Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Armenia-Azerbaijan war

আজারবাইজানকে পরমাণু-হুমকি আর্মেনিয়ার, পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ নয়াদিল্লির

রবিবার রাতে আজারবাইজান সেনা নাগোরনো-কারাবাখ সংলগ্ন আর্মেনিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দখল নিতে অভিযান চালায়।

আজারবাইজানে হামলা আর্মেনিয়ার গোলন্দাজ বাহিনীর। ছবি– এএফপি।

আজারবাইজানে হামলা আর্মেনিয়ার গোলন্দাজ বাহিনীর। ছবি– এএফপি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ২১:২৫
Share: Save:

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চলের দখলদারি নিয়ে আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়ার সীমান্ত সংঘর্ষ ক্রমশ মোড় নিচ্ছে পুরোদস্তুর যুদ্ধের দিকে। প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগেরও হুমকি দিয়েছে আর্মেনিয়া। মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানের হয়ে লড়তে ককেশাস পর্বতে পাক সেনাও হাজির হয়েছে বলে খবর মিলেছে। এই আবহে নাগোরনো-কারাবাখ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ভারত। বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব বলেছেন, ‘‘এমন ঘটনা আঞ্চলিক শান্তি ও নিরাপত্তার পক্ষে ক্ষতিকর। ভারত মনে করে, দ্বন্দ্বের মাধ্যমে সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। তাই সংযম বজায় রাখতে হবে। সংঘর্ষ থেকে বিরত হয়ে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।’’

রবিবার রাতে আজারবাইজান সেনা নাগোরনো-কারাবাখ সংলগ্ন আর্মেনিয়া-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলের দখল নিতে অভিযান চালায়। তাদের প্রতিরোধ করে সেখানকার সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনীয় বাসিন্দাদের মিলিশিয়া বাহিনী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’। এরপর সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে আর্মেনিয়া ফৌজও। গত ছ’দিনের লড়াইয়ে দু’পক্ষের বেশ কিছু ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার ও ড্রোন ধ্বংস হয়েছে। দু’পক্ষের কয়েকশো সেনার পাশাপাশি বহু অসামরিক নাগরিক হতাহত হয়েছেন। আর্মেনিয়া হুমকি দিয়েছে, প্রয়োজনে পরমাণু অস্ত্রবাহী দূরপাল্লার রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে।

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দুই প্রজাতন্ত্রের লড়াইয়ে ইতিমধ্যেই জড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের বেশ কিছু দেশ।মুসলিম রাষ্ট্র আজারবাইজানকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানিয়েছে তুরস্ক। অন্যদিকে, খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ আর্মেনিয়ার প্রতি ঝুঁকে রয়েছে আমেরিকা, ফ্রান্স-সহ পশ্চিমী দুনিয়া এবং রাশিয়া। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্দোয়ান এদিন আর্মেনিয়া-আজারবাইজান দ্বন্দ্বে সামরিক হস্তক্ষেপ না করার বার্তা দিয়েছেন ন্যাটো ও রাশিয়াকে। তুরস্কের পার্লামেন্টে এক বক্তৃতায় তিনি বলেছেন, ‘‘অবিলম্বে সংঘর্ষবিরতি কার্যকর করে নাগোরনো-কারাবাখ-সহ অধিকৃত এলাকাগুলি থেকে আর্মেনীয় সেনাকে সরতে হবে।’’

আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সঙ্ঘাতের ক্ষেত্র। গ্রাফিক- তিসায়া দাস।

৪,৪০০ বর্গকিলোমিটারের নাগোরনো-কারাবাখের অধিকার নিয়ে আর্মেনিয়া-আজাবাইজান মতবিরোধের সূচনা ১৯৮৮ সালে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর সদ্যস্বাধীন দুই দেশের মতবিরোধ গড়ায় সামরিক সংঘাতে। সোভিয়েত জমানায় আজারবাইজানের অন্তর্ভুক্ত এই অঞ্চলের প্রায় দেড় লক্ষ বাসিন্দার অধিকাংশই আর্মেনীয় খ্রিস্টান। ১৯৯৪ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর থেকে নাগোরনো-কারাবাখ এবং আশপাশের বেশ কিছু অঞ্চল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে আর্মেনিয়ার নিয়ন্ত্রণে। ২০১৬ সালেও ওই এলাকার দখল নিতে অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছিল আজারবাইজান ফৌজ।

আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহ্যাম আলিয়েভ সেপ্টেম্বরের গোড়ায় ওই এলাকা দখলমুক্ত করার ডাক দিয়েছিলেন। ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে নাগোরনো-কারাবাখের রাজধানী স্টেপনাকার্ট-সহ কয়েকটি শহরকে নিশানা করে অভিযান চালায় আজারবাইজানের স্থল ও বিমানবাহিনী। এরপর থেকেই লড়াই ক্রমশ তীব্র হতে শুরু করেছে। আর্মেনিয়ার মদতে পুষ্ট ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’ স্বীকার করেছে, নাগোরনো-কারাবাখের কিছু অংশ দখল করেছে আজারবাইজান ফৌজ। এক টেলিফোন কথোপকথনের সূত্র ধরে আর্মেনিয়ার সংবাদমাধ্যমের অভিযোগ, আজারবাইজানের হয়ে লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে পাক সেনা। অডিও ক্লিপিংসে আজারবাইজানের দুই ব্যক্তিকে পাক সেনার উপস্থিতি নিয়ে কথা বলতে শোনা যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, সত্তরের দশকে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধের সময় আরব জোটের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে ইজরায়েল বিরোধী যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল পাক ফৌজ।

আরও পড়ুন: চাপের মুখে হাথরস কাণ্ডে সাসপেন্ড ডিএম, এসপি এবং দুই পুলিশকর্মী

আরও পড়ুন: হাথরসের নির্যাতিতার জন্য লড়বেন নির্ভয়ার আইনজীবী, তাঁকেও আটকাল যোগীর পুলিশ

আর্মেনিয়া সেনার অভিযোগ, আজারবাইজানের পক্ষে তুরস্ক তাদের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পাঠিয়েছে। আর্মেনিয়ার অভিযোগ, তুরস্কের এফ-১৬ বিমান হামলায় তাদের বায়ুসেনার একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে। আজারবাইজান সিরিয়া থেকেও ভাড়াটে সেনা এনেছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে, আর্মেনিয়ার সমর্থনে রুশ সেনার আগমনের খবর মিলেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ অবিলম্বে সংঘর্ষবিরতির বার্তা দিয়েছেন দু’দেশকে। এদিন পুতিন রুশ সেনা আধিকারিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নাগোরনো-কারাবাখ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসও চলতি সপ্তাহে সংঘর্ষবিরতির আবেদন জানিয়েছেন আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের কাছে।

গত পাঁচ বছরে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করেছে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান। কিন্তু সাময়িক শান্তি ফিরলেও নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে কোনও সমাধান সূত্র মেলেনি। আন্তর্জাতিক সামরিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ারের ২০২০ সালের রিপোর্ট বলছে, সামরিক শক্তির দিক থেকে বিশ্বের ১৩৮টি দেশের মধ্যে আজারবাইজানের অবস্থান ৬৪। আর্মেনিয়া ১১১-এ। আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মোট সদস্য ১ লাখ ২৬ হাজার। সংরক্ষিত বাহিনীতে রয়েছে ৩ লক্ষ যোদ্ধা। অন্যদিকে, আর্মেনিয়ার সৈন্য সংখ্যা ৪৫ হাজার। সংরক্ষিত সেনা ২ লক্ষ। তবে সহযোগী ‘আর্টসাক ডিফেন্স আর্মি’-তে রয়েছে প্রায় ২৫ হাজার যোদ্ধা।

অন্য বিষয়গুলি:

Armenia Azerbaijan War India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy