ব্লুমিংটনে ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে অধ্যাপকদের। ছবি: সংগৃহীত।
ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি ব্লুমিংটনে গত ২৭ এপ্রিল যখন আন্দোলনরত পড়ুয়াদের শান্তিপূর্ণ অবস্থানে সশস্ত্র রায়ট পুলিশ নামানো হয়েছিল, তখন ক্যাম্পাসেই ছিলেন নৃতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সারা ফিলিপ্স। পড়ুয়াদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ফিলিপ্স তখনই ছোটেন পড়ুয়াদের জমায়েতের দিকে। কিন্তু সেখানে যেতেই তাঁকে মাটিতে ফেলে, হাত পিছমোড়া করে বেঁধে, গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে নিজের ক্যাম্পাসেই বেআইনি অনুপ্রবেশের অভিযোগ আনা হয়। অধ্যাপক ফিলিপ্সকে হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছে দু’জন পুলিশ— এই ছবি দেশ-বিদেশের অসংখ্য সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এবং সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল। ফিলিপ্স ছাড়া ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও তিন জন অধ্যাপককে সে দিন গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে বেআইনি অনুপ্রবেশ-সহ বিভিন্ন চার্জ আনা হয়। জামিন পেলেও তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রবেশের উপরে অন্তত এক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ব্রাইস গ্রিন নামের এক অধ্যাপকের পাঁচ বছরের জন্য ক্যাম্পাসে প্রবেশের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ঘটনার দু’দিন পরে এক প্রবন্ধে ফিলিপ্স সে দিনের ঘটনার বিবৃতি দিয়ে লেখেন, ‘‘বিক্ষোভ-জমায়েতের দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার বেশ কয়েক জন ছাত্রছাত্রী রয়েছে। তারা স্লোগান দিচ্ছে। তাদের হাতে পোস্টার-ব্যানার ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অন্য দিকে, তাদের দিকে যে রায়ট পুলিশ তেড়ে আসছিল, তাদের হাতে ছিল ব্যাটন। আর অনেকেরই কোমরে গোঁজা স্বয়ংক্রিয় পিস্তল। যা দেখে আর থেমে থাকতে পারিনি। ওদের দিকে ছুটে যাই।’’ সে দিন ফিলিপ্স ও তাঁর তিন সহকর্মীর সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছিল ১৯ জন পড়ুয়াকেও।
একই ভাবে আটলান্টার এমরি বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চেয়ারপার্সন নোয়েল ম্যাকাফি ছাত্রছাত্রীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দেখেছিলেন, তাতে অংশগ্রহণ করেননি। কিন্তু ক্যাম্পাস কর্তৃপক্ষ যখন সশস্ত্র পুলিশ ডেকে পড়ুয়াদের উপরে শারীরিক বলপ্রয়োগ করে গ্রেফতার করতে শুরু করে, অধ্যাপক ম্যাকাফি সেখানে পৌঁছে যান এবং গ্রেফতার হন। একই ভাবে নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডার্টমাউথ কলেজের অধ্যাপক আনেলিস ওরলেককে রীতিমতো বলপ্রয়োগ করে গ্রেফতার করা হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, অধ্যাপক ওরলেক দীর্ঘদিন ডার্টমাউথ কলেজের ‘জিউইশ স্টাডিজ়’ বা ইহুদি-বিষয়ক পাঠের অন্যতম বিশেষজ্ঞ। তিনি নিজেও ইহুদি। তাঁর কথায়, ‘‘'ইহুদি বিদ্বেষ দমনের নাম করে এই ভাবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম।’’ তাঁকেও আপাতত কলেজ ক্যাম্পাস থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
এই প্রতিবাদের প্রতিধ্বনি শোনা গিয়েছে অন্য অধ্যাপকদের গলাতেও। ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক প্রণব জানির মতে, ‘‘কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। কোনও শান্তিপূর্ণ আলোচনা করার পরিবর্তে তাঁরা সশস্ত্র পুলিশ ডেকে আন্দোলন ভাঙার চেষ্টা করছেন। শান্তিপূর্ণ ভাবে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের দিকে নজর রাখছে স্নাইপার পুলিশ, তাদের জেলে পাঠানো হচ্ছে।’’
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের যে দিন অবস্থান বিক্ষোভ তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, সে দিন শিক্ষার্থীদের ঘিরে পুলিশের সামনে মানবশৃঙ্খল তৈরি করে দাঁড়িয়ে ছিলেন শিক্ষকেরা। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া, লস অ্যাঞ্জেলেসে ইজ়রায়েল-সমর্থক এবং ইজ়রায়েল-বিরোধী শিক্ষার্থীরা যে দিন মুখোমুখি হয়েছিলেন, সে দিন দু’দলের মাঝখানে সার বেঁধে দাঁড়িয়েছিলেন শিক্ষকেরা, যাতে বড় কোনও গন্ডগোল না হয়। তা ছাড়া, বেশ কিছু ক্যাম্পাসে দেখা গিয়েছে যে, অধ্যাপকেরা ছাত্রছাত্রীদের তাঁবুর কাছে বসে ক্লাসও নিচ্ছেন।
শুধু পড়ুয়াদের সমর্থন নয়, পুলিশ এবং কলেজ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেও নেমেছেন অধ্যাপকেরা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছেন।
ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়ানোর এই কাজটা সহজ নয়। এতে অধ্যাপকদের চাকরি বা গবেষণার ফান্ডিং হারানো, ডাক্তারি বা নার্সিংয়ের অধ্যাপকদের লাইসেন্স হারানো-সহ আরও নানা ঝুঁকি আছে। তাও তাঁরা ঝুঁকি নিচ্ছেন। কারণ, অধ্যাপক ফিলিপ্সের কথায়, ‘‘এই পাগলামি থামাতেই হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy