কেহকাশন বসু —ফাইল চিত্র।
১৩০ বছর আগে প্রথম ধর্ম মহাসভায় তিনি যা বলেছিলেন, তা-ই ফিরে ফিরে আসছে। সব ধর্মকে গ্রহণ করার আদর্শের কথা বলেন স্বামী বিবেকানন্দ। শিকাগোয় ফের সেই আসরে উঠে আসছে, ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার রক্ষার দাবি। আগামী সোমবার পাঁচ দিনের অনুষ্ঠান শুরুর প্রাক্কালে বিশ্ব ধর্ম মহাসভার তরুণতম ট্রাস্টি কেহকাশন বসু বলছেন, “কোনও বিশেষ ধর্মের হয়ে ঢাক পেটানো নয়, মানব ধর্ম হিসেবে এক নিরাপদ, সুস্থায়ী ধরিত্রী গড়ার দায়বদ্ধতার কথাই আমরা বলছি।”
বাঙালি-কানাডিয়ান কেহকাশনের মা-বাবা টরন্টোবাসী। ঠাকুমা, দিদিমা টালিগঞ্জ, বালিগঞ্জে। ১১ বছর বয়স থেকে দুনিয়া ঘুরে রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিবেশ রক্ষা কর্মসূচির শরিক এই মেধাবিনী। ১৬ বছর বয়সে পরিবেশ এবং শিশু অধিকার রক্ষায় ‘ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস পিস প্রাইজ়’ বিজয়িনী এখন নিউ ইয়র্কে কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট পাঠরত। সংগঠন গড়ে এক দশক ধরে ২৮টি দেশে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কাজ করে চলেছেন। ধর্মাচরণের সঙ্গে পরিবেশ, পৃথিবীকে বাঁচানোর কাজ আলাদা করে দেখতে রাজি নন কেহকাশন। বেশির ভাগ ধর্মই পৃথিবীকে মায়ের মতো ভালবাসার শিক্ষা দেয়, মনে করাচ্ছেন তিনি।
আজকের পৃথিবীতে ‘ভেক ধর্মের ধ্বজাধারীদের’ থেকেও নিজেদের আলাদা করছেন বিশ্ব ধর্ম মহাসভার উদ্যোক্তারা। ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ‘কোনওরকম ঘৃণাতন্ত্র, ইসলাম বিদ্বেষ, নারী বিদ্বেষের সঙ্গে আমাদের যোগ নেই।’ ৮০টি দেশের ২০০ রকমের ধর্ম, লোকবিশ্বাস, সাংস্কৃতিক পরম্পরার মিলনকেন্দ্র এই আসরকে ‘একটি আন্তঃধর্ম সমন্বয় মঞ্চ’ হিসেবে দেখছেন কেহকাশনও। ট্রাস্টিদের আর এক জন, শিকাগোর বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটির প্রেসিডেন্ট স্বামী ঈশাত্মানন্দও মনে করেন, “ধর্মে ধর্মে সৌহার্দ্যের পরিসর গড়ার মধ্যেই ধর্ম মহাসভার গুরুত্বপূর্ণ প্রাসঙ্গিকতা।”
অনূর্ধ্ব ৩০-দের ফোর্বস তালিকায় ঠাঁই করে নেওয়া কেহকাশনের মধ্যে একাকার বেশ কয়েকটি পরিচয়। জন্ম দুবাইয়ে, আশৈশব কানাডাবাসী কন্যের নামটি ফার্সি শব্দ। অর্থ ছায়াপথ! বাঙালি মা, বাবার সন্তান স্বামী বিবেকানন্দের অনুরাগী! লিখতে, পড়তে না-পারলেও অনর্গল বাংলা বলেন। মিষ্টি, চিংড়িপ্রেমী মেয়ে খাদ্যরুচিতেও নিখাদ বাঙালি। কেহকাশন ফোনে বলছিলেন, “ছোট থেকেই সমন্বয়ী সংস্কৃতির মধ্যে বড় হয়েছি। দেশে-দেশে বিচিত্র পরিবেশে থেকেছি। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য মানি বলেই বাংলা বলতে শিখেছি!” বিবেকানন্দের চেতনায় বিশ্বপ্রকৃতির অখণ্ডতা এবং বিচিত্র আঙ্গিকের প্রকাশ তাঁকে টানে। পরিবেশ রক্ষার প্রচারেও সে কথা বলেন তিনি।
কিন্তু কেহকাশনের ‘সাধন গুরু’ আসলে সাধারণ মানুষ। ২০১৮ সালে সিরিয়ার বিপদসঙ্কুল এক উদ্বাস্তু শিবিরের গল্প শোনাচ্ছিলেন! “অত সঙ্কটেও বাচ্চারা চটপট গাছের যত্ন, প্লাস্টিক মোকাবিলার কসরত শিখে নিল দেখে আমি অবাক!” ভারত, বাংলাদেশেও বায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার কাজে জড়িয়েছে কেহকাশনের সংগঠন। রাজনীতির খবরাখবরও রাখেন।
ভারত-প্রসঙ্গে কেহকাশন বললেন, “বৈষম্য, ঘৃণা, অসাম্যের পরিস্থিতি থাকলে পরিবেশ রক্ষার কাজও ধাক্কা খাবে। সমাজের পিছিয়ে-থাকারাই প্রকৃতির পরিবর্তনে বিপদে পড়েন!” এ দেশে ম্যানগ্রোভের প্রসার, বিকল্প শক্তির ব্যবহার, জল সংরক্ষণ, বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের মতো নানা কাজে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আঞ্চলিক গোষ্ঠীর সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন কেহকাশন। “তবে বিভিন্ন স্কুল থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের কাছে এই দায়িত্বগুলির অগ্রাধিকার নেই”, এই আক্ষেপও রয়েছে তাঁর। ধর্ম মহাসভায় চার দিনে ন’টি বক্তৃতার জন্য আপাতত তৈরি হচ্ছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy