Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Afghanistan Crisis

Afghanistan Crisis: মাথা কি পাকিস্তানের

আমেরিকান সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, সে দেশের ১৩ জন সেনা এবং নব্বইয়ের বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন ওই হামলায়।

কাবুল বিমানবন্দরে আমেরিকান সেনার পাহারা। শুক্রবার।

কাবুল বিমানবন্দরে আমেরিকান সেনার পাহারা। শুক্রবার। ছবি: রয়টার্স

নিজস্ব প্রতিবেদন, শ্রাবণী বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০২১ ০৫:৫৪
Share: Save:

একটা বিপর্যয়ের শেষ, না এই সবে শুরু! উত্তর খুঁজছে আফগানিস্তান। খুঁজছে আমেরিকাও।

অসমর্থিত সূত্র বলছে, কাবুলে গত কালের বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা ১৭০ ছুঁয়েছে। যদিও আমেরিকান সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, সে দেশের ১৩ জন সেনা এবং নব্বইয়ের বেশি আফগান নাগরিক নিহত হয়েছেন ওই হামলায়। উদ্ধারকাজ অব্যাহত রেখেও ভবিষ্যতে আরও হামলার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না আমেরিকা। জাতির উদ্দেশে বক্তৃতায় আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ধরা গলায় বলেছেন, ‘‘যারা এই ঘটনা ঘটাল, তাদের ক্ষমা করব না।’’ আমেরিকান সেনার সেন্ট্রাল কম্যান্ডের প্রধান, জেনারেল ফ্রাঙ্ক ম্যাকেঞ্জি বলেছেন, ‘‘জঙ্গিদের খুঁজে বার করবেই আমেরিকা। আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে, আগামী কয়েক দিনে আরও হামলা হতে পারে। ওই হামলা রুখতে যা যা করা সম্ভব, আমরা করছি।’’

আজ পেন্টাগনে আমেরিকান সেনার মেজর জেনারেল উইলিয়াম টেলর বলেন, ‘‘আমরা মনে করি না গত কাল কাবুলের ব্যারন হোটেলের কাছে কোনও দ্বিতীয় বিস্ফোরণ হয়েছিল। আত্মঘাতী বোমারু ছিল এক জনই।’’ জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট খোরাসান প্রভিন্স (আইএস-কে) শুধু যে গত কালের হামলার দায় নিয়েছে তা-ই নয়, এক আত্মঘাতী জঙ্গির নাম এবং ছবিও প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, আব্দুল রহমান আল-লোগারি নামে ওই জঙ্গিই গত কাল বিমানবন্দরের ভিতরে-বাইরে তালিবান যোদ্ধা এবং আমেরিকান বাহিনীর পাহারাকে ফাঁকি দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। আমেরিকান সেনার দোভাষী এবং সাহায্যকারী ‘গুপ্তচরেরা’ তাদের হামলার লক্ষ্য বলেও জানিয়ে দিয়েছে আইএস-কে।

ম্যাকেঞ্জি বলেছিলেন, বিস্ফোরণে তালিবানের হাত থাকার কোনও প্রমাণ আমেরিকা পায়নি। বস্তুত, আইএস-কে তালিবানের শত্রু বলেই পরিচিত। তবে ইসলামিক স্টেটের এই শাখা সংগঠনটির সূত্রে গত কালের বিস্ফোরণে জড়িয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের নাম। আইএস-কের প্রধান আসলাম ওরফে আবদুল্লা ফারুকিকে গত বছর কাবুলের এক গুরুদ্বারে বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে গ্রেফতার করেছিল আফগান গোয়েন্দাবাহিনী। ওই বিস্ফোরণে এক ভারতীয়-সহ ২৭ জন মারা যান। জিজ্ঞাসাবাদে ফারুকি দাবি করেছিল, গুরুদ্বারের বিস্ফোরণে সে জড়িত এবং তাতে পাকিস্তানেরও হাত রয়েছে। ফারুকির সঙ্গেই সে বার গ্রেফতার হয়েছিল আরও চার পাকিস্তানি। ফারুকি নিজেও পাকিস্তানি। আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের ওরাকজ়াই জেলায় তার বাড়ি। ফারুকি প্রথমে ছিল লস্কর-ই-তইবায়। পরে যোগ দেয় তেহরিক-ই-তালিবানে। ২০১৯ সালের এপ্রিলে সে আইএস-কের নেতা হয়। গুরুদ্বারে বিস্ফোরণের ঘটনায় বছর খানেক জেলে ছিল ফারুকি। শোনা যায়, দোহায় আলোচনার সূত্রে বেশ কয়েক জন কুখ্যাত জঙ্গির সঙ্গে ফারুকিও মুক্তি পায়। তার পরে আবার সক্রিয় হয় সে। আইএস-কে গত কাল বিস্ফোরণের দায় নেওয়ার পরে তার মস্তিষ্ক হিসেবে ফারুকির নাম জোরালো হচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে দাবি, গত কাল কাবুলে তুর্কমেনিস্তানের দূতাবাসের কাছে আরও একটি বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। কিন্তু তার আগেই দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। শোনা যাচ্ছে, এদের মধ্যে এক জন হক্কানি নেটওয়ার্কের ফিদাইন জঙ্গি। সূত্রের বক্তব্য, তালিবান হেফাজতে থাকা এই দু’জনকেও জেরা করে জানা গিয়েছে, তারা পাকিস্তানি। তবে কাবুলের পতনের পরে হক্কানি নেটওয়ার্কেরই নেতা খলিল হক্কানিকে তালিবানের হয়ে বিভিন্ন বৈঠকে দেখা গিয়েছে। ফলে গত কালের বিস্ফোরণে হক্কানি নেটওয়ার্কের জড়িত থাকা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে। প্রাক্তন আফগান ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লা সালে অবশ্য তাঁর গোপন ডেরা থেকে বলেছেন, ‘‘আইএস-কের শিকড় রয়েছে তালিবান এবং হক্কানি নেটওয়ার্কের মধ্যেই। তালিবরা সেই যোগের কথা অস্বীকার করছে। এ যেন অনেকটা (জঙ্গি সংগঠন) কোয়েটা শুরার সঙ্গে যোগাযোগের কথা পাকিস্তানের অস্বীকার করার মতো।’’

ইতিমধ্যে দোহায় তালিবানের রাজনৈতিক দফতর জানিয়েছে, সমস্ত জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে আফগানিস্তানে তদারকি সরকার গড়ার কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারে সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বের উপরে ভারতও জোর দিচ্ছিল। তালিবান জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, বিচার, অর্থ, তথ্য-সম্প্রচারের পাশাপাশি কাবুল বিষয়ক বিশেষ দফতরও রাখবে তারা। সরকারের নেতৃত্ব দেবেন ‘আমির-উল-মোমিনিন’। তালিবানের তৃতীয় সর্বোচ্চ নেতা হায়বাতুল্লা আখুন্দজ়াদা এই বিশেষ উপাধির অধিকারী। তবে তালিবানের রাজনৈতিক শীর্ষ নেতা আব্দুল গনি বরাদর তদারকি সরকারের প্রধান হলে আখুন্দজ়াদাকে ইরানের কায়দায় দেশের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার মর্যাদা দেওয়া হতে পারে।

কাবুল বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে আজ একটু বেশি ঘন ঘন উড়েছে বিমান। ব্রিটেন জানিয়েছে, কাবুলে তাদের উদ্ধারকাজ আপাতত শেষ। ব্রিটিশ বাহিনীকে যে সমস্ত আফগান সহায়তা করেছিলেন, তাঁদের অনেককে নিয়ে আসতে না পারায় দুঃখপ্রকাশ করেও সমালোচনা এড়াতে পারেনি বরিস জনসনের সরকার। আমেরিকাও পূর্বঘোষিত সময়সীমার নড়চড় করেনি। রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্বাস্তু বিষয়ক হাই কমিশনের আশঙ্কা, আফগান শরণার্থীর সংখ্যা পাঁচ লক্ষে পৌঁছবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Afghanistan Crisis Kabul Blast
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE