উদ্ধার করা হচ্ছে শরনার্থীদের। ছবি রয়টার্স।
ফের ডিঙি নৌকা করে ইংলিশ চ্যানেল পেরোনোর মরিয়া চেষ্টা। আর তাতেই প্রাণ গেল ২৭ জন শরণার্থীর। ফ্রান্সের উত্তর উপকূলের এই দুর্ঘটনা নিয়ে ইতিমধ্যেই ফ্রান্স ও ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে টানাপড়েন শুরু হয়েছে।
ফরাসি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে পাঁচ জন মহিলা ও একটি শিশু রয়েছে। রয়েছেন এক অন্তঃসত্ত্বাও। তবে মৃতেরা কোন দেশের নাগরিক, তা এখনও পর্যন্ত জানা যায়নি। তদন্ত শুরু হয়েছে। মাঝসমুদ্র থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় দু’জনকে। তাঁদের মধ্যে এক জন সোমালিয়া ও অপর জন ইরাকের নাগরিক। এঁদের দু’জনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক বলে ফরাসি আধিকারিকেরা জানিয়েছেন।
জেরাল্ড আরও জানিয়েছেন, গত কাল ফ্রান্সের বন্দর শহর ক্যালে থেকে ছোট ওই নৌকা করে ব্রিটেনের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল শরণার্থীদের একটি দল। মাঝ সমুদ্রে সেটি উল্টে যায়। এক মৎস্যজীবী শরণার্থীদের আর্ত চিৎকার শুনে উপকূলরক্ষীদের সতর্ক করেন। ফরাসি সরকার এর পরে তিনটি হেলিকপ্টার ও তিনটি উদ্ধারকারী নৌকা পাঠিয়ে শরণার্থীদের উদ্ধার করে। কিন্তু প্রবল ঠান্ডা জলে জমে তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে অর্ধেকেরও বেশি নৌকা আরোহীর। শরণার্থীদের অবৈধ উপায়ে ব্রিটেনে পাঠানোর চক্রে জড়িত সন্দেহে ইতিমধ্যেই পাঁচ জন দালালকে গ্রেফতার করেছে ফ্রান্সের পুলিশ।
তবে বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকারের মধ্যে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। এমনিতে ব্রেক্সিটের পর থেকেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের নানা বিষয়ে বিরোধ চলছে। যার মধ্যে রয়েছে মৎস্যজীবীদের এলাকা নির্দিষ্ট করার মতো বিষয়ও।
এত জন শরণার্থীর একসঙ্গে মৃত্যুর পরে ফরাসি প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, ইংলিশ চ্যানেলকে কোনও মতেই শরণার্থীদের সমাধিক্ষেত্র হতে দেওয়া যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘ইউরোপের মূল মন্ত্র হল প্রতিটি মানুষের মানবিকতা, সম্মান ও মর্যাদা রক্ষা করা। গোটা ইউরোপ এখন শোকে ডুবে রয়েছে।’’ তবে বিষয়টি নিয়ে ব্রিটিশ সরকার যেন রাজনীতি না করে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ফরাসি অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীরও বক্তব্য, গোটা ঘটনার দায় কোনও মতেই এড়াতে পারে না বরিস সরকার। ঘটনার পর পরই জনসনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন মাকরঁ।
এই দুর্ঘটনায় তিনি ‘ব্যথিত ও আতঙ্কিত’ বলে জানিয়েছেন বরিস। এ নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপে রয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও। তবে বরিস সরকারের অভিযোগ, শরণার্থী প্রসঙ্গে আরও কড়া হওয়া উচিত ফরাসি সরকারের। তারা জানাচ্ছে, এই বছরে ইতিমধ্যেই ২৫ হাজার শরণার্থী অবৈধ ভাবে ব্রিটেনে ঢুকেছেন। গত বছরের তুলনায় সংখ্যাটা প্রায় তিন গুণ। এর মধ্যেই ফরাসি আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, শীতের মরসুমে আরও উত্তাল হবে সমুদ্র, সেই সঙ্গে জলও হবে আরও বরফ শীতল। শরণার্থীরা এর পরেও এ ভাবে ব্রিটেন যেতে গেলে আরও বড় দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy