প্রচারে ফেরদৌস। —নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবার শীতের রাত, ঘড়ির কাঁটা বলছে ১০টা বেজে গিয়েছে মিনিট দশেক আগে। সারা দিনের যানজট কেটে অল্পবিস্তর গতি এসেছে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডে। এমন সময়ে নগরীর ব্যস্ত এলাকা জিগাতলায় বিস্তর হইচই। প্রচুর মানুষ যেন উত্তেজনায় ফুটছেন। দামী জাপানি এসইউভি-র চওড়া সানরুফ সরিয়ে উঠে এসেছেন চিত্রতারকা ফেরদৌস। পরনে সফেদ চুড়িদার-পাঞ্জাবি, তার উপরে মিশকালো মুজিব কোট।
আশপাশের বহুতলের বাসিন্দারা হুমড়ি খেয়ে বারান্দায়। রাস্তার দু’পাশে মানুষের ঢল। নায়কের গাড়ির সামনে একটি মিনি ট্রাকে বাঁশের খাঁচা, তাতে বাঁধা সাইকোডেলিক ঝিকিমিকি আলো তৈরি করেছে চোখ ধাঁধানো অনুষঙ্গ। লাউডস্পিকার দু’মাত্রার ঘাসকাটা ছন্দে হিসহিসিয়ে বেজে চলেছে— ‘নৌকা, নৌকা!’ ভোট চাইতে বেরিয়েছেন ঢাকা-১০ আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফেরদৌস।
রবিবার সাধারণ নির্বাচন, তার প্রচার শেষ হল শুক্রবার সকাল ৮টায়। আগের দিন নারায়ণগঞ্জে শেষ জনসভায় সরকার চালানোর ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা চেয়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী তথা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা আহ্বান জানালেন, নির্বাচনে জয়ী করে ফিরিয়ে এনে সংশোধনের সুযোগ করে দিন। নির্দিষ্ট দিনক্ষণের মধ্যে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার কাজ শেষ করে এ বার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গঠনের সুযোগ চেয়েছেন হাসিনা। এ দিনও মুজিব কন্যার জনসভা ময়দান উপচে গোটা নারায়ণগঞ্জ শহরকে ভাসিয়ে দিয়েছিল অনায়াসে। আর তা দেখেই বুকে বল পাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। সাধারণ নির্বাচনের আগে শেষ উপনির্বাচনটি হয়েছে ঢাকা-১৭ আসনে। শাসক দলের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফত অনায়াসে জয়ী হলেও ১৭ জুলাইয়ের সেই নির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ১১.৫১ শতাংশ।
শাসক দলের চিন্তা ভোটারদের মন জয় নিয়েই। ভোটারদের একটা বড় অংশ যদি বুথমুখো না হন, তবে বিরোধীদের বয়কট করা এই নির্বাচনের বৈধতা নিয়েই যে প্রশ্ন উঠে যাবে, আর সেই প্রশ্ন তুলতে দেশের ভিতরের-বাইরের কিছু প্রভাবশালী শক্তি যে মুখিয়ে বসে রয়েছে— বিলক্ষণ বোঝেন আওয়ামী নেতৃত্ব। আর তাই আক্ষরিক ভাবেই কোনও কিছু করতে বাকি রাখছেন না শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় নৌকার প্রার্থী অসীমকুমার উকিলের হয়ে ভোট চাইতে স্টেজে উঠে ভোটারদের মন ও অনুরোধ রাখতে বার কতক ডিগবাজিও খেয়েছেন অভিনেতা জায়েদ খান। বলেছেন, ভাল কথায় অনেক বার বলেও কেউ যদি ভোট দিতে না-আসেন, তবে এ ভাবে ডিগবাজি খেয়ে তাঁর ঘরে ঢুকে পড়বেন! শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রার্থীদের নিয়ে যথাসাধ্য ভোটারদের কাছে পৌঁছেছেন শাসক দলের কর্মীরা। পদ্মা সেতু থেকে কর্ণফুলি টানেল, ঢাকার মেট্রো রেল থেকে এলিভেটেড উড়ালপথ— যা ফার্মগেট-মহাখালির কাছাকাছি টেনে এনেছে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে, মধ্য ও দক্ষিণ বাংলাদেশে একটার পর একটা সড়কসেতু যে যান চলাচলের সময় কমিয়েছে, সবই প্রচারে বলছেন তাঁরা। দাবি করছেন, শেখ হাসিনা সরকার থাকলে আরও উন্নয়ন হবে।
আবার ভোট বয়কট ও শনিবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার হরতালের পক্ষে ছোট ছোট মিছিল করতে দেখা গিয়েছে বিএনপি, তাদের ‘সমমনা’ জামাতে ইসলামি ও কয়েকটি ছোট ছোট দলকে। শাসক দলের কর্মীরা তাদের উপরে আক্রমণ করেছে বলেও নালিশ করেছে তারা। এ সবের মধ্যেই বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার বাসা ছেড়ে মানুষ বাস-ট্রেন-লঞ্চে গাদাগাদি করে গাঁয়ের বাড়ির দিকে রওনা হয়েছেন, যেখানে ভোটার লিস্টে সপরিবার নাম রয়েছে তাঁদের। শুক্র-শনির পরে রবিবার ভোটের দিনেও সবেতন ছুটি ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। বাড়ি ফিরে তাঁরা যাতে ভোটটা দিতে যান, সেই প্রচার চলছে স্টেশনে, লঞ্চঘাটে।
সব মিলিয়ে আশাবাদী হলেও ধন্দ যাচ্ছে না আওয়ামী নেতাদের। মনে যেন সেই দাদাঠাকুরের ভোটের গানই ঘুরছে— ‘তাদের মুখের ভাষায় ভুলিনু আশায়/ জানি না বুকের ভাষা/ তাদের মনের কথা মনই জানে/ ভোট দিবে কি নাহি দিেব...’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy