্রগুলোর জন্য কোন কোন অভিনেতাকে নেওয়া উচিত?’ ‘এই নাটকটি কী ভাবে মঞ্চস্থ করা হবে?’ বা ‘নাটকটির প্রেক্ষাপট কি ডেনমার্ক হবে?’ তাঁর শৈল্পিক সত্তা নিশ্চয় খুব প্রখর ছিল, কিন্তু তাঁর সঙ্গে কয়েকটা ‘সাধারণ’, ‘কেজো’ বিষয় নিয়েও ভাবতে হতো তাঁকে— ‘টাকা-পয়সা ঠিক মতো জোগাড় হয়েছে তো?’ ‘আমার পৃষ্ঠপোষকদের জন্য ঠিকঠাক আসন রাখা হয়েছে?’ ‘একটা খুলি কোথা থেকে জোগাড় হবে?’ বাজি ফেলে বলতে পারি, ‘এটা কি সাহিত্য?’ এই প্রশ্নটা ওঁর মাথায় আসেনি।
আমি যখন, সেই কৈশোরে, গান লেখা শুরু করি, এবং যখন একটু-আধটু পরিচিতি বেড়েছে, তখন আমি যে সব স্বপ্ন দেখতাম, সেগুলো খুব সুদূরপ্রসারী ছিল না। স্বপ্ন দেখতাম, আমার গান বাজবে কফি হাউসগুলোতে। আর একটু পরে ভাবতে শুরু করলাম, নিউ ইয়র্কের কার্নেগি হল বা লন্ডনের প্যালেডিয়ামে আমার অনুষ্ঠান হবে। যখন আরও বড় স্বপ্ন দেখতে শুরু করলাম, কল্পনা করতাম, আমার গানের রেকর্ড হবে, রেডিওতে আমার গান বাজবে। সেটাই আমার কাছে ছিল সব থেকে বড় পুরস্কার। রেডিওতে নিজের গান বাজা মানে, অনেক, অনেক মানুষ আমার গান শুনছে। তার মানে আমি যা করতে চাই, সেটা আরও কিছু দিন করে যেতে পারব।
যা করতে চেয়েছিলাম, সেটা অনেক দিন ধরে করে যাচ্ছি। কয়েকশো রেকর্ড বেরিয়েছে, সারা পৃথিবী জুড়ে কয়েক হাজার কনসার্ট করেছি। কিন্তু এ সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দুতে আমার গান। বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের মনে আমার গান ঠাঁই পেয়েছে, এটাই আমার কাছে সব থেকে বড় প্রাপ্তি। ৫০ জনের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছি, আবার ৫০ হাজার জনেরও। এবং আমি জানি, ৫০ হাজার জনের থেকে ৫০ জনের জন্য গান গাওয়া অনেক বেশি কঠিন।
শেক্সপিয়রের মতো ‘কেজো’ বিষয়গুলো নিয়ে আমিও ভাবি। আমার গানের সঙ্গে কারা বাজাবেন? ঠিক মতো স্টুডিও পাব তো? কিছু জিনিস ৪০০ বছরেও পাল্টায় না!
কিন্তু সারা জীবনে কখনও, এক বারের জন্যও, ভাবিনি— ‘আমার গানগুলো কি সাহিত্য?’
সুইডিশ কমিটিকে ধন্যবাদ জানাই, প্রশ্নটা তোলার জন্য, বিবেচনা করার জন্য এবং শেষ পর্যন্ত এমন চমৎকার একটা উত্তর দেওয়ার জন্য! সবাইকে শুভেচ্ছা। বব ডিলান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy