Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Myanmar

রক্তাক্ত মায়ানমার, সেনার গুলিতে শিশু-সহ নিহত ৬৪, সশস্ত্র গোষ্ঠীর প্রত্যাঘাতে হত ১০ সেনা

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে মায়ানমার।

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে মায়ানমার। ছবি: রয়টার্স।

সংবাদ সংস্থা
ইয়াঙ্গন শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২১ ১৯:৩৪
Share: Save:

সেনাশাসন বিরোধীদের রক্তে ফের রক্তাক্ত মায়ানমারের মাটি। শনিবার সেখানে আন্দোলনকারীদের উপর সেনা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বলে অভিযোগ। তাতে কমপক্ষে ৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সেনার গুলিতে ১ বালকেরও মৃত্যুর খবর মিলেছে। এ ছাড়াও মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েক জন শিশু রয়েছে বলে খবর। গত ১ ফেব্রুয়ারি রাজনীতিকদের বন্দি করে সেনা দেশের দখল নেওয়ার পর, গত দু’মাসে সেনার গুলিতে প্রায় ৪০০ জন প্রাণ হারিয়েছেন মায়ানমারে। এর মধ্যে শনিবারই সবচেয়ে রক্তাক্ত দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রইল।

সেনাশাসনের বিরুদ্ধে গত দু’মাস ধরেই বিক্ষোভে উত্তপ্ত মায়ানমার। শনিবার সশস্ত্র বাহিনীর সাফল্য উদ্‌যাপনে যখন ব্যস্ত সেনা, সেই সময় ইয়াঙ্গন, মান্দালয় এবং আরও বেশ কিছু শহরে পথে নামেন হাজার হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আন্দোলনকারীদের হুঁশিয়ারি দেয় সেনা। ঘোষণা করা হয়, পিছু না হটলে মাথায় অথবা পিছন থেকে গুলি করে মারা হবে তাঁদের। কিন্তু সেনার হুঙ্কারেও পিছু হটেননি আন্দোলনকারীরা। তাতেই নির্বিচারে গুলি চালাতে শুরু করে সেনা।

স্থানীয় সূত্রে যে খবর পাওয়া গিয়েছে, তা অনুযায়ী, শুধুমাত্র মান্দালয়ের রাস্তাতেই কমপক্ষে ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। সেনার গুলিতে ৫ বছরের এক বালকেরও প্রাণ গিয়েছে সেখানে। ইয়াঙ্গনে অনূর্ধ্ব ২১ এক ফুটবল খেলোয়াড়ের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুর আড়াইটে পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, সকাল থেকে কমপক্ষে ৬৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন সেখানে। শান প্রদেশের উত্তরে স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পড়ুয়ার উপরও সেনা গুলি চালায় বলে জানা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জায়গায় জায়গায়।

সেনাশাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জায়গায় জায়গায়। ছবি: রয়টার্স।

এ ছাড়াও সাগাইং, পূর্বের লাশিয়ো, বাগো এবং আরও বেশ কিছু এলাকা থেকে মৃত্যুর খবর এসেছে। জানা গিয়েছে, ১ বছরের একটি শিশুর চোখে রবারের বুলেট ঢুকে গিয়েছে। চারিদিকে যখন মুহুর্মুহু গুলি চলছে, সেই সময় মিইংইয়াং থেকে তু ইয়া জ নামের এক ব্যক্তি ফোনে একটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘পাখি-মুরগি মারার মতো করে মেরে ফেলা হচ্ছে আমাদের। এমনকি বাড়িতে ঢুকেও মারা হচ্ছে। কিন্তু জুন্টার পতন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়েই যেতে হবে আমাদের।’’ তিনি যেখান থেকে কথা বলছিলেন, সেখানেও ২ জন মারা গিয়েছেন বলে জানান ওই ব্যক্তি।

গণতন্ত্র রক্ষার তাগিদেই সেনা অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে বলে এর আগে সাফাই দিয়েছিল মায়ানমারের ক্ষমতাসীন জুন্টা নেতৃত্ব। কিন্তু সেনার হাতে অপসারিত সে দেশের জুন্টা-বিরোধী সরকাররে মুখপাত্র সাসা বলেন, ‘‘দেশের সশস্ত্র বাহিনীর জন্য আজকের দিনটি লজ্জাজনক।’’

অন্য দিকে, সেনার নৃশংসতার প্রতিশোধ নিতে তাইল্যান্ড সীমান্তে সেনা শিবির তারা গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে করে ন্যাশনাল ইউনিয়নের মতো মায়ানমারের জুন্টা-বিরোধী সশস্ত্র সংগঠন। সেখানে এক লেফটেন্যান্ট কর্নেল-সহ ১০ সেনাকে তারা হত্যা করেছে বলে জানিয়েছে। তাতে তাদের নিজেদেরও এক ‘যোদ্ধা’ প্রাণ হারিয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

তবে নিরস্ত্র মানুষের উপর নির্বিচারে গুলি চালানো নিয়ে এখনও কোনও রকম পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ঘোষণা করেনি মায়ানমার সেনা। বরং সশস্ত্র বাহিনীর সাফল্য উদ্‌যাপনে রাজধানীর কুচকাওয়াজ থেকে দেওয়া ভাষণে সিনিয়র জেনারেল মিন আউং লেইং বলেন, ‘‘দেশের সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সেনা। আমরা যে গণতন্ত্র গড়ে তোলার কথা ভাবছি, তাতে আইন-কানুনকে সম্মান না করলে চরম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।’’

এর আগে, শুক্রবার সীমা সংলগ্ন এলাকা থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মায়ানমারের ৩ নাগরিককে চিকিৎসকের জন্য মনিপুরের ইম্ফলে আনা হয়। মনিপুরের মোরে থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মায়ানমারের তামুর বাসিন্দা তাঁরা। কী ভাবে সীমা পেরিয়ে তাঁরা ভারতে এসে পৌঁছলেন, তা এখনও জানা যায়নি। মোরের মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ওই ৩ জনের। তাঁদের যথাক্রমে ৩২ বছর বয়সি ফুয়ো ওরফে ফুজো, ২৯ বছর বয়সি নেয়ে ইয়ুন ওরফে কোনানু এবং ৩১ বছর বয়সি নিয়ু থুন নামে শনাক্ত করা গিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy