ইসলামাবাদে রবিবার এক বিক্ষোভ সমাবেশে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের কর্মী, সমর্থকেরা। ছবি— পিটিআই।
পাকিস্তানের গণতন্ত্রে আবার কালো দিন। সর্বোচ্চ পদে বসা প্রশাসকই সেনার লোকেদের সাহায্যে সংবিধান লঙ্ঘন করলেন। ইমরান খান আস্থা ভোট এড়ালেন ঠিকই। তবে রাতে পাকিস্তানের ক্যাবিনেট ডিভিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হল, খাতায়-কলমে তিনি আর প্রধানমন্ত্রী নন। খুব বেশি হলে আর ১৫ দিন পরেই তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীকে কুর্সি ছেড়ে দেবেন ইমরান। যদিও প্রশ্ন, ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভাঙা হয়ে যাওয়ার পরে তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী বাছা হবে কী ভাবে?
আসলে গোটা রাজনৈতিক পরিস্থিতিটাই খুব জটিল। ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিকাংশ সদস্য যখন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা হারিয়েছেন, তখন অনাস্থা প্রস্তাব আনাটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। আজ অধিবেশনে স্পিকার ছিলেন না। ডেপুটি স্পিকার তাঁরই সই করা নির্দেশ পড়লেন। কিন্তু সংবিধানই বলছে, এক বার প্রক্রিয়া শুরুর পরে আস্থা ভোট আর কেউ ঠেকাতে পারেন না, এমনকি অধ্যক্ষও নন। তিনিই তো গত ৮ তারিখে প্রস্তাবটা গ্রহণ করেছিলেন। আর যে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে, তিনি প্রেসিডেন্টকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি ভেঙে দেওয়ার সুপারিশও করতে পারেন না। কাজেই শুধু স্পিকার নন, প্রধানমন্ত্রীও আজ সংবিধান লঙ্ঘন করলেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠবে।
পার্লামেন্টের যে সদস্যেরা আজ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের উপরে আস্থা হারিয়েছেন বলে আপাত ভাবে মনে হচ্ছে, মূলত এঁরাই ২০১৮ সালের ভোটের আগে সেনার চাপে নিজেদের দল ছেড়ে হয় ইমরানের পিটিআইয়ে যোগ দিয়েছিলেন, অথবা নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়েছিলেন। সেনা এবং আইএসআই সেই নির্বাচনে কলকাঠি নেড়েছিল বলে অভিযোগ ইতিমধ্যেই রয়েছে। কিন্তু এখন ইমরানকে নিয়ে সেনার কর্তাব্যক্তিরাই কিছুটা দ্বিধায়। তাঁরা ভাবছেন ইমরানের পাশে থাকবেন, না সরে আসবেন? ইমরানের পৃষ্ঠপোষক বলে পরিচিত প্রাক্তন আইএসআই প্রধান ফৈজ় হামিদের গোষ্ঠী এখনও প্রধানমন্ত্রীর সব কিছুকেই সমর্থন করছে। কিন্তু খোদ সেনাপ্রধান তা করছেন না। এটা কিন্তু বিপজ্জনক লক্ষণ। আর সেনার এই দোলাচলের সুযোগ নিয়েই দলবদলু অনেক নেতা এখন পুরনো দলে ফেরার জন্য, ভোটের টিকিটের জন্য দর-কষাকষি শুরু করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলছেন, তিনি দুর্নীতি রুখতে চেয়েছিলেন বলেই তাঁর উপরে বিরোধীদের আক্রোশ। পাকিস্তানে দুর্নীতি এমন একটা অস্ত্র, যাকে সেই ১৯৪৯ সাল থেকে কাজে লাগানো হয়ে আসছে। এই অস্ত্রেই অতীতে অসামরিক সরকার ফেলে দিয়েছে সেনা। কিন্তু ইমরান কি দাবি করতে পারেন যে, তাঁর দলে দুর্নীতিগ্রস্তদের ভিড় নেই? বাস্তবে দুর্নীতিকে সমূলে বিনাশ করতে যে আমূল নীতি পরিবর্তন প্রয়োজন, তাতে সেনা বা সরকার, কারওই সে ভাবে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। ইমরান তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা বলে আমেরিকা-বিরোধী তাস খেলেছেন। যে চিঠির কথা তিনি বলছেন, সেটি আসলে একটি কূটনৈতিক কেব্ল। আমেরিকার কয়েক জন কর্তার সঙ্গে আলোচনার পরে এ দেশে পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত সেটিতে তাঁর মতামত জানিয়েছিলেন। বিশ্বের নানা প্রান্তে সরকার পাল্টাতে আমেরিকা সক্রিয় থেকেছে ঠিকই, কিন্তু ইমরানের সরকারকে বিপাকে ফেলে আপাত ভাবে তাদের কোনও লাভ নেই। প্রায় সব দেশই ইমরানের প্রশাসনকে ‘সেনার পুতুল’ বলে জানে। আমেরিকা তো পাকিস্তানকে গণতন্ত্র বিষয়ক শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণও জানায়নি। বরং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর সঙ্গে দেখা করেননি বলে ইমরান ক্ষুণ্ণ হন।
সরকার ভাঙে-গড়ে। সেনা তার কাজ করে যায়। গণতন্ত্রের কথা ভেবেই খারাপ লাগে। তবে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে এ দিনের বা ভবিষ্যৎ ঘটনাপ্রবাহের তেমন প্রভাব পড়বে বলে মনে হয় না। পাকিস্তানের সেনা, শাসক, বিরোধী— সবাই বিভিন্ন সময়ে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্কের কথা বলে থাকে। তবে জনসমর্থন কুড়োতে আমেরিকা-বিরোধী কথাবার্তার মতো ভারত-বিরোধী আবেগে ইন্ধন দেওয়াটা অসম্ভব নয়। (লেখক পাক সাংবাদিক ও সমাজকর্মী)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy