গাজ়া থেকে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র-হামলার পরে। শনিবার ইজ়রায়েলের অ্যাশকেলনে। ছবি: পিটিআই।
উৎসবের দিন। শনিবার সকাল সাড়ে ৬টা হবে। তখনও আড়মোড়া ভাঙেনি শহরগুলি। আচমকা আকাশ ধোঁয়ায় ঢেকে ইজ়রায়েলের মাটিতে বন্যার জলের মতো আছড়ে পড়তে শুরু করল ক্ষেপণাস্ত্র। ইজ়রায়েলি মানুষ এই হামলার জন্য কোনও রকম প্রস্তুত ছিলেন না। মুহূর্তে ছড়াল আতঙ্ক আর বিশৃঙ্খলা।
খানিক পরে জানা গেল, গাজ়া সীমান্তে প্যালেস্টাইনি জঙ্গিগোষ্ঠী হামাস হামলা চালিয়েছে। ২০ মিনিটে প্রায় ৫ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার উল্লাস-ঘোষণা করেছে তারা। পাশাপাশি ইজ়রায়েলের দাবি, প্যারাগ্লাইডিং করে সমুদ্রপথে এবং গাড়ি নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে প্রচুর জঙ্গি তাদের মাটিতে ঢুকে পড়েছে। হামাস গোষ্ঠী এই হামলার নাম দিয়েছে ‘অপারেশন আল-আকসা ফ্লাড’। ইজ়রায়েল প্রশাসন সকালে জানিয়েছিল, হামলায় ২২ জন নিহত হয়েছে। রাতে ইজ়রায়েলি সংবাদ মাধ্যমগুলি জানিয়েছে, মৃতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ২০০ হয়েছে। জখম হাজারেরও বেশি।
চুপ করে নেই ইজ়রায়েলও। ‘অপারেশন আয়রন সোর্ড’ নামে পাল্টা অভিঘাত হেনেছে তারা। গাজ়া কর্তৃপক্ষের দাবি, ইজ়রায়েলি হানায় অন্তত ১৯৮ জন নিহত হয়েছেন। জখম দেড় হাজারের বেশি। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু একে সরাসরি যুদ্ধ বলেই ঘোষণা করেছেন। আজ একটি ভিডিয়ো বার্তায় দেশবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ‘‘এটা কোনও অভিযান, উস্কানি বা প্ররোচনা নয়, এটা যুদ্ধ। এবং এই যুদ্ধে আমরাই জয়ী হব। হামাসকে এর মূল্য চোকাতে হবে।’’ সকালের হামলার পরেই তড়িঘড়ি তেল আভিভে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর দফতরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক বসে। যুদ্ধ কৌশল নির্ণয়ের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া নিরাপদ আশ্রয়ে বা বাড়িতে থাকতেই বলা হয়েছে তাঁদের। তবে আতঙ্ক আরও জমাট বাধছে। সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিয়োয় দেখা গিয়েছে, গাজ়া সীমান্ত থেকে শয়ে শয়ে মানুষ কম্বল আর খাবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে বেরিয়ে পড়েছেন।
প্যালেস্টাইন-ইজ়রায়েলের মধ্যে বিবাদ বহু পুরনো। জেরুসালেম ও গাজ়া স্ট্রিপের দখলকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা লেগেই থাকে। সম্প্রতি গাজ়া সীমান্তে প্যালেস্টাইনি শ্রমিকদের যাতায়াত বন্ধ করে দেয় ইজ়রায়েল সরকার। তার পর থেকেই ধিকিধিকি উত্তেজনা বাড়ছিল। এর মধ্যেই আজকের আচমকা হামলা। ইজরায়েলের মতে, ২০০৭ সালে হামাস গোষ্ঠী প্যালেস্টাইনি গাজ়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে এটাই সবচেয়ে বড় হামলা।
ইজ়রায়েল সূত্রের খবর, সকালে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র হানার পরে দক্ষিণ ইজ়রায়েলের বিভিন্ন শহরে ঢুকে পড়ে জঙ্গিরা। তেল আভিভের বাসিন্দা ব্রিটিশ লেখক ও সাংবাদিক গিডেন লেভি জানিয়েছেন, ‘‘প্রার্তভ্রমণে বেরিয়েছিলাম। দেখলাম, অদ্ভুত শুনশান রাস্তা। রেস্তরাঁ, কাফে, দোকান সব বন্ধ। ভাবলাম, উৎসবের ভোর বলে হয়তো শহরের ঘুম ভাঙতে দেরি হচ্ছে। পার্কে জগিং করতে করতেই প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রের আওয়াজ শুনতে পেলাম। বিকট সই শব্দ। ভয়ে ঘরে ফিরে এলাম। তারপর থেকে বিপদ সাইরেন বেজে উঠছে মাঝে মাঝেই।’’
হামাসের বিরুদ্ধে বেশ কিছু ইজ়রায়েলি সাধারণ মানুষকে পণবন্দি করে নিয়ে যাওয়ার খবরও মিলেছে। হামাসের তরফে প্রকাশ করা একটি ভিডিয়োয় এমনই তিন জন ইজ়রায়েলিকে দেখা গিয়েছে। হামাসের দাবি, পণবন্দি নয়, ওঁরা সাধারণ পোশাকে ইজ়রায়েলি সেনা। ওঁরা যুদ্ধবন্দি। সমাজমাধ্যমে আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন ভিডিয়ো। তার কোনওটায় দেখা গিয়েছে, এক মহিলার অর্ধনগ্ন দেহ নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করছে হামাস জঙ্গিরা। সেই দেহের উপরে থুতু ছেটাচ্ছে। চড়-থাপ্পড় মারছে। আর একটি ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, ইজ়রায়েলি সেনার পোশাকে বেশ কিছু মৃতদেহ পড়ে রয়েছে রাস্তায়। তবে এগুলোর কোনওটির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
হামাসের এই হামলাকে বর্বরোচিত বলে কঠোর নিন্দা করেছে আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলি। আজ ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন মিলিয়ে প্রায় চারশো মানুষ নিহত হওয়ার খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেন, রাশিয়া এই হামলার নিন্দা করেছে। তবে প্যালেস্টাইনি সেনার পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান। ইরানি সেনাবাহিনীর অন্যতম কমান্ডার ইয়াহিয়া রহিম সাফাভি সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘‘প্যালেস্টাইন আর জেরুসালেমের মুক্তির এই লড়াইয়ে আমরা প্যালেস্টাইনি যোদ্ধাদের পাশে রয়েছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy