প্রাচীর টপকে ক্যাপিটলে হানা ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকদের । পিটিআই
প্রায় তিন সপ্তাহ আগে সেই মোক্ষম টুইটটি করেছিলেন তিনি— ‘৬ জানুয়ারি। ডিসি-তে থাকবেন। দারুণ ধামাকা হবে।’ তিনি যা বলেন, তা যে করেও দেখান, গত কাল তা প্রমাণ করে দিলেন আমেরিকার ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর একের পর এক উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে দেশের রাজধানীর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ক্যাপিটলে ঢুকে পড়ে কয়েক ঘণ্টা ধরে তাণ্ডব চালালেন ট্রাম্প-সমর্থকেরা। আর গোপন সুড়ঙ্গ দিয়ে পালিয়ে বাঁচলেন কংগ্রেস সদস্যরা।
বুধবার, ৬ জানুয়ারি। আমেরিকার গণতান্ত্রিক ইতিহাসে সব থেকে লজ্জার দিন, বলেছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। দেশের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি-র প্রধান প্রশাসনিক ভবনে এর আগেও হামলা হয়েছে। কিন্তু প্রেসিডেন্টের প্ররোচনায় এ ধরনের হামলা নজিরবিহীন।
আরও পড়ুন: মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি পাক আদালতের
বুধবার সকালে হোয়াইট হাউসের সামনে জড়ো হয়েছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। মুখোশহীন সেই ভিড়ের মাথায় ট্রাম্প-টুপি, হাতে বিশাল ব্যানারে লেখা— ‘ট্রাম্প ২০২০’! সেই সমাবেশে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের বারান্দা থেকেই ট্রাম্প হুঙ্কার দিলেন— ‘‘আমরা হারতেই পারি না। নানা রকম হিসেব করে দেখেছি, এই ভোটের ফল একটা বড় ধাপ্পা।’’ এখানেই থামলেন না তিনি। ‘ক্যাপিটল চলো’ ডাক দিয়ে বললেন, ‘‘আমাদের দেশকে ফিরে পেতে হলে, ক্যাপিটলে গিয়ে শক্তিশালী আচরণ করতে হবে। দুর্বল হলে চলবে না।’’
মুহূর্তে বাঁধ ভাঙল। হোয়াইট হাউস থেকে একটু এগোলেই ক্যাপিটল ভবন। হইহই করে সেই দিকে ছুটল উন্মত্ত জনতা। ভবনের ভিতরে তখন ইলেক্টোরাল ব্যালটের ফলাফল নিয়ে চূড়ান্ত বিতর্ক চলছে। অংশ নিচ্ছেন আমেরিকান কংগ্রেসের দুই কক্ষেরই সদস্যেরা। যার পরেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে ভাবী প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের নাম। বন্ধ কক্ষের দরজার বাইরে সশস্ত্র পুলিশ। মূল ভবনের বাইরে পুলিশি ব্যারিকেড। আপাত ভাবে মনে হবে বেশ শক্তপোক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কোথায় কী! টিভিতে দেখলাম, ধেয়ে আসা উন্মত্ত জনতার তোড়ে উড়ে গেল ব্যারিকেড। উঁচু প্রাচীর টপকে, দরজা খুলে ভবনে ঢুকে পড়ল কয়েকশো মানুষ। কী তাণ্ডবটাই না করল শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা! বাঁদর লাফ দিল সেনেটের প্রধান কক্ষ ‘সেনেট চেম্বারে’। কেউ বা ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের চেয়ার বসে সিগারেটের ধোঁয়া ওড়ালেন। আর এক জন আবার হাউসের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির টেবিলে পা তুলে বসে পড়লেন। ভাঙচুর, লুটপাটও চলেছে সমানে। এই সব ছবি আবার গর্বভরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেছেন ট্রাম্প-ভক্তেরা।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন ভাবী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের উপরে এ এক অভূতপূর্ব আঘাত। তবে একটা কথা বলতে পারি। ক্যাপিটলে যা ঘটছে, তা আসল আমেরিকা নয়। এটা বিক্ষোভ নয়। এটা তাণ্ডব। অরাজকতা।’’ বেশ কিছু ক্ষণ পরে টুইট করলেন বর্তমান প্রেসিডেন্টও। বললেন, ‘‘ক্যাপিটলের পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করুন, বাড়ি ফিরে যান।’’ কিন্তু তত ক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন এক মহিলা-সহ চার জন। গ্রেফতার করা হয়েছে ৫২ জনকে।
ক্যাপিটল থেকে মাইল পনেরো দূরে আমার স্ত্রীর অফিস। ক্যাপিটলে হামলার খবর পেয়েই বার বার স্ত্রীকে ফোন করছিলাম। হামলার খবর জানিয়ে ওকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে বললাম। বিকেল চারটে নাগাদ ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশের সঙ্গে মেরিল্যান্ড আর ভার্জিনিয়া প্রদেশের পুলিশ একত্রে পরিস্থিতি সামাল দিতে নেমে পড়ল। অবশেষে দেখা গেল জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনীকেও। সন্ধে ৬টা থেকে কার্ফু জারি হল।
উস্কানিমূলক মন্তব্যের অভিযোগে ইতিমধ্যে টুইটার ১২ ঘণ্টার জন্য ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। এই ধরনের আচরণ বন্ধ না করলে পুরোপুরি তাঁকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে বলে সতর্কও করেছে তারা। ফেসবুক আর ইউটিউব ট্রাম্পের শেষ কয়েকটি পোস্ট মুছে দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে ফেসবুক জানাল, তিনি যত দিন প্রেসিডেন্ট থাকবেন, মানে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত, ট্রাম্পের সব সোশ্যাল অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হচ্ছে। ফেসবুকেই পড়লাম, সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জ়াকারবার্গ লিখেছেন, ‘‘গত ২৪ ঘণ্টার ভয়াবহ ঘটনাপঞ্জি থেকে স্পষ্ট, ট্রাম্প আর যে ক’টা দিন ক্ষমতায় থাকবেন, বাইডেনকে শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে নানা ধরনের বাধা দেবেন। এই সময়ে প্রেসিডেন্টকে আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে দিলে বড় মাপের অশান্তির আশঙ্কা রয়েছে। তাই অন্তত আগামী দু’সপ্তাহ তাঁর অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হচ্ছে ।’’
টুইট-প্রিয় ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট জমানার শেষ কয়েকটা দিন তা হলে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরেই কাটবে!
(লেখক কৃত্রিম মেধা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy