Andy Murray to make a comeback in Wimbledon, says he’s playing not to win but to enjoy his love for Tennis dgtl
andy murray
ধাতব হিপ বোন, চোটে বিধ্বস্ত শরীর… উইম্বলডন দিয়ে টেনিসে ফিরতে চান প্রাক্তন এক নম্বর
কাঁদতে কাঁদতে টেনিস কোর্ট ছেড়েছিলেন টেনিসের এক সময়ের ১ নম্বর। একটি ধাতব হিপ বোন আর অনেকখানি মনের জোর নিয়ে সেই অ্যান্ডি আবার ফিরতে চাইছেন উইম্বলডনে।
নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৭ জুন ২০২১ ১৫:৪৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
ইতিবাদী। এ ভাবেই ব্যাখ্যা করা যায় ব্রিটেনের টেনিস তারকা অ্যান্ডি মারে-কে। শিখর থেকে খাদে পড়ে আবার নতুন করে চড়াই বেয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন তিনি।
০২২১
হেরে যাওয়া, সফল না হওয়া নিয়ে আপাতত ভাবছেন না। কারণ অ্যান্ডি মনে করেন ভালবাসার জিনিসের জন্য বার বার চেষ্টা করা যায়। হেরে গেলেও। এমনকি সাফল্যের সুযোগ কম থাকলেও।
০৩২১
লক্ষ্যে পৌঁছনো নয়, বরং লক্ষ্যে পৌঁছনোর সফরই এই চেষ্টার মূল বিষয় হওয়া উচিত, মনে করেন অ্যান্ডি। কারণ সেই সফরের পড়তে পড়তে জড়িয়ে আছে ভালবাসা। অ্যান্ডির ক্ষেত্রে খেলার প্রতি ভালবাসা। টেনিসের প্রতি ভালবাসা।
০৪২১
২০২১ সালের ফরাসি ওপেন জয়ী নোভাক জকোভিচের সমসাময়িক অ্যান্ডি। বয়স ৩৪। টেনিসে পুরুষদের সিঙ্গলসে এক সময় ১ নম্বরে পৌঁছেছিলেন তিনি। সেখান থেকে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের ১২০ নম্বরে নেমে আসেন।
০৫২১
খেলতেই পারছিলেন না। একের পর এক শারীরিক জটিলতায় ধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলেন অ্যান্ডি। তাঁর ভালবাসার টেনিস থেকে আর কোনও আনন্দ দিচ্ছিল না তাঁকে। তাই হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। ভেবেছিলেন, টেনিস জীবনে ইতি টানার সময় হয়তো এসে গিয়েছে।
০৬২১
কাঁদতে কাঁদতে টেনিস কোর্ট ছেড়েছিলেন টেনিসের এক সময়ের ১ নম্বর।
০৭২১
একটি ধাতব হিপ বোন আর অনেকখানি মনের জোর নিয়ে সেই অ্যান্ডি আবার ফিরতে চাইছেন উইম্বলডনে। যে উইম্বলডন এক সময়ে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল তাঁকে।
০৮২১
টেনিসের ‘বিগ থ্রি’ বলা হয় রজার ফেডেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জকোভিচকে। কিন্তু এক সময় শুধু মারের জন্য এই বিগ থ্রি-র পরিসর বেড়েছিল। টেনিসের সেই সময়কে বলা হত ‘বিগ ফোর এরা’। অ্যান্ডি সেই দলের চতুর্থ সদস্য। ২০০৮ থেকে প্রথম ৪-এ রয়েছেন। ২০১৭-র অক্টোবরে তাঁর টেনিস কেরিয়ার আচমকা থমকে যায় যখন, তখনও তিনি ৪ নম্বরেই। মাঝে অবশ্য ১ থেকে ১০-এ ওঠানামা করেছে তাঁর কেরিয়ারগ্রাফ।
০৯২১
কিন্তু ২০১৭ সালে অ্যান্ডি আর তাঁর খেলার মাঝে এসে পড়ে শারীরিক সমস্যা। হিপ বোন সংক্রান্ত জটিলতা আর তার থেকে প্রবল যন্ত্রণার কারণে টেনিস খেলা তো দূর, ঠিক করে হাঁটতেও পারছিলেন না অ্যান্ডি। ওই বছর অক্টোবরে উইম্বলডনের একটি ম্যাচ জেতার পরেই সমস্যাটা বাড়তে শুরু করে।
১০২১
তত দিনে ব্রিটেনকে ৭৯ বছরের প্রথম ডেভিস কাপ এনে দিয়েছেন অ্যান্ডি। তাঁকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করেছে ব্রিটেনের রাজ পরিবার। অ্যান্ডি হয়েছেন ‘স্যার অ্যান্ডি মারে’।
১১২১
শুধু ২০১৬ সালেই ৯টি খেতাব জিতেছিলেন অ্যান্ডি। একই বছরে একসঙ্গে একটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম, একটি মাস্টার্স ১০০০ খেতাব, এটিপি ফাইনাল এবং অলিম্পিকে সোনা জিতে রেকর্ডও করেছিলেন। তাঁর আগে কোনও পুরুষ টেনিস তারকা এক বছরে একসঙ্গে এত কৃতিত্ব অর্জন করতে পারেননি।
১২২১
২০১৬ সালেই টেনিসে পুরুষদের সিঙ্গলসে বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর জায়গাটি দখল করে নেন অ্যান্ডি। পিছনে ফেলে দেন ফেডেরার, নাদাল, জকোভিচকেও। বর্ষসেরা ক্রীড়া তারকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয় মারেকে। আর এই সবই তিনি করছিলেন আগামী দিনে প্রবল আকার ধারণ করতে চলা হাড়ের ব্যথাকে সঙ্গী করে।
১৩২১
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে নিতম্বে অস্ত্রোপচার করান অ্যান্ডি। একটি পেশীতন্তু সরিয়ে দেন চিকিৎসকরা। নষ্ট হয়ে যাওয়া একটি তরুণাস্থি মেরামত করেন। আরও কিছু সমস্যাও দূর করেন। কোর্টে ফেরার প্রস্তুতি শুরু করেন মারে। প্রশিক্ষক আর দু’জন ফিজিওকে নিয়ে একান্তবাসে চলে যান। চলতে থাকে ফিটনেসের প্রশিক্ষণ। কিন্তু তাতে কাজ হয় না।
১৪২১
অগস্ট ২০১৮-এ একটি ম্যাচে জেতার পর কাঁদতে কাঁদতে কোর্ট ছাড়েন অ্যান্ডি। ওয়াশিংটনের ওই ম্যাচেও মরিয়াস কোপিলকে হারিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শারীরিক ভাবে ভেঙে গিয়েছিলেন।
১৫২১
অ্যান্ডির কথায়, ‘‘মনে হয়েছিল এখানেই সব শেষ।’’ নিজের চেয়ারে বসে তোয়ালে দিয়ে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে দেখা গিয়েছিল তাঁকে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘টেনিসের প্রতি সমস্ত আবেগ শেষ হয়ে গিয়েছিল আমার। কোনও আনন্দই পাচ্ছিলাম না আর।’’
১৬২১
হাল ছেড়েও শেষ পর্যন্ত হাল ছাড়েননি অ্যান্ডি। প্রাক্তন টেনিস তারকা বব ব্রায়ানকে দেখে অনুপ্রাণিত হন তিনি। ববের কিছুটা একই ধরনের সমস্যা হয়েছিল। নিতম্বের হাড় প্রতিস্থাপন করিয়েছিলেন তিনি। খেলায় ফিরেও ছিলেন। ২০১৯-এর জানুয়ারিতে অ্যান্ডিও হিপ বোন প্রতিস্থাপন করান। এ বার সুফল আসে।
১৭২১
হাঁটতে তো পারছিলেনই। টেনিস খেলতেও শুরু করেন অ্যান্ডি। কমেছিল ব্যথাও। ধীরে ধীরে খেলায় ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন অ্যান্ডি। ফের শুরু করেন প্রশিক্ষণ।
১৮২১
অ্যান্ডির স্ত্রী কিম জানিয়েছেন, ‘‘নিজের শরীরটাকে নিজের বলে মনে করে না ও। মনে করে ওর শরীরে টেনিস কোর্টের অধিকার। ওঁর সমর্থকদের অধিকার। তাই সেরে ওঠার পর থেকেই নিজেকে তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছিলেন অ্যান্ডি। যাতে খেলার সুযোগ পেলেই মাঠে নেমে পড়তে পারেন।’’
১৯২১
শেষে উইম্বলডনেই ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মারে।
২০২১
তবে মারে বলেছেন, ‘‘জয়ের জন্য খেলছি না। সেরাদের সঙ্গে খেলতে পারব বলে খেলছি। নিজের পারফরম্যান্সের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য খেলছি। ছোট ম্যাচে সেই পরীক্ষা নেওয়া যাবে না। সেরাদের সঙ্গেই তুলনা করা দরকার। সেটাই করব উইম্বলডনে।’’
২১২১
তবে কি জেতার জন্য খেলবেন না? অ্যান্ডির জবাব, ‘‘অবশ্যই জেতার জন্য খেলব। তবে আমি মনে করি খেলার প্রতি ভালবাসাটাই এখানে বেশি জরুরি। টেনিস আমার ভালবাসা। তাকে ভালবেসে যদি সেরা না-ও হতে পারি আক্ষেপ নেই। ভালবাসার কাছে থাকতে পারব, এটাই অনেক।