প্রতীকী ছবি।
জেমস বন্ডের ছবিতে দেখা দিয়েছিল আগেই। এ বার আমেরিকার দোকানে দোকানে মিলবে ‘স্মার্ট গান’, এক জন বিশেষ ব্যবহারকারীর আঙুলের ছাপ ছাড়া যে পিস্তল থেকে গুলি চালানো যাবে না। পিস্তল নির্মাতা সংস্থাগুলির আশা, এই প্রযুক্তি আমেরিকায় বন্দুকের অপব্যবহার অনেকটাই কমাতে সফল হবে।
একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, আমেরিকার ৪০ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্কের বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। বছরে ২ কোটি ৩০ লক্ষ বন্দুক বিক্রি হয় এ দেশে। আর বছরে অন্তত ৪০ হাজার মানুষ বন্দুকের গুলিতে মারা যান, এবং এই সংখ্যাটা পুলিশ বা নিরাপত্তকর্মীদের ব্যবহার করা আগ্নেয়াস্ত্রে মৃত্যু না ধরেই! এই ৪০ হাজারের মধ্যে আবার অর্ধেক, অর্থাৎ ২০ হাজার আমেরিকাবাসী নিজেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। তা ছাড়া, বাড়িতে অভিভাবকের পিস্তল ব্যবহার করে স্কুল-কলেজে গুলি চালানো বা পুলিশের কাছ থেকে বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনা তো রয়েইছে। একাধিক স্মার্ট গান নির্মাণকারী সংস্থার দাবি, তাদের তৈরি পিস্তলে বাড়তি কিছু প্রযুক্তি বন্দুকের অপব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে দিতে সক্ষম হবে।
কী ধরনের প্রযুক্তি থাকছে এই সব স্মার্ট গানে? জানা গিয়েছে, কয়েক ধরনের পিস্তলে থাকবে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর’। অর্থাৎ আঙুলের ছাপ না মিললে সেই বন্দুক ব্যবহার করা যাবে না। ঠিক যেমন দেখা গিয়েছিল এক দশক আগের বন্ড-ছবি ‘স্কাইফল’-এ। এই ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার থাকার ফলে বাবা-মার বন্দুক ব্যবহার করতে পারবে না স্কুলপড়ুয়ারা। আবার কোনও সংঘর্ষের সময়ে পুলিশের বন্দুক ছিনিয়ে নিয়ে গুলি চালিয়েও দিতে পারবে না দুষ্কৃতী। একটি বন্দুকে কতগুলি আঙুলের ছাপ জোড়া যাবে, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি।
আর একটি সংস্থা ‘স্মার্টগান্জ়’-এ বন্দুকের সঙ্গে একটি বিশেষ ধরনের আঙটি দেওয়া হবে। সেই আঙটিতে লাগানো থাকবে মাইক্রোচিপ। আঙটি আঙুলে পরলেই বন্দুকটি ব্যবহার করা যাবে। সংস্থার কর্ণধার টম হল্যান্ড জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বেশ কিছু শহরের পুলিশ বিভাগ তাঁদের তৈরি স্মার্ট গান ব্যবহার করতে শুরু করে দিয়েছে। এপ্রিল-মে থেকে সাধারণ মানুষের জন্য বাজারে নিয়ে আসা হবে এই বিশেষ ধরনের পিস্তল।
বছরের মাঝামাঝি তিন ধরনের স্মার্ট গান বাজারে আনছে ‘লোডস্টার ওয়ার্কস’। আঙুলের ছাপ মেলানো পিস্তল তো থাকছেই। তা ছাড়া আরও দু’ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এক ধরনের বন্দুক ব্যবহার করতে গেলে বন্দুকের মালিকের স্মার্টফোনের অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে। আর এক ধরনের পিস্তলে থাকবে কিপ্যাড। সেখানে সিকিয়োরিটি কোড দেওয়ার পরেই ব্যবহার করা যবে সেই আগ্নেয়াস্ত্র। সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা জিঞ্জার চ্যান্ডলারের কথায়, ‘হাতে পিস্তল নেওয়া আর গুলি চালিয়ে দেওয়ার মাঝখানে একটা বাড়তি ধাপ জুড়ে দিযেছি আমরা। ফলে বন্দুকব্যবহারীকে একটু বাড়তি সময় ব্যয় করতে হবে। একটু ভাবনা-চিন্তাও করতে হবে। যে মানুষটি নিজেকে শেষ করে দেওয়ার জন্য বন্দুক তুলে নিয়েছে, সে আর এক বার ভাবার সুযোগ পাবে— আমি কি সত্যিই এটা করতে চাই!’’
তবে স্মার্ট গান বন্দুকের অপব্যবহার অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারবে, এতটা আশাবাদী নন অনেকেই। বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনের পক্ষে যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে সওয়াল করে আসছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম অ্যাডাম স্ক্যাগস। তাঁর কথায়, ‘‘সাধারণ মানুষ কত স্মার্ট গান ব্যবহার করবেন, বা এই ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আদৌ কোনও লাভ হবে কি না, আমাদের জানা নেই। আমেরিকায় কড়া আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োজন এবং তার দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy