প্রতীকী ছবি।
সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু সব নিষেধ উড়িয়ে থ্যাঙ্কস গিভিংয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন লোকজন। পরিণতি—আমেরিকায় দৈনিক সংক্রমণ ২ লক্ষ ছাড়িয়েছিল নিমেষে। বিশ্বের ১০ কোটি সংক্রমিতের ২ কোটি ৭৬ লক্ষ আমেরিকান। ৪ লক্ষ ৭৪ হাজার মৃত্যু। সংক্রমণ মাত্রায় এশীয়দের থেকে অনেকটা এগিয়ে ইউরোপীয়রাও। ইটালি, স্পেনের অতিমারি পরিস্থিতিই তার উদাহরণ। কিন্তু কেন এমন হল? তারই কারণ ব্যাখ্যা করলেন গবেষক নিধান বিশ্বাসের নেতৃত্বে এক দল বাঙালি বিজ্ঞানী। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘ইনফেকশন, জেনেটিক্স অ্যান্ড ইভোলিউশন’-এ।
লাখের উপরে দৈনিক সংক্রমণ, হাজারের উপরের দৈনিক মৃত্যু দেখে অনেকেই প্রশ্ন করছিলেন, কেন এমন ভয়াবহ অবস্থা আমেরিকার! বর্তমান মিউটেটেড স্ট্রেনগুলি (ব্রিটেন স্ট্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকীয় স্ট্রেন) আসার বহু আগে ইটালির অবস্থা দেখেও এক প্রশ্ন উঠেছিল। একটি সহজ ব্যাখ্যা সে সময়ে শোনা গিয়েছিল, এশিয়ার তাপমাত্রা ইউরোপ, আমেরিকার থেকে অনেক বেশি। তাই সংক্রমণ কম। অনেকে বলেন গরিব, উন্নয়নশীল দেশে শারীরিক সহনক্ষমতা হয়তো বেশি। এই গবেষণাটির কেন্দ্রে থাকা কল্যাণীর ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’ (এনআইবিএমজি)-র বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর কারণ— জিন।
গবেষক দলের অন্যতম, ন্যাশনাল সায়েন্স চেয়ার পার্থপ্রতিম মজুমদার জানান, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির নিয়ম মেনেই একাধিক মিউটেশন বা পরিবর্তন ঘটিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস বা সার্স-কোভ-২। এর মধ্যে একটি মিউট্যান্ট করোনাভাইরাস ‘ডি৬১৪জি’। স্পাইক প্রোটিনের ৬১৪ নম্বর স্থানে মিউটেশন ঘটে অ্যাসপারটেট থেকে গ্লাইসিন অ্যামিনোঅ্যাসিড তৈরি হয়েছে। পার্থ জানান, থ্যাঙ্কসগিভিংয়ের পরপর যে সংক্রমণ ঢেউ আছড়ে পড়েছিল আমেরিকায়, তার অন্যতম কারণ এই মিউট্যান্ট ভাইরাসটি। ইউরোপে গত বছর ফেব্রুয়ারিতে প্রথম চিহ্নিত হয় এটি। ইটালির পরিস্থিতির জন্য এই দায়ী। কিন্তু চিন, ভারত-সহ এশিয়ায় এই মিউট্যান্টটির দেখা তেমন নেই।
মূল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রক্রিয়াটি হল: ভাইরাসের উপরিভাগে থাকা স্পাইক প্রোটিন মানবকোষের এসিই২ প্রোটিনের সঙ্গে জুড়ে গিয়ে কোষের গায়ে একটি ‘দরজা’ তৈরি করে। তার পর সেখান দিয়ে মানবকোষের ভিতরে ঢুকে গিয়ে ভাইরাস তার প্রতিলিপি গঠন করতে থাকে। গবেষক দলের প্রধান নিধান বিশ্বাস জানান, ডি৬১৪জি মিউট্যান্টে প্রথমটির পাশাপাশি আরও একটি দরজা খুলে যায়। দ্বিতীয় দরজাটি তৈরি করে মানবকোষে উপস্থিত প্রোটিন নিউট্রোফিল ইলাসটেজ়। এটি থাকে ফুসফুসে। ব্যাকটিরিয়ার প্রবেশ রুখতে সাহায্য করে। কিন্তু নিউট্রোফিল ইলাসটেজ় বেড়ে গেলে ফুসফুসের ক্ষতি। পাশাপাশি সার্স-কোভ-২ সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যায়। প্রোটিনটির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে মানবকোষের আর একটি প্রোটিন আলফা-১-অ্যান্টিট্রিপসিন (এএটি)। শরীরে এএটি তৈরি কমে গেলে নিউট্রোফিল ইলাসটেজ় বেড়ে যায়। এতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় দরজাটিও খুলে যায়। যা ঘটেছে ডি৬১৪জি মিউটেশনে।
আমেরিকা, ইউরোপের ককেশিয়ানদের মধ্যে এএটি-উৎপাদনকারী জিনে মিউটেশন পরিচিত ঘটনা। ফলে এশীয়দের তুলনায় এদের শরীরে এএটি প্রোটিনের অভাব থাকে। এনআইবিএমজি-র বিজ্ঞানী দলের দাবি, এর জন্যই এশিয়ায় সংক্রমণ হার অনেকটাই কম ইউরোপ-আমেরিকার তুলনায়। ভারতের উদাহরণ ধরলেই বিষয়টা এমন: সংক্রমণে ভারত বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে। কিন্তু ভারতের বিপুল জনসংখ্যার বিচারে সংক্রমণের হার দেখলে, ১০ লক্ষের মধ্যে ৭৮০৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আমেরিকায় এই সংখ্যাটা ৮৩,১২২। ভারতে ১০ লক্ষ মানুষের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ১১২ জনের। আমেরিকায় সেটি ১৪৩০।
নিধান বলেন, ‘‘ডি৬১৪জি মিউট্যান্টটির সংক্রমণ ক্ষমতা বেশির প্রমাণ পাওয়া গেলেও মৃত্যুহার বৃদ্ধির প্রমাণ মেলেনি।’’ ঠিক যেমনটা দেখা গিয়েছে ব্রিটেন স্ট্রেন, দক্ষিণ আফ্রিকীয় স্ট্রেনের ক্ষেত্রে। নিধান আরও জানান, নতুন মিউট্যান্ট স্ট্রেনগুলিতে এই ডি৬১৪জি মিউটেশনের উপরে ‘এন৫০১ওয়াই’ মিউটেশন ঘটে আরও জটিলতা বাড়িয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy