লিজ় ট্রাস, ঋষি সুনক এবং বরিস জনসন। ফাইল চিত্র।
দায়িত্ব নেওয়ার দেড় মাসের মাথায় ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে লিজ় ট্রাসের ইস্তফার পরে তাঁর সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে রয়েছে, লিজের পূর্বসূরি বরিস জনসনের নাম। রয়েছেন, লিজ়ের একদা প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনকও।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টের নাম থাকলেও সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করেছেন তিনি। দলের অন্দরে জনপ্রিয়তা থাকলেও আবাসনমন্ত্রী মাইকেল গোভ প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নামতে অনিচ্ছুক বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সব মিলিয়ে ক্ষমতাসীন কনজ়ারভেটিভ পার্টির অন্দরে আলোচনায় রয়েছে মোট ৮টি নাম।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নাম চূড়ান্ত করতে পারেন টোরি (কনজ়ারভেটিভ পার্টি) পার্লামেন্ট সদস্যেরা। গত ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে বরিস ইস্তফা দেওয়ার পরে পাঁচ দফায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অফ কমন্সের সদস্যদের ভোটাভুটিতে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী লিজ় এবং ঋষির নাম চূড়ান্ত হয়েছিল। প্রত্যেক রাউন্ডেই সব থেকে কম ভোট পাওয়া প্রার্থীকে সরে যেতে হয়েছিল। ষষ্ঠ তথা চূড়ান্ত দফায় প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার কনজ়ারভেটিভ দলের সদস্যের ভোটাভুটিতে ঋষিকে পরাস্ত করেন লিজ়। এ বার ভোটাভুটি হাউস অফ কমন্সের সদস্যদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকার সম্ভাবনা।
একদা কনজ়ারভেটিভ পার্টির অন্দরে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনসন ২০১৯ সালের নির্বাচনে দলকে জয় এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেই একের পর এক বিতর্কে তাঁর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। করোনাকালে বিধি ভেঙে পার্টি করার ঘটনা সামনে আসার পরে ইস্তফা দিতে কার্যত বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। যদিও কনজ়ারভেটিভ পার্টির সদস্য এবং এমপিদের মধ্যে তাঁর অনুগামীর সংখ্যা এখনও অনেক।
গত ৫ সেপ্টেম্বর ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষির ‘তীরে এসে তরী ডুবেছিল’। এমপিদের মধ্যে পাঁচ দফার ভোটাভুটিতে এগিয়ে থাকলেও চূড়ান্ত দফার পার্টি সদস্যেদের ভোটে হেরেছিলেন তিনি। মোট বৈধ ভোটের মধ্যে লিজ় পেয়েছিলেন ৮১ হাজার ৩২৬টি ভোট। ঋষি ৬০ হাজার ৩৯৯টি। এ বার ইনফোসিস কর্তা নারায়ণমূর্তির জামাই ‘কনজ়ারভেটিভ ক্যাম্পেন হেডকোয়াটার্স’ (সিসিএইচকিউ) ঘোষণা করে কি না তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে।
পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে ঋষি সুনকের পরেই উঠে আসছে কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেত্রী পেনি মর্ডন্টের নাম। গত বার চতুর্থ রাউন্ড পর্যন্ত দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন তিনি। কিন্তু পঞ্চম রাউন্ডে ছিটকে যান। পেনিকে পিছনে ফেলে ঋষির প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে উঠে আসেন লিজ়। পোর্টসমাউথ নর্থ কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত পেনি এখন ‘হাউস অফ কমন্স’-এর নেতা।
ঋষির পাশাপাশি ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুয়েল্লা ব্রেভারমানও রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে। লিজ় পদত্যাগ করার ২৪ ঘণ্টা আগেই তাঁর সঙ্গে দেখা করে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া কথা ঘোষণা করেছিলেন সুয়েলা। আলটপকা মন্তব্যের জন্য সম্প্রতি একাধিক বিতর্কের মুখে পড়েছিলেন তিনি। কিছু দিন আগে তিনি বলেন, ‘‘ভিসার মেয়াদের চেয়ে বেশি সময় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ভারতীয়দের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি।’’ এর ফলে নয়াদিল্লির নিশানা হতে হয় লন্ডনকে। এর পর হাউস অব কমন্সে তিনি ব্রিটেনে সাম্প্রতিক ধর্মঘটের জন্য বিরোধী লেবার পার্টিকে দায়ী করে উপহাসের মুখে পড়েন। গত বার প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে নেমে দ্বিতীয় রাউন্ডেই হেরে গিয়েছিলেন তিনি।
কনজ়ারভেটিভ পার্টির কৃষ্ণাঙ্গ নেত্রী কেমি বডেনচ এখন রয়েছেন ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সচিব পদে। এসেক্সের স্যাফ্রন ওয়ালডেন কেন্দ্র থেকে ২০১৭-য় প্রথম ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে প্রথম মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। ঋষির মতোই ‘বরিস বিরোধী’ হিসাবে পরিচিত কেমি গত বারও প্রধানমন্ত্রিত্বের দৌড়ে ছিলেন। কিন্তু চতুর্থ দফায় সবচেয়ে কম ভোট পেয়ে ছিটকে গিয়েছিলেন।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারির খবর প্রকাশ্যে আসার পরে গত ৫ জুলাই রবিসের নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ঋষির সঙ্গেই মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন সাজিদ জাভিদ। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই নেতা সে সময় ছিলে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী চেয়ারে। তার আগে অর্থমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদও সামলেছেন তিনি। ‘দক্ষ প্রশাসক’ হিসাবে খ্যাতি থাকলেও ব্রমস্গ্রোভ থেকে পার্লামেন্টে নির্বাচিত এই পঞ্জাবি নেতার দলের অন্দরে তেমন জনপ্রিয় নন। ফলে দৌড়ে নাম থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশাধিকার পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকের মধ্যেই।
সুয়েলার ইস্তফার পরে গত বুধাবর ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে গ্রান্ট শ্যাপসকে নিযুক্ত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী লিজ়। করোনাকালে ব্রিটেনের পরিবহণ মন্ত্রী ছিলেন তিনি। সে সময় ব্রিটেনের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার কোভিড প্রতিষেধক কোভিশিল্ড নিয়ে বিতর্কিত রিপোর্ট দিয়েছিল তাঁর মন্ত্রক। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট যে কোভিশিল্ড তৈরি করেছে, তা নিলে ব্রিটিশ নাগরিকদের ইউরোপ পর্যটনে অনুমতি দেওয়া হবে না। পরে বিতর্কের মুখে পিছু হটেন তিনি। অতীতে মাইকেল গ্রিন ছদ্মনামে অনলাইনে সম্পত্তি কেনাবেচারও অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে কট্টর মস্কো-বিরোধী অবস্থানের জন্য আলোচনার কেন্দ্রে এসেছেন ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস। ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার ইতিমধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর্থিক অপরাধ এবং সন্ত্রাস বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ওয়ালেস। এর আগে অশান্ত নর্দার্ন আয়ার্ল্যান্ড বিষয়ক দফতরের দায়িত্বও সামলেছেন ৫২ বছরের এই নেতা। গত কয়েক মাসে দ্রুত জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি তাঁকে বাড়তি সুবিধা দিতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy