Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

আল বাগদাদির খোঁজ দিয়েছিল তার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী 

হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, স্থানীয় সময়ে পাঁচটা নাগাদ আটটি চিনুক এবং ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে ডেল্টা ফোর্স-সহ এলিট বাহিনী এক ঘণ্টা দশ মিনিট ধরে খুব বিপজ্জনক এলাকার মধ্যে দিয়ে উড়েছে।

বারিশা গ্রামে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স

বারিশা গ্রামে গাড়ির ধ্বংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স

সংবাদ সংস্থা
ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪০
Share: Save:

দু’দিন আগে অর্থাৎ শনিবারের সন্ধ্যায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তাঁর শীর্ষ উপদেষ্টাদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের ‘সিচুয়েশন রুমে’ বসছেন, ঠিক সে সময়ে ৬ হাজারেরও বেশি মাইল দূরে এলিট মার্কিন বাহিনী ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অভিযানে নামছে।

হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, স্থানীয় সময়ে পাঁচটা নাগাদ আটটি চিনুক এবং ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারে ডেল্টা ফোর্স-সহ এলিট বাহিনী এক ঘণ্টা দশ মিনিট ধরে খুব বিপজ্জনক এলাকার মধ্যে দিয়ে উড়েছে। উত্তর ইরাক থেকে উড়ে তারা ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশের বারিশার দিকে। ওই হেলিকপ্টারগুলি স্থানীয় গোলাগুলির মুখে পড়ে, এ তথ্য দিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। তবে সে বাধা কাটিয়ে ফিরতে পেরেছে বাহিনী।

রবিবার ভোরের অন্ধকারে কয়েকশো মাইল ফের পাড়ি দিয়েছে তারা। তাদের লক্ষ্য, আবু বকর আল-বাগদাদি, ইসলামিক স্টেটের (আইএস) প্রতিষ্ঠাতা এবং শীর্ষ জঙ্গি নেতা। মার্কিন বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে যিনি নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছেন। ট্রাম্পের মুখে গত কাল ওই অভিযানের অনেকটাই উঠে এসেছে। অন্য মার্কিন অফিসারেরা অবশ্য বাগদাদির শেষ মুহূর্ত সম্পর্কে খুব একটা মুখ খোলেননি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে যতটা জানা গিয়েছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে, শনিবার মধ্যরাতের কিছু পরে সেনা কপ্টারের শব্দ শোনা যায়। তার পরে টানা গুলিবর্ষণের শব্দ। তবে সাধারণ দিনে যেমন গোলাগুলি চলে, তেমন শব্দ নয়, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি! তার পরে যা হয়েছে, তা ট্রাম্পের ভাষায়, ‘‘সিনেমার মতো।’’

অভিযানের নাম, কোথা থেকে বাগদাদির খবর মিলল, বাগদাদি ধ্বংসের পরে কী হতে চলেছে তাঁর সাম্রাজ্যের— এমন কিছু টুকরো টুকরো তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। জানানো হয়েছে, বারিশার ওই চত্বরটিতে ঢোকার পরে মূল প্রবেশপথে বিস্ফোরক থাকতে পারে এই আশঙ্কায় মার্কিন বাহিনী একটা দেওয়াল ভেঙে ঢুকে পড়ে। সেখানে ঢোকার পরেই বেশ কয়েক জন আইএস জঙ্গিকে সামনে পেয়ে তাদের মারে মার্কিন বাহিনী, এ তথ্য জানিয়েছেন ট্রাম্প নিজেই। দু’জন জঙ্গিকে জীবিত ধরা হয়, আর ১১টি শিশুকে হেফাজতে নেওয়া হয়। এই সময়ে অভিযানে দলের একটি কুকুর আহত হয়েছে বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন। এর পরের নিশানা বাগদাদির দুই স্ত্রী। তাঁদের আত্মঘাতী জ্যাকেট থেকে অবশ্য বিস্ফোরণ ঘটেনি। শেষমেশ ফাঁদে পড়েন বাগদাদি। তার পরের গল্পটা ট্রাম্প কাল সবিস্তারে বলেই দিয়েছেন।

পরবর্তী আইএস প্রধান হচ্ছে আবদুল্লা কারদাশ।

ইরাকের গোয়েন্দা বিভাগের দুই আধিকারিকের দাবি, বাগদাদিকে ধরিয়ে দিতে সাহায্য করেছে তাঁর ঘনিষ্ঠ সঙ্গী, ইসমাইল আল-এথাউইয়ি। ওই আধিকারিকদের বক্তব্য, এথাউইয়ি কিছু দিন আগে তুরস্কে গ্রেফতার হয়েছিল। তার পর তাকে ইরাকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সেখানেই সে বাগদাদি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়। বাগদাদির গতিবিধি এবং গোপন ডেরার খবর অনেকটাই স্পষ্ট হয় এথাউইয়ির কাছ থেকে। সে জানিয়েছিল, ধরা পড়া এড়াতে আনাজ-ভর্তি মিনিবাসে চড়ে রণকৌশল নিয়ে আলোচনা চালাতেন বাগদাদি।

এ সপ্তাহের গোড়ায় ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সকে বাগদাদির সম্ভাব্য আস্তানার খবর দেওয়া হয়। বারিশার ওই চত্বরে যে বাগদাদি লুকিয়ে, তা নিশ্চিত জানার পরেই কমান্ডারদের সবুজসঙ্কেত পাঠান ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের কথায়, ‘‘আমরা জানতে পেরেছিলাম, উনি কোন দিকে এগোচ্ছেন। মাঝে শুনলাম, উনি অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। কিন্তু উনি যাননি। তিন-চার বার তাই চেষ্টা করেও এগোনো হয়নি। কারণ বাগদাদি ঘনঘন সিদ্ধান্ত বদলে ফেলছিলেন। শেষমেশ হাতে পাওয়া গেল তাঁকে।’’ ইরাকি এবং কুর্দিশ সেনার থেকেও তথ্য পেয়েছে সিআইএ। সেই সূত্রে এক সিরীয় ইঞ্জিনিয়ারের খোঁজ পাওয়া যায়। যিনি বারিশা এলাকা সংলগ্ন গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলতেন। তিনি জানিয়েছিলেন, হুরাস আল-দিন নামে আর একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর কমান্ডার আবু মহম্মদ সালামার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন বাগদাদি। অভিযানের পরে ওই কমান্ডারের কী হয়েছে, তা এখনও অস্পষ্ট।

হোয়াইট হাউসে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন জানিয়েছেন, এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘কেলা ম্যুলার’। আইএসের হাতে বন্দি হয়েছিলেন ২৬ বছরের মানবাধিকার কর্মী কেলা। ২০১৩ সালে তুরস্ক সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ার হাসপাতালে কাজ করতে যান তিনি। ২০১৫-য় তাঁর মৃত্যুর খবর আসে। দেহ পাওয়া যায়নি। কেলার মর্মান্তিক পরিণতির কথা মনে রেখেই অভিযানে তাঁর নাম রাখায় আপ্লুত তাঁর বাবা-মাও।

সংবাদমাধ্যম সূত্রেই প্রকাশিত, বাগদাদির পরে আইএসের প্রধান হয়েছে ইরাকের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হুসেনের বাহিনীর অফিসার আবদুল্লা কারদাশ। ইরাকের জেলে বাগদাদির সঙ্গে তার খাতির জমে। সেটা ২০০৩-০৪ সাল। আইএসে যোগ দেওয়ার আগে আল কায়দার ধর্মীয় প্রচারক ছিল কারদাশ। নিষ্ঠুর এই জঙ্গি নেতা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দলে। আইএসের প্রচার সংস্থা আমাক-এর বিবৃতি অনুযায়ী, বাগদাদি এ বছরের অগস্টেই কারদাশকে গোষ্ঠীর দৈনন্দিন কার্যকলাপ দেখভালের ভার দিয়েছিলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

USA Donald Trump Abu Bakr al-Baghdadi ISIS
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy