পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া শরণার্থী শিবির। ছবি: রয়টার্স।
দু’টি দৃশ্য। প্রথমটিতে পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া শরণার্থী শিবিরে মস্তকহীন প্যালেস্টাইনি শিশুর দেহ কাঁদতে কাঁদতে তুলে ধরেছেন শিশুর বাবা। দ্বিতীয় দৃশ্যে, রবিবার ছুটির দিনে সেই ছবি সমাজমাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্ট করে এক নেতানিয়াহুপন্থী ইজ়রায়েলির সরস মন্তব্য। এই দুই দৃশ্য খুব তীব্র ভাবে বুঝিয়ে দেয়, রাফায় আসলে কী চলছে।
“ইজ়রায়েলের হামলায় রাফা পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে, সারা বিশ্ব হাত গুটিয়ে বসে তা দেখছে।” সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে সোজাসুজি এই কথাটাই জানালেন বাসাম নামের এক প্যালেস্টাইনি। তাঁর মতো আরও অনেকে এখন সম্পূর্ণ গৃহহীন। পরিজনের নিথর দেহের পাশে শূন্য চোখে বসে রয়েছেন। পিছনে পড়ে রয়েছে আকাশহানায় বিধ্বস্ত আশ্রয়শিবির। রবিবার যে আশ্রয়শিবিরে নির্বিচারে আকাশহানা চালিয়েছে ইজ়রায়েল। প্রাণ গিয়েছে অন্তত ৪৫ জনের। কারও কারও দাবি, সংখ্যাটি আসলে ১০০ ছুঁইছুঁই। আহত বহু নারী ও শিশু। শিবিরের বসবাসকারী এক যুবক কোনও রকমে পরিজনকে নিয়ে পৌঁছেছেন রাফার কুয়েত হাসপাতালে। তাঁর কথায়, ‘‘চোখের সামনে বিস্ফোরণের তাপে শিবিরের তাঁবুর সঙ্গে সঙ্গে গলে যাচ্ছিল মানুষের দেহগুলি।’’ রাফায় লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজ়রায়েলি সেনাবাহিনী। নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে মহিলা ও শিশু-সহ অসংখ্য শরণার্থীকে, যাঁরা নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে রাফায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন। রাফার পরেই মিশর সীমান্ত। ফলে আর কোনও পালানোর রাস্তা নেই এই শরণার্থীদের কাছে।
ইজ়রায়েলের অবশ্য যুক্তি, গোপন সূত্রে খবর পেয়েই ওই হামলা করা হয়েছিল। হামাসের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ ইয়াসিন রাবিয়া ছিলেন রাফার ওই শরণার্থী শিবিরে। সুতরাং, হামলা করতেই হত। আন্তর্জাতিক আদালত কার্যত সর্বসম্মত রায়ে অবিলম্বে রাফায় সেনা অভিযান থামানোর জন্য ইজ়রায়েলকে নির্দেশ দিলেও রাফায় বোমাবর্ষণ বাড়িয়েছে ইজ়রায়েলি সেনা। সোমবারও রাফার পূর্ব ও মধ্যাংশে একটানা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গিয়েছে তারা।
রবিবারের হামলাটি ঘটেছে রাফার তেল আল সুলতান এলাকায়। ঠিক সপ্তাহ দুয়েক আগে যেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন হাজারেরও বেশি মানুষ। গাজ়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি মৃত্যুর সংখ্যা আরও বাড়বে। তার কারণ আকাশহানার পরে পরেই জ্বলে উঠেছিল লেলিহান আগুন। তাতেও ঝলসে গিয়েছেন বহু মানুষ। এর পাশাপাশি, রাফার কোনও হাসপাতালে কোনও জীবনদায়ী ওষুধ নেই। বেশির ভাগ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিহত। আহতদের প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের জন্য অ্যানেস্থেসিয়া করার উপকরণটুকুও নেই। ফলে আহত প্রায় সকলেই মারা যাবে, আশঙ্কা রেডক্রস ও রাষ্ট্রপুঞ্জের।
ইজ়রায়েলের তরফে এই হামলা নিয়ে তদন্ত হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হলেও তাতে বিশেষ জোর নেই। আর, ইজ়রায়েলের দক্ষিণপন্থী তথা নেতানিয়াহুর সমর্থকদের কাছে এই হামলা কার্যত উদ্যাপন। অন্তত রবিবার সন্ধ্যা তা প্রমাণ করে দিয়েছে। রবিবার ছিল তাঁদের লাগ বাওমার উৎসব। ধর্মীয় এই উৎসবে জ্বালানো হয় ‘বনফায়ার’। ইজ়রায়েলের বহু বাসিন্দার সমাজমাধ্যমে রাফা হামলার ছবি পোস্ট করে তাতে লিখেছেন, “এ বছরের সেরা ‘বনফায়ার’”। কেউ কেউ লিখেছেন, ‘খুশির ছুটির দিন’। পরে পোস্টগুলি সরিয়ে নেওয়া হলেও রবিবার ও সোমবার সমাজমাধ্যমে ছেয়ে গিয়েছে রাফা হামলা নিয়ে নানা মিম, ভিডিয়ো, ইয়ার্কির বার্তায়।
রবিবারের হামলায় স্তম্ভিত বিশ্বের বহু দেশ। এই প্রথম তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ফ্রান্স। প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ এক্স হ্যান্ডলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এই হামলা নিন্দনীয়। এখনই যুদ্ধবিরতির প্রয়োজন। কড়া সমালোচনা করেছে স্লোভেনিয়াও। সৌদি আরবের বিদেশমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ইজ়রায়েলকে মেনে নিতে হবে যে, প্যালেস্টাইন ছাড়া তার কোনও অস্তিত্ব নেই।’ আমেরিকার কংগ্রেস সদস্য রো খন্নাও ঘটনার কড়া সমালোচনা করেছেন। তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে কানাডা, নরওয়ে, স্পেন ও আয়ারল্যান্ড।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy