দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা, সেই খবর পাওয়ার পরে উচ্ছ্বাস আন্দোলনকারীদের। সোমবার ঢাকার রাস্তায়। ছবি: পিটিআই।
রবিবার সন্ধে ছ’টা থেকে দেশে কার্ফু জারি করে দেওয়া হল। আমরা আন্দাজ করেছিলাম, ‘লং মার্চ’ ঘিরে যাতে হিংসা না ছড়ায়, তার জন্য হয়তো সরকার আগাম ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু কোথাও একটা উদ্বেগ কাজ করছিল।
১৫ জুলাইয়ের পর থেকে আর অফিস যেতে পারি না। বাজার-দোকানে বেরোতে ভয় লাগে। বাচ্চার স্কুল বন্ধ। কার্ফু শুরু হতেই তাই ঝড়ের পূর্বাভাস লাগছিল। সারা রাত দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। ভোর ৭টা নাগাদ কিছু ক্ষণের জন্য ঘুমোই। ভয় আরও বাড়ে ইন্টারনেট বন্ধ হতে। সোমবার সাড়ে ১১টা নাগাদ মোবাইল ফোনের ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে যখনই এমন হয়েছে, পরে জানা গিয়েছে গোলমাল, সংঘর্ষ, হত্যার খবর। মৃত্যুর যে সংখ্যা সংবাদমাধ্যম মারফত সামনে এসেছে, তার থেকেও বেশি মানুষের প্রাণ গিয়েছে।
ফোনে নেট এল দু’টো নাগাদ। ততক্ষণে রাস্তায় জনস্রোত। উত্তরা, মতিঝিল, শাহবাগ, মিরপুর, চারদিক থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ রাস্তায় মিছিল করে যাচ্ছে। খবর পেলাম শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। দেশ ছেড়ে চলেও গিয়েছেন দুপুর দেড়টা নাগাদ। খবরটা শুনে মনে হল, তবে কি অশান্তি শেষ হল! রাস্তায় তখন বিজয় উৎসবের আবেশ।
কিন্তু এই ছবিটা বদলাতেও সময় লাগল না। কিছু ক্ষণ পর থেকেই শুনছি চারদিকে গোলমাল। থানায় কেউ আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। দোকানপাট ভাঙচুর, লুটতরাজ চলছে। পুলিশের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, খুব প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় যাতে কেউ না বেরোন। সন্দেহ হলেই গুলি চালানোর নির্দেশ রয়েছে। মুহূর্তের জন্য যে স্বস্তি পেয়েছিলাম, সব শেষ। এখন তো শেখ হাসিনাও চলে গিয়েছেন। দোষ দেওয়ার জন্যেও কেউ নেই। কারা এই ভাঙচুর করছেন, খুনোখুনি করছে! কেন করছে!
বহু বছর ধরে দেশে একই সরকার। ভোট ঠিক মতো হয় না। দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। ৫৪ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিরুদ্ধে পড়ুয়াদের যে আন্দোলন, তা স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন, তাদের আন্দোলনকে কি অন্য কেউ কাজে লাগাচ্ছে। এমনও কানে এসেছে, মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ তো কী, পকেটে পকেটে রাউটার নিয়ে ঘুরছেন লোকজন। কোটি কোটি টাকা ঢালা হচ্ছে হিংসা চালিয়ে যেতে।
পড়ুয়ারা জানিয়ে দিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগকে চায় না, বিএনপি-জামাতও চায় না। তারা নতুন সরকার চায়, যে সরকার দেশবাসীর ভাল করবে। আমিও এক জন সাধারণ মানুষ হিসেবে শান্তি চাই। চাই পুরনো স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। গত কালও শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এই প্রাণহানি বন্ধ হোক।
কর্পোরেট সংস্থায় চাকরি করি। গত মাসে হাতেগোনা কিছু দিন অফিস যেতে পেরেছি। চাকরিটা তো করতে হবে। বাচ্চার স্কুল বন্ধ। এটিএমে টাকা নেই। কার্ড ছাড়া জিনিসপত্র কেনার উপায় নেই। দোকান-বাজারে বিক্রি নেই বললেই চলে। এক দোকানি আমাকে বললেন, কর্মীদের বেতন দেবেন কী ভাবে, বুঝতে পারছেন না। দিন-আনি-দিন-খাই লোকজনের আরও করুণ অবস্থা।
গত ২০ বছরে বাংলাদেশ অনেক বদলেছে। মহিলা বলে কর্মস্থলে সে ভাবে আমাকে প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয় না। তবে এটাও সত্যি পুরুষশাসিত সমাজে ছেলেরা মেয়েদের বাঁধার সুযোগ পেলে ছাড়বে না। এই বিশৃঙ্খল, সরকারহীন পরিস্থিতিতে দেশকে যদি মৌলবাদ, কট্টরপন্থা গ্রাস করে, দেশের চরম ক্ষতি হবে।
এই দুশ্চিন্তা, এই অনিশ্চয়তা আর নেওয়া যাচ্ছে না। শান্তি চাই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy