গত ৫ অগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন এবং ক্ষমতার পালাবাদলের পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্রমশই প্রভাব বাড়ছে তাদের। এ বার ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ বলে চিহ্নিত সেই ‘বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’ (‘জামাত’ নামেই যা পরিচিত) বুধবারের স্বাধীনতা দিবস পালনের জন্য আহ্বান জানাল দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে!
জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান যথাযোগ্য মর্যাদায় স্বাধীনতা দিবস পালনের জন্য সংগঠনের সব শাখা এবং দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। প্রসঙ্গত, বাঙালির মুক্তিসংগ্রামকে চুরমার করার উদ্দেশ্যে ১৯৭১ সালে পাক হানাদার সেনাবাহিনী বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়েছিল। গ্রেফতারের আগে ২৬ মার্চ (আদতে ২৫ মার্ত গভীর রাতে) বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।
সেই থেকে মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকেরা ওই দিনটি বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে ‘স্বাধীনতাবিরোধী’ হিসাবে চিহ্নিত ছিল জামায়াতে। পাক সেনার মদতপুষ্ট যে রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর যোদ্ধারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, গণহত্যায় যোগ দিয়েছিলেন তাঁরাই পরবর্তী সময়ে জামায়াতের নেতা-কর্মী হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। হাসিনার জমানায় যুদ্ধাপরাধে জড়িত একাধিক জামায়াতে নেতার মৃত্যুদণ্ড এবং জেলের সাজা কার্যকরও হয়েছিল।
তবে জামায়াতে প্রধান শফিকুর সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ-পর্বে তাঁদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন, ‘‘আমরা চেয়েছিলাম ভারতের আনুকূল্যে দেশ স্বাধীন না হোক। এটি আমাদের নীতিগত অবস্থান ছিল।’’ মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য নেওয়ায় আপত্তির নৈতিক অবস্থান কী কারণে, তা-ও জানিয়েছিলেন তিনি। শফিকুরের কথায়, “আমরা কারও দয়া-অনুকম্পায় যদি (স্বাধীন) করি, তা হলে এক বিপদ ঘাড় থেকে সরবে, এর চেয়ে বড় বিপদ আমাদের ঘাড়ে চাপবে।” তবে একাত্তরের ওই পরিস্থিতিতে পাকিস্তানি বাহিনী যে বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞ এবং বীভৎসতা চালিয়েছিল, সে কথা স্বীকার করে নিয়েছিলেন জামায়াতে প্রধান। এ বার মুজিদের স্বাধীনতা ঘোষণার দিনটিও পালনে সক্রিয় হলেন তাঁরা।