Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪
Bangladesh Crisis

ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভুগছে দিল্লি

কেন্দ্রীয় সরকারের এক প্রথম সারির মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আমাদের আশু চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশে নতুন যে সরকার আসবে, তার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ আগের মতোই চালিয়ে যাওয়া।’’

ধ্বংসের ইতিহাস: ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি। মঙ্গলবার ঢাকায়।

ধ্বংসের ইতিহাস: ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি। মঙ্গলবার ঢাকায়। ছবি: রয়টার্স।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৪৬
Share: Save:

আদানি গোষ্ঠীর বিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত অন্তত এক ডজন ভারতীয় সংস্থার বাংলাদেশে বড় মাপের লগ্নি রয়েছে। সবেমাত্র দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। জল ও স্থলপথে দু’দেশের মধ্যে একগুচ্ছ সংযোগকারী পরিকাঠামো প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন স্তরে কাজ চলছে। আচমকা শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের ফলে দু’দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে মোদী সরকারের অন্দরমহলে চিন্তা বেড়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের এক প্রথম সারির মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘আমাদের আশু চ্যালেঞ্জ, বাংলাদেশে নতুন যে সরকার আসবে, তার সঙ্গে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক যোগাযোগ আগের মতোই চালিয়ে যাওয়া।’’ এ বিষয়ে মোদী সরকারের শীর্ষ কর্তারা আশা করছেন, বাংলাদেশে নতুন সরকারও প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে অন্তত অর্থনৈতিক-বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করবে।

শেখ হাসিনার বিদায়ের পরেই নরেন্দ্র মোদীর ঘনি‌ষ্ঠ বলে পরিচিত গৌতম আদানির সংস্থার বাংলাদেশের বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং প্রতি মাসে ৯ কোটি ডলারের বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তির ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা শুরু হয়েছে। আদানি গোষ্ঠী ঝাড়খণ্ডের গোড্ডা তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ২৫ বছরের জন্য ১৪৯৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে। গত বছরের জুন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়েছে। গোড্ডায় উৎপাদিত তাপবিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশে যায়। আদানি গোষ্ঠী অবশ্য জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কোনও সমস্যা ছাড়াই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন পর্ষদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ চলছে।

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ভারত-বাংলাদেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এখন ১২৯০ কোটি ডলার। ভারত থেকে রফতানির পরিমাণে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে রয়েছে। গত অর্থ বছরে বাংলাদেশ থেকে ১১০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি হয়েছে। ভারত বাংলাদেশ থেকে মূলত ইস্পাতজাত পণ্য, বস্ত্র ও চামড়ার পণ্য আমদানি করে।

দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য আরও বাড়ানোর জন্য সামগ্রিক বাণিজ্য চুক্তি বা সেপা (কমপ্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট) নিয়ে কথাবার্তা শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা যে বাণিজ্যে কিছুটা হলেও ধাক্কা দেবে তাতে সন্দেহ নেই।

এখন চ্যালেঞ্জ হল, নতুন কোনও চুক্তির দিকে না গিয়ে যে সমস্ত আর্থিক লেনদেন চলছে, তা বজায় রাখা। ভারত থেকে কৃষি ও শিল্পজাত পণ্য রফতানি ধাক্কা খেলে বাংলাদেশও অসুবিধায় পড়বে। সে দিক থেকে আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশের নতুন সরকারও সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে চাইবে।রফতানিকারীদের সংগঠন ফিও সূত্রের বক্তব্য, বাংলাদেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন ধরে ব্যাঙ্কের লেনদেনে সমস্যা হয়েছে। পণ্য রফতানিকারীরাও চিন্তায় রয়েছেন। এখন সেনাবাহিনী অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দায়িত্ব নেওয়ায় পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, সে দিকে নজর রাখা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের কর্তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, গত আট বছরে ভারত বাংলাদেশকে রেল, সড়ক, বন্দর পরিকাঠামো তৈরির জন্য ৮০০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। গত বছরের শেষেই আখাউড়া-আগরতলা রেল যোগাযোগ, খুলনা-মঙ্গলা বন্দর রেলপথ চালু হয়েছে। বাণিজ্যিক লেনদেন চালু রাখতে এই ধরনের যাবতীয় রেল, সড়ক, জলপথ যোগাযোগ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Bangladesh Crisis Bangladesh Unrest Sheikh Hasina
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE