খালেদা জিয়া। —ফাইল চিত্র।
নির্বাচনের জন্য তাগাদা দিয়ে ক্রমেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে দূরত্ব বাড়াচ্ছে বিএনপি। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির শুক্রবার বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এই মুহূর্তে তাঁদের কোনও জোট বা বোঝাপড়া নেই। সরকার পতনের আন্দোলনের সময়ে জামায়াত বিএনপির সঙ্গে ‘যুগপত আন্দোলন’ করলেও তার পরে আর তাদের কোনও সম্পর্ক নেই।
ইসলামি দলগুলিকে নিয়ে বাংলাদেশে ইসলামি শাসন ব্যবস্থা প্রণয়নের যে তৎপরতা জামায়াতে ইসলামী শুরু করেছে, ‘বাংলাদেশের মানুষ তা মেনে নেবে না’ বলে আগেই মন্তব্য করেছেন ফখরুল। তাঁর কথায়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরে আসুক, একটি নির্বাচিত সরকার গঠিত হোক— এটাই মানুষ চান। এমনকি জামায়াতের নানা প্রস্তাব এবং তৎপরতা নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মন্তব্য করেছেন, “যাঁরা একটি আসনেও ভোটে জিততে পারবেন না, তাঁরা এখন বড় বড় কথা বলে বেড়াচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমও ফলাও করে সেইসব ছাপাচ্ছে!”
ফখরুলের কথায়, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ‘অনির্বাচিত অন্তর্বর্তী সরকার’ আদতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, যাদের কাজ সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে একটি নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া। কিন্তু, তাঁর অভিযোগ, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের পথরেখা নিয়ে একটি কথাও বলছেন না। বিএনপির অন্য নেতারাও দ্রুত নির্বাচনের জন্য ইউনূসের কাছে দাবি জানাচ্ছেন।
এই পরিস্থিতিতে শনিবার ভারতীয় সময় বেলা আড়াইটেয় ঢাকার যমুনা অতিথিশালায় নিজের দফতরে রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিনিধিদের বৈঠকে ডেকেছেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। অন্য উপদেষ্টারাও সেখানে থাকার কথা। তবে এই বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলির কাছ থেকে ‘ব্যবস্থা সংস্কারের’ প্রস্তাব চাওয়া হয়েছে। যা নিয়ে বিএনপির মহাসচিব ২৪ অগস্ট বলেছিলেন— “মুষ্টিমেয় কিছু লোকের সংস্কারে আমরা বিশ্বাসী নই। নির্বাচিত সরকার গঠনেই অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। তারাই প্রয়োজনীয় সংস্কার করবে।”
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় ‘দেশের স্বার্থে যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার’ আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির উদ্দেশে। জয়ের দাবি, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যই এটা প্রয়োজন। জয়ের প্রস্তাবের জবাবে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল বলেছেন, “বিএনপি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করতে আমাদের অসুবিধা নেই। কিন্তু গত ১৫ বছরে দেশের অর্থনীতি ও রাজনীতিকে তারা যে ভাবে ধ্বংস করেছে, তার জন্য আওয়ামী লীগকে জবাবদিহি করতে হবে। তার পরে এক সঙ্গে কাজ করা যাবে।”
৮ অগস্ট ইউনূস সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরে বিএনপি নেতৃত্ব সেই সরকারকে সমর্থন জানিয়েছে। কিন্তু ক্রমেই বিএনপির ধারণা হয়েছে, বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসাবে গুরুত্ব তারা পাচ্ছে না। বরং জামায়াতে ইসলামী বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে উপদেষ্টাদের কাছে। নিয়োগ এবং বদলির ক্ষেত্রেও জামায়াতের পছন্দই গুরুত্ব পাচ্ছে। শুক্রবারও ৮১ জন বিচারককে বদলি করেছে সরকার। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হলেও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানকে লন্ডন থেকে ফেরানোর বিষয়ে তৎপরতা নেই। আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ঢালাও খুনের মামলা দেওয়া এবং আদালতে তাঁদের মারধর খাওয়ানো নিয়েও সরব হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। তারেক এ দিনও বলেছেন, “আগামী নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম কঠিন পরীক্ষা।” ইসলামি বাংলাদেশকে ঠেকাতে সেই পরীক্ষায় খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার দলের একই অক্ষে মেরুকরণের সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছেন কেউ কেউ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy