রাফা সীমান্তে প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের জমায়েত। ছবি: রয়টার্স।
ইজ়রায়েলের সঙ্গে ঐকমত্য না হওয়ার কারণেই এখনও পর্যন্ত গাজ়ার ঘরছাড়াদের জন্য রাফা সীমান্ত খুলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সোমবার ইজ়রায়েল-গাজ়া সংঘর্ষের দশম দিনে স্পষ্ট ভাবে এ কথা জানিয়ে দিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাতাহ এল-সিসির সরকারের বিদেশমন্ত্রী শামে শোউক্রে। ইজ়রায়েল সরকারের ‘চরম সময়সীমা’ মেনে ইতিমধ্যেই উত্তর এবং মধ্য গাজ়ার পাঁচ লক্ষেরও বেশি প্যালেস্তিনীয় ঘর ছেড়েছেন। তাঁদের অর্ধেকই মিশরে আশ্রয় নেওয়ার জন্য জড়়ো হয়েছেন রাফা সীমান্তে।
আনুষ্ঠানিক ভাবে এখনও স্থলপথে ইজ়রায়েলি সেনার গাজ়া অভিযান শুরু না হলেও সোমবারও দফায় দফায় বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে গাজ়ায়। কয়েকটি এলাকা থেকে ইজ়রায়েল ফৌজের সীমান্ত লঙ্ঘেনরও খবর এসেছে। প্যালেস্তিনীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধা বিরুদ্ধে সর্বাত্মক অভিযান শুরুর আগে গাজ়ায় খাবার, জল, বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করেছে ইজ়রায়েল। ফলে সেখানে জনজীবন কার্যত স্তব্ধ। গাজ়ার হাসপাতালগুলিতে বিদ্যুতের অভাবে জীবনদায়ী পরিষেবা বন্ধ হওয়ায় বোমা-ক্ষেপণাস্ত্রে আহত বহু আম নাগরিকের বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ শনিবার এক বিবৃতিতে বলেছিল, ‘‘অবিলম্বে গাজ়ায় মানবিক সাহায্য পৌঁছনো প্রয়োজন।’’ কিন্তু সোমবার পর্যন্ত সেই ‘মানবিক সাহায্য’ পৌঁছয়নি গাজ়ায়।
সোমবার রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার দফতর ওসিএইচএ-র তরফে জানানো হয়েছে, ইজ়রায়েল-হামাস সংঘর্ষের দশম দিনে নিহতের সংখ্যা ৪,০০০ ছাড়িয়েছে। নিহতদের মধ্যে ২,৬০০ জনেরও বেশি সাধারণ প্যালেস্তিনীয় নাগরিক। ১,৪০০ কাছাকাছি ইজ়রায়েলের। ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার শুক্রবার ২৪ ঘণ্টার ‘চরম সময়সীমা’ ঘোষণার পরেই গাজ়ার অসামরিক প্যালেস্তিনীয় নাগরিকদের দক্ষিণ প্রান্তে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বিমান থেকে প্রচারপত্র ফেলতে শুরু করেছিল ইজ়রায়েলি বায়ুসেনা। তার পরেই হামলা এড়াতে বাড়ি ছাড়তে শুরু করেন উত্তর এবং মধ্য গাজ়ার বাসিন্দারা। ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী ওই ভূখণ্ডের দক্ষিণপ্রান্তের পাশাপাশি, বেশ কিছু প্যালেস্তিনীয় ইতিমধ্যেই নজরদারি এড়িয়ে জলপথে মিশরে আশ্রয় নিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, বৃহস্পতিবার রাতেই ইজ়রায়েলের সেনা রাষ্ট্রপুঞ্জকে জানিয়েছিল যে, তারা ২৩ লক্ষ প্যালেস্তিনীয় নাগরিকের আবাসভূমি গাজ়ার অন্তত ১০ লক্ষ মানুষকে সরে যাওয়ার কথা বলেছে। কিন্তু ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা অসম্ভব বলে প্রকাশ্যে জানায় রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু প্রাণের ভয়ে গাজ়ার আমজনতা শুক্রবার রাত থেকেই ‘পথে নামে’। আমেরিকার বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও জানিয়েছিলেন, মানবিকতার খাতিয়ে প্যালেস্তিনীয় শরণার্থীদের দক্ষিণ গাজ়া লাগায়ো রাফা সীমান্ত খুলে দেওয়ার জন্য মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেলের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। কিন্তু তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তেল আভিভের আপত্তির কথা জানিয়ে দিল কায়রো। এমনকি, নেতানিয়াহু সরকার শরণার্থীদের জন্য ‘সাময়িক যু্দ্ধবিরতির’ সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছে সোমবার।
গত ৭ অক্টোবর ইজ়রায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। তার ‘সমুচিত’ জবাব দিতে বদ্ধপরিকর নেতানিয়াহু সরকার। তারা জানিয়েছে, গাজ়ার সাধারণ নাগরিককে মানবঢাল করছে হামাস। তাঁদের বাড়িতে লুকিয়ে থাকছে। এই হামাসকে নিকেশ করার জন্য আগামী দিনে যা করা দরকার, সব করা হবে। হামাস বাহিনীকে ‘একঘরে’ করে সেনা অভিযান চালাতে তাই গাজ়াকে অসামরিক জনতা শূন্য করতে চাইছে ইজ়রায়েল। সে ক্ষেত্রে অসামরিক প্রাণহানি কম হবে বলে তেল আভিভের অনুমান। কিন্তু ইজ়রায়েলের আপত্তিতে রাফা সীমান্ত খোলা না-গেলে সাধারণ প্যালেস্তেনীয় শরণার্থীদের প্রাণহানির ঘটনা দ্রুত বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সামরিক বিশেষজ্ঞেরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy