তুষার-ঝড়ের দাপটে বিধ্বস্ত আমেরিকার নিউ ইয়র্ক এবং নিউ ইংল্যান্ড এলাকার মোট ছ’টি প্রদেশ। ছবি সংগৃহীত।
মেরু-ঝড়ে (আবহবিদদের ভাষায় আর্কটিক ব্লাস্ট) বিধ্বস্ত উত্তর-পূর্ব আমেরিকার বিস্তীর্ণ এলাকা। ফেব্রুয়ারির গোড়ায় হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় কাঁপছেন অন্তত দেড় কোটি মানুষ। পরিস্থিতি শোচনীয় আমেরিকার সীমান্ত লাগোয়া কানাডার বেশ কয়েকটি প্রদেশেও।
গত কাল থেকেই তুষার-ঝড়ের দাপটে বিধ্বস্ত আমেরিকার নিউ ইয়র্ক এবং নিউ ইংল্যান্ড এলাকার মোট ছ’টি প্রদেশ। সেগুলি হল ম্যাসাচুসেটস, কানেটিকাট, রোড আইল্যান্ড, নিউ হ্যাম্পশায়ার, ভেরমন্ট এবং মেন। কোথাও পারদ নেমে গিয়েছে মাইনাস ১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। গত কাল মিনেসোটার কাবেটোগামার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৩৯ ডিগ্রি। আজও আবহাওয়ার পরিস্থিতি প্রবল প্রতিকূল থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া ওই সব এলাকার লোকজনকে বাড়ি থেকে বাইরে বেরোতে বারণ করছে স্থানীয় প্রশাসন। আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, নিউ হ্যাম্পশায়ারের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট ওয়াশিংটন ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় কাল সন্ধেয় তাপমাত্রার পারদ নেমে গিয়েছিল মাইনাস ৭৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আমেরিকার পড়শি দেশ কানাডার ইউরেকায় গত কালসর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল মাইনাস ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহবিদেরাই জানাচ্ছেন, গত কয়েক দশকে এমন নজিরবিহীন ঠান্ডা দেখেনি আমেরিকা। তবে উত্তর মেরু থেকে সরাসরি বয়ে আসা এই তুষার ঝড়ের প্রকোপ হয়তো খুব বেশি দিন থাকবে না বলে আশ্বাসও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু যে ক’দিন এই ঝড়ের দাপট বজায় থাকবে, সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়বেন বলে জানিয়ে রাখা হয়েছে। একসঙ্গে একাধিক শীত পোশাক ছাড়া তাই বাসিন্দাদের বাইরে বেরোতে নিষেধ করা হয়েছে। হাতে গ্লাভস পরলেও তার নীচে মিটেনস পরার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। ‘ফ্রস্ট বাইট’ থেকে বাঁচতে গায়ে চাপাতে বলা হচ্ছে একাধিক ঢিলেঢালা পশমের কোট।
গত কালই নিউ ইংল্যান্ডের বৃহত্তম দুই শহর বস্টন এবং ওয়ারসেস্টারের স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। স্কুল বাসের জন্য দাঁড়াতে গেলেও শিশুরা হাইপোথার্মিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বস্টনের মেয়র মিশেল উ আগামী রবিবার পর্যন্ত শহরে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন। শহরের বিভিন্ন এলাকায় তৈরি করা হয়েছে হিট সেন্টার। যেখানে গিয়ে পথচলতি মানুষ নিজেদের গরম রাখতে পারবেন। মিশেল জানিয়েছেন, গত কয়েক প্রজন্ম এই নজিরবিহীন ঠান্ডার মুখোমুখি হয়নি। তাই তাঁর শহরের বাসিন্দাদের সুরক্ষিত রাখতে সব ধরনের প্রশাসনিক সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। নিউ হ্যাম্পশায়ারের গভর্নর ক্রিস সুনুনু-ও জানিয়েছেন, গত কয়েক দশকে এমন ঠান্ডা পড়েনি এই প্রদেশে। সতর্কতা হিসেবে প্রতিটি বাসিন্দাকে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পনেরো মিনিটের বেশি বাইরে থাকলেই ফ্রস্ট বাইটের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেও জানিয়েছেন ক্রিস।
তবে এই তুমুল ঠান্ডা উপেক্ষা করেও পেশার তাগিদে বাইরে বেরোতে হচ্ছে অনেককেই। বেলজিয়ামের বাসিন্দা হন মা বস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ট্রাক দাঁড় করিয়ে হট বেলজিয়ান ওয়াফল বিক্রি করছিলেন। বললেন ‘‘জানি খুব ঠান্ডা, কিন্তু কিছু করার নেই। আমাকে বেরোতে হতই। আমার এই ওয়াফল এই ঠান্ডাতেও সবাইকে গরম অনুভূতি দেবে।’’ উত্তর বস্টনে কফি শপ চালান কেটি পিনার্ড। তিনিও দোকান খোলা রেখেছেন। বললেন, তাঁর দোকানে ঢুকে অনেকেই হিটারের পাশে বসে কফিতে গলা ভিজিয়ে নিচ্ছেন। অনেকে আবার দোকানের ভিতরে বসে ল্যাপটপ খুলে অফিসের কাজ করার অনুমতিও চাইছেন।
গত বৃহস্পতিবারই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দশ জনের মৃত্যু হয়েছিল টেক্সাসে। পরের দিন থেকেই শুরু হয় মেরু-ঝড়ের তাণ্ডব। এরই মধ্যে আজ সন্ধে থেকে ক্যালিফর্নিয়ার সিয়েরা নেভাদা পার্বত্য এলাকায় প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঝড়ের পূর্বাভাস রয়েছে। যার জেরে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে মধ্য ও উত্তর ক্যালিফর্নিয়ায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy