প্রতীকী ছবি।
অফিসের কাজ করছিলেন ক্রিস্টিন লয়েড-জোনস। সে সময়ে ফোনটা আসে। বন্ধু অ্যানেটের মৃত্যু সংবাদ। করোনা-আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬২ বছরের বৃদ্ধা। পরের দিন সকালে প্রাতঃরাশ করতে-করতে ক্রিস্টিন খবর পেলেন আর এক বন্ধু লয়েড মারা গিয়েছেন। পরের দিন আবার শোকসংবাদ। ৫১ বছর বয়সি বন্ধু হেডেন হাসপাতালে ভর্তি। একটা দিন কেটেছিল। পাঁচ দিনে তিন জন কাছের মানুষকে হারান লন্ডনের বাসিন্দা ক্রিস্টিন।
এর পরে একটা মাস কেটে গেলেও বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারেননি ব্রিটেনের কৃষ্ণাঙ্গ সমাজকর্মী ক্রিস্টিন। টিকাকরণ কতটা জরুরি, কৃষ্ণাঙ্গ সমাজে প্রচার শুরু করেছেন প্রৌঢ়া। পরিজন-বন্ধুদের আর কাউকে বিদায় জানাতে চান না ক্রিস্টিন।
হোয়াটসঅ্যাপ তালিকায় যত জন আছেন, প্রত্যেককে মেসেজ করেছেন প্রৌঢ়া— ‘‘আমি কোভিড ভ্যাকসিন নেব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হয়তো জীবনের কঠিনতম সিদ্ধান্ত। কিন্তু সকলকে জানাচ্ছি। ৫৯ বছর বয়সি এক কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা হিসেবে এটা সবাইকে জানানো প্রয়োজন। এই প্রাণহানি রুখতে কিছু একটা করতেই হবে।’’
শুধু বন্ধুদের হারানোই নয়, পরিবারও ভেঙেছে ক্রিস্টিনের। গত বছর মার্চ মাসে ব্রিটেনে লকডাউন শুরু হওয়ার চার দিনের মাথায় করোনায় কাকা মারা যান। গত বছরই দুই যমজ বোন অ্যানেট ও পলেট মারা যান। দু’জনকে একসঙ্গে কবর দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এত পরিজন বিয়োগের পরেও দীর্ঘদিন টিকা নেওয়া নিয়ে সন্দিহান ছিলেন ক্রিস্টিন। শুধু তিনি-ই নন। এমন ধন্দে ব্রিটেনের কৃষ্ণাঙ্গ সমাজের অনেকেই। গত নভেম্বর মাসের একটি সমীক্ষা রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, ৭২ শতাংশ ব্রিটিশ কৃষ্ণাঙ্গ প্রতিষেধক নিতে চান না। ব্রিটেনবাসী পাকিস্তানি ও বাংলাদেশিদের মধ্যেও এই অনিচ্ছা রয়েছে। তবে কম, ৪২ শতাংশ চান না টিকা। অনাগ্রহীর সংখ্যাটা এখন কিছুটা কমেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে অনিচ্ছুকের সংখ্যা অনেকটাই বেশি। এ নিয়ে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রক ও নেতামন্ত্রীরাও উদ্বেগে। ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য পরিষেবা (এনএইচএস)-র জানুয়ারির মাসের সর্বশেষ পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, যত সংখ্যক প্রবীণ শ্বেতাঙ্গ প্রতিষেধক নিয়েছেন, তার অর্ধেক কৃষ্ণাঙ্গ প্রবীণ টিকা নিয়েছেন! অথচ বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষদেরই মৃত্যুহার বেশি (শ্বেতাঙ্গদের তিন গুণ)। মেয়েদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা দ্বিগুণ। ততসত্ত্বেও ভ্যাকসিনের প্রতি অনাগ্রহ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ‘‘অনেকগুলো দিক আছে। ঔপনিবেশকিতা ও দাসত্বের ইতিহাস এই সমাজের মধ্যে অবিশ্বাস বুনে দিয়েছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উপরে আস্থা নেই। তা ছাড়া, এই সমাজের বড় অংশ বিশ্বাস করে, এ ধরনের রোগ-বিপর্যয় ঘটেই থাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy